কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন-২

দিলীপ মজুমদার

(কার্ল মার্কস বিশ্বখ্যাত। আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব , দর্শন , অর্থনীতির আলোচনায় তাঁকে বাদ দেওয়া চলবে না মার্কস বা তাঁর প্রিয় বন্ধু এঙ্গেলসের কথা আমরা অল্প-বিস্তর জানি ; জানি  মার্কসের স্ত্রী জেনির কথা কিন্তু আমরা জানি না কার্ল মার্কসের মা-বাবা , ভাই-বোন, মাসি-মেসো, শ্বশুর- শাশুড়ি , পরিচারিকা ও তাঁর পুত্র, এবং , ছেলে-মেয়ের কথা ;  আমরা জানি না, যে মানুষটি বিশ্বের মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন , তাঁর কয়েকটি সন্তানকে অকালমৃত্যু  বরণ করে নিতে হয়েছে , তাঁর দুই কন্যাকে যেতে হয়েছে  আত্মহননের পথে আমরা কয়েকটি পর্বে তাঁর আত্মীয়-স্বজনের পরিচয় দেবার চেষ্টা করব বিভিন্ন ভাষায় কার্ল মার্কসের জীবনী অনেক লেখা হয়েছে , কিন্তু তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর তেমন আলোকপাত হয় নি তাই এ ব্যাপারে তথ্যেরও অভাব আছে সেই সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই আমরা অগ্রসর হচ্ছি)

পর্ব-২

সোফিয়া প্রেসবার্গ (১৭৯৭-১৮৫৪)  ও লায়ন ফিলিপস ( ১৭৯৪-১৮৬৬)   //  কার্ল মার্কসের মাসি ও মেসো

হেনরিয়েটা প্রেসবার্গের ছোট বোন সোফিয়া প্রেসবার্গের সঙ্গে বিয়ে হয়  ইহুদি বংশোদ্ভুত লায়ন ফিলিপসের । লায়ন ফিলিপসের বাবা বেনজামিন ফিলিপস , মা লিয়া হার্টগ  । বেনজামিনরা নেদারল্যাণ্ডের ভেনেডাল থেকে জাল্টবোমেলে চলে আসেন । তাঁর সাত ছেলে আর দুই মেয়ে । অন্য ছেলে-মেয়ে ব্যবসার সূত্রে অন্য জায়গায় চলে যান । লায়ন ফিলিপস ছিলেন মা-বাবার সঙ্গে ।

১৮১৫ সালে লায়ন ‘দ্য ইউনিকর্ন’ নামে একটি  তামাক কোম্পানি চালু করেন । দীর্ঘদিন এই কোম্পানির অস্তিত্ব ছিল । লায়ন অন্য ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন । এই সব ব্যবসা থেকে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন ।

মাসি ও মেসো কার্ল মার্কসকে খুব ভালোবাসতেন । কার্লও নিজমিজেনে তাঁদের বাড়িতে প্রায়ই যেতেন । মেসোর সঙ্গে কার্লের পত্রালাপ হত । কার্লকে লেখা লায়নের , লায়নকে লেখা কার্লের সাতটি পত্র পাওয়া গেছে । সেসব পত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রসঙ্গ যেমন আছে  ( আমেরিকার গৃহযুদ্ধ , বিদ্যুতের আবিষ্কার ইত্যাদি ) , তেমনি আছে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে । কার্লকে লায়ন নানা সময়ে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন ।  অর্থের ব্যাপারে মায়ের বিরুদ্ধে কার্ল মেসোর কাছে অভিযোগও করেছেন , ‘I have fallen out with my family and , as long as my mother lives , I have no right to my inheritance. ‘ 

১৮৬৩ সালে মায়ের মৃত্যুর পরে লায়ন ফিলিপসের মধ্যস্থতায় কার্ল তাঁর বাবার সম্পত্তির অংশ পান ( ‘ seven thousand guilders’ ) । এ ছাড়াও লায়ন স্নেহবশত কার্লকে নানাভাবে অর্থসাহায্য করেছেন । কার্ল মার্কস রসিকতা করে  ১৮৬১ সালের ৭ মে  এঙ্গেলসকে লিখছেন , ‘ I squeezed $160 out of my uncle so that we were able to Pay off the greater part of our debts . ‘ 

