আদর্শবান রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী

সংগ্রাম দত্ত: রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী মৌলভীবাজার জেলার রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।ব্রিটিশ ভারতে আসাম প্রদেশের তৎকালীন দক্ষিণ শ্রীহট্ট মহকুমা (বর্তমান বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলা) শ্রীমঙ্গল থানার নোয়াগাঁও গ্রামে ১৯৪০ সালের ১২ এপ্রিল তিনি জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা যতীন্দ্র মোহন দত্ত চৌধুরী ছিলেন একজন জমিদার এবং মাতা বিন্দুবাসিনী দত্ত চৌধুরী।তাঁর পিতার পৈত্রিক নিবাস ছিল তৎকালীন শ্রীহট্ট (বর্তমানে সিলেট) জেলার ঢাকাদক্ষিনের দত্তরাইল গ্রামে।তিনি শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও পরে মৌলভীবাজার কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বিকম পাস করেন।পরে বিএড ও পাস করেন। কিছুদিন শ্রীমঙ্গলের ভৈরববাজর হাইস্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেন।বাল্যকাল থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তিনি অনুরাগী ছিলেন। পাক আমলে তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।

তিনি ছিলেন অত্র এলাকার পঞ্চাশের দশকের প্রখ্যাত ছাত্রনেতা।১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন ও শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধী যে ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে তার সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা ছিলেন।তিনি ছাত্রজীবনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন ।পরে ১৯৫৭ সালে মজলুম জননেতা মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠিত হলে তিনি তাতে যোগদান করে বাম রাজনীতিকে এতদাঞ্চলে এগিয়ে নিয়ে যান। এ জন্যে
তিনি অত্র এলাকায় বাম রাজনীতির পুরধা হিসেবে পরিচিতি।১৯৬৬ সালে ন্যাপ দুভাগে বিভক্ত হয়। একটি ন্যাপ( ভাসানী) ও অপরটি ন্যাপ ( মোজাফফর)।তিনি মস্কোপন্হী বলে ন্যাপ (মোজাফফর) এর নেতৃত্বে দলকে এতদাঞ্চলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান।পাকিস্তান আমলে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির গোপন সেলের তিন সদস্যদের আহবায়ক ছিলেন। অপর সদস্যরা হলেন ন্যাপনেতা মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া ও সৈয়দ মূয়ীজুর রহমান।

তিনি ছিলেন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ১১-দফা কর্মসূচির অন্যতম , অএ অন্ঞলে উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক।১৯৬৩ সালে বালিশিরা পাহাড় আন্দোলনের অন্যতম নেতা।১৯৬৬ সালে ৬ দফা ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে পাক সরকার বিরুধী আন্দোলেনে ও ছিল তাঁর বিশাল অবদান।১৯৭০ সালের ৬ এপ্রিল তিনি পাকিস্তান ভাঙ্গা তথা জয়বাংলা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেফতার হন। ঐ সময়ে তাঁর সাথে একই দলের অপর জাদরেল নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া, ছাত্রলীগের এম এ রহিম ও ছাত্র লীগ নেতা এস এ মুজিব গ্রেফতার হন।পাকিস্তান সরকার তাদেরে মৌলভীবাজার জেলে প্রেরণ করে। পরদিন শ্রীমঙ্গল শহরের ন্যাপের উদ্যোগে পূর্ব নির্ধারিত এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুগের অগ্নিকন্যা বলে খ্যাত তৎকালীন ন্যাপনেত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ন্যাপের সহ-সভাপতি আহমেদুল কবির তাদের মুক্তির দাবিতে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন।পরে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মারমুখী আন্দোলনের ফলে সরকার তাদেরে মুঁক্তি দিতে বাধ্য হয়।

