দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনঃ স্বতন্ত্রের চ্যালেঞ্জে বেকায়দায় নৌকার প্রার্থীরা

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সিলেটে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তিতে নেই আ’লীগের প্রার্থীরা। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেয়ায় জেলার প্রায় সবকটি আসনেই ‘স্বতন্ত্র’র ব্যানারে প্রার্থী হচ্ছেন মনোনয়নবঞ্চিতরা। ফলে নৌকার মাঝিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এদিকে, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে মনোনয়নবঞ্চিতরা একাট্টা হয়ে একজনকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন। আ’লীগের বিভিন্ন সুত্র থেকে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত বিএনপিবিহীন নির্বাচনে দলীয় টিকেট পেলেই বিজয় নিশ্চিত এমনটা ধরে নিয়েছিলেন আ’লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। কিন্তু মনোনয়ন প্রদানের দিন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ায় সেই হিসেব উল্টে গেছে।
মনোনয়নবঞ্চিতরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলেছেন। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে একজনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। যেসব আসনে বঞ্চিতদের মধ্যে সমঝোতা হয়নি সেসব আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে একাধিক নেতা প্রার্থী হচ্ছেন। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন নৌকার মাঝিরা।
মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেট জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ৫টিতে আ’লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ কেউ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সাথে মতবিনিময় করে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন।
এখন পর্যন্ত যারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, সিলেট-১ আসনে আ’লীগের ৩ বারের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ওই আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। মিসবাহ সিরাজ এবার সিলেট-১ ও ৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি সিলেট-১ আসনেই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সিলেট-২ আসনে এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি ও জেলা আ’লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
সিলেট-৩ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সেক্রেটারি এডভোকেট আবদুর রকিব মন্টু। মন্টু আবার উচ্চ আদালতের ডেপুটি এ্যাটনি জেনারেলও।
সিলেট-৪ আসনে বর্তমান এমপি ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের সাথে মনোনয়নবঞ্চিত জেলা আ’লীগের সদস্য গোলাপ মিয়া নির্বাচন করার গুঞ্জন রয়েছে।
সিলেট-৫ আসনে নগর আ’লীগ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন। আসনটিতে জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট এনজিও ব্যক্তিত্ব ড. আহমদ আল কবীর নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
সিলেট-৬ আসনে বর্তমান এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন কানাডা আ’লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। শোনা যাচ্ছে, এ আসনে আ’লীগের আরো কেউ কেউ প্রার্থী হতে পারেন।
ইতোমধ্যে মঙ্গলবার সিলেট-৩ আসনে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ও আবদুর রকিব মন্টু এবং সিলেট-৫ আসনে ড. আহমদ