কার্ল মার্কসের ভাই-বোন 

হাইনরিখ মার্কস ও হেনরিয়েটা প্রেসবার্গের  মোট নয়টি সন্তান  । জন্মসাল অনুযায়ী তাঁদের তালিকা এই রকম :

এম.ডেভিড মার্কস  (১৮১৫-১৮১৯)

সোফিয়া মার্কস      (১৮১৬-১৮৮৬)

কার্ল মার্কস           ( ১৮১৮-১৮৮৩)

হারম্যান মার্কস      ( ১৮১৯- ১৮৪২)

হেনরিয়েটা মার্কস   ( ১৮২০-১৮৪৫)

লুই জুটা মার্কস     ( ১৮২১-১৮৯৩)

এমিলি কনরাডি       ( ১৮২২-১৮৮৮)

ক্যারোলিন মার্কস    (১৮২৪-১৮৪৭)

এডুয়ার্ড মার্কস       ( ১৮২৬- ১৮৩৭)

কার্ল মার্কসকে বাদ দিলে বাকি আটজন সন্তানের মধ্যে আমরা তিনজনের পরিচয়লিপি সংগ্রহ করতে পেরেছি । প্রথমে বলা যাক সোফিয়া শ্মালহাউজেন মার্কসের কথা । ১৮৪২ সালে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় উইলেম রবার্ট শ্মালহাউজেনের সঙ্গে । রবার্ট ছিলেন এক আইনজীবী ।বিয়ের পরে তাঁরা নেদারল্যাণ্ডের ম্যাস্ট্রিক্ট শহরে চলে আসেন ।কার্ল মার্কসের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর যোগাযোগ ছিল । ১৮৪৭ সালের এক চিঠিতে দেখা যাচ্ছে , রবার্ট শ্মালহাউজেন পৈত্রিক সম্পত্তির ব্যাপারে কার্লকে পরামর্শ দিচ্ছেন । কার্ল মার্কসের পরিবার যখন লণ্ডনে থাকতেন , তখন তাঁদের মেয়ে ক্যারোলিনা ও বার্থা দেখা করতে যেতেন । ক্যারোলিনা ও বার্থা ছাড়াও তাঁদের বেন্নো নামে এক ছেলে ও হেনরিয়েটা নামে এক মেয়ে ছিল ।

লুই জুটা মার্কস  কার্ল মার্কসের আর এক বোন । জল্টবোমেলে তাঁর সঙ্গে  জন ক্যারেল জুটার সাক্ষাৎ হয় ।১৮৫৩ সালে ট্রিয়েরে  তাঁদের বিয়ে হয়  মা ও মাসির উপস্থিতিতে ।  কেপ কলোনি যাবার পথে লুই জুটা ও তাঁর স্বামী  লণ্ডনের ডিন স্ট্রিটে কার্ল মার্কসের বাড়িতে গিয়েছিলেন । এখানে জুটা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে ভাইকে তিরস্কার করেন । কার্ল মার্কস ও  এঙ্গেলস যখন ম্যাঞ্চেস্টারে ছিলেন তখনও জুটা ও তাঁর স্বামী তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন । দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁরা বই ব্যবসায় যুক্ত হন । তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘জে.সি. জুটা , বুকসেলার অ্যাণ্ড স্টেশনার’ ।  লুই ও জন ক্যারেলের সাতটি সন্তান ।  এঁদের মধ্যে স্যার হেনরি জুটা দক্ষিণ আফ্রিকার আদালতের ব্যারিস্টার ও বিচারক হয়েছিলেন ।

এমিল কনরাডি কার্ল মার্কসের আর এক বোন ।  ১৮৫৯ সালে ট্রিয়ের শহরের ওয়াটার এঞ্জিনিয়ারিং সুপারভাইজার জোহাব জ্যাকব কনরাডির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় । মার্কসের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল । পিতার  সম্পত্তির উত্তারাধিকার লাভের ব্যাপারে এমিলির স্বামী মার্কসকে সাহায্য করেন । মার্কসের মৃত্যুর পরে এলেনর মার্কসের কাছে তাঁরা শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন ।

(চলবে)

(দিলীপে মজুমদার: সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক, সত‍্যবাণীর কলকাতা কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট)

 

 

You might also like