১৯৭১ সালে পয়লা মার্চ দুপুর ১ টায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের ভাষণ রেডিওতে প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা থেকে ন্যাপ নেতা রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী, মোঃ শাহজাহান মিয়া ও সৈয়দ মূয়ীজুর রহমান স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করলে মুহূর্তেই শহরে চারদিক থেকে ন্যাপ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সারা শ্রীমঙ্গল মুখরিত হয়ে ওঠে।১৯৭১ সালে ২৪ মার্চ মৌলভীবাজারের তৎকালীন পাঞ্জাবি এসডিপিও শ্রীমঙ্গলে এসে পুনঃ পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করেন।সংগ্রামে লিপ্ত বিদ্রোহী জনতা পরদিন ২৫ শে মার্চ থানা ঘেরাও করে রেখে থানার ভিতরে ন্যাপ নেতা রাসেন্দ্র দত্ত, সৈয়দ মূয়ীজুর রহমান ও ছাত্রলীগ নেতা একরাম হোসেন চৌধুরী থানা কর্তৃপক্ষের সামনে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা পুন:উত্তোলিত করেন।এ সময় থানায় উপস্থিত পুলিশ ক্ষিপ্ত জনতার রুদ্ররোষের মুখে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য অবলোকন করে। এভাবে তিনি ও ন্যাপ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং অনেকে ট্রেনিং নিয়ে বিরাট প্রতিরোধ বাহিনী নিয়ে পাক সেনাদের মোকাবেলা করার জন্য ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর সি আর দত্তের নেতৃত্বে মৌলভীবাজারের দিকে অগ্রসর হন।
১ এপ্রিল থেকে ২৮ শে এপ্রিল পর্যন্ত বীর বিক্রমে দুর্জয় আক্রমণে প্রতিরোধ সংগ্রামে লিপ্ত মুক্তিযুদ্ধারা শ্রীমঙ্গলের স্বাধীন বাংলার পতাকা সমুন্নত রেখেছিল।পাকবাহিনী সিলেটের যুদ্ধে জল,স্থল ও অন্তরীক্ষে আক্রমণ করে ৩০ এপ্রিল ১৯৭১ শ্রীমঙ্গলে প্রবেশ করে। বাধ্য হয়ে তিনি ও স্বাধীনতাকামী দলগুলোর অসংখ্য নেতাকর্মী সীমানা অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করে দেশস্বাধীনতার পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ভারত সরকার ভারত সরকারকে আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরীকে সম্মানসূচক সার্টিফিকেট প্রদান করে।২০১৪ সালে সরকার অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে অনলাইনে আবেদন করার জন্য আহবান করলে তাতে সাড়া দিয়ে তিনি আবেদন করেন।২০১৭ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি ও কিছু সদস্যের সংকীর্ণ রাজনীতির মনোভাব নিয়ে তাঁর আবেদনপত্রের মন্তব্যের ঘরে মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য লিখে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) পাঠালে তাঁর নাম আজো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় স্বীকৃতি পায়নি। অনুরূপভাবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এম এ রহিম, সাবেক শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রইস মিয়া, ন্যাপ নেতা মোহাম্মদ শাজাহান মিয়া সহ অনেকেই সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে শ্রীমঙ্গল যাচাই-বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্যের ঘরে লিখে তাদের আবেদন ঢাকার জামুকায় পাঠানোর কারণে তারাও ন্যায্য স্বীকৃতি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন।

২০২২ সালের ১২ অক্টোবর তিনি জামুকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আপিল করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আপিলের শুনানির জন্য এ যাবত ডাক যোগে কোন চিঠি বা ফোন কল আসায় ২০২৪ সালের ১৯ মে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ফ ম মোজাম্মেল হক সাহেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁর কিছুই করার নেই বলে মন্তব্য করে আপিলের একটি ফটোকপিতে তাঁর সিল স্বাক্ষরসহ একটি সুপারিশ লিখেন । পরবর্তীতে আপিলের শুনানির আবেদন করার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের কোন উত্তর না পাওয়ায় মহামান্য হাইকোর্টে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে রিট করা হয়। মহামান্য হাইকোর্ট রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি আদেশ ও রুলনিশি জারি করেন।দেশ স্বাধীন হবার পর তৎকালীন সরকারের স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী ঢাকায় ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলে পুলিশের গুলিতে দু’জন ছাত্রনেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলন- সংগ্রাম করার কারণে তাঁকে ও অপর ন্যাপ নেতা মোঃ শাজাহান মিয়াকে এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ন্যাপের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত থাকার কারণে উপরোক্ত দুই নেতাকে কিছুই করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখিত দুই ন্যাপ নেতা তৎকালীন সরকারী দলের স্থানীয় কিছু নেতা কর্মী দ্বারা আক্রমণের শিকার হন। ফলে তৎকালীন সরকারী দলের স্থানীয় সংগঠন ও প্রধান বিরোধীদল ন্যাপ এসব ঘটনা নিয়ে এলাকায় পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ ইত্যাদিতে কিছুদিন জড়িত ছিল।”৭২ থেকে শুরু করে ‘৯০ সকল সরকারের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক তিনি আক্রমণের শিকার হন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাকশাল গঠিত হলে তাকেঁ শ্রীমঙ্গল থানা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক করা হয়।পাকিস্তান আমলে ও দেশ স্বাধীন হবার পর ও তিনি চা শ্রমিকদের পক্ষে শ্রমিক আন্দোলন করেছেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিক কারণে তাঁকে গ্রফতার করে দুবছর জেলে রাখা হয়। পরে ন্যাপ প্রধান প্রফেসর মোজাফফর আহমদের নির্দেশে তাঁর পিএ হাইকোর্টে রিট করায় তিনি মুক্তি লাভ করেন।পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম ।১৯৮০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারের আমন্ত্রণে তিনি দেড়মাসের জন্য লিডারস টোর প্রোগ্রামে সোভিয়েত রাশিয়া সফর করেন।১৯৮৩ সালে তিনি শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদে জনগণ কর্তৃক বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১২ এপ্রিল ১৯৮৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৮৫ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ শ্রীমঙ্গলে সফরে এলে তাঁর সামনে বালিশিরা পাহাড়কে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা গুফলা নদী খননের দাবী তোলে ধরেন। যা’ রেড়িওতে বারংবার প্রচারিত হয়েছিল।

তিনি একাধারে সৎ ও আদর্শবান রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক ।

১৯৭৬ সালে মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের সাথে দেন দরবার করে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের নামে শত্রু সম্পত্তির জমি নিয়ে আসার ব্যাপারেও তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম । এ উদ্যোগে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক বিপুল রঞ্জন চৌধুরী, রানা দেবরায়, গোপাল দেব চৌধুরী, কমলেশ ভট্টাচার্য, জহির উদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নেছার আহমেদ প্রমুখ।পাকিস্তান আমলে তিনি নাট্য কর্মী ছিলেন। ওই সময়ে তাঁর সাথে সহকর্মীরা ছিলেন ডাক্তার রমা রঞ্জন দেব, হিতেন্দ্র গুপ্ত, অখিল চন্দ্র ধর, বিরাজ কুসুম চৌধুরী চুনিসহ অনেকে।১৯৬২ সাল থেকে তিনি চার দশকের অধিক সময় তিনি দৈনিক সংবাদ- এ কাজ করেছেন। তাছাড়া ও তিনি বিভিন্ন পত্রপএিকায় সাংবাদিকতা করেছেন।১৯৫২ সাল থেকে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মাইল্ড ষ্টোক হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৬৮ বছর রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। জীবনে রাজনৈতিক কারণে জেল খেটেছেন তিনবার। তাঁকে এতদাঞ্চলের সৎ, ত্যাগী, আদর্শবান ও সাহসী সাংবাদিকতার প্রতীক বলা হয়ে থাকে।

গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ রাতে পড়ে গিয়ে মাইল্ড ষ্টোক করে ৫ দিন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি করোনা করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আটদিন চিকিৎসাধীন শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।বর্তমানে এই অশীতিপর রাজনীতিবিদ ও অকুতোভয় সাংবাদিক শ্রীমঙ্গলে তাঁর বাসভবনে অসুস্থবস্হায় জীবনযাপন করছেন।

You might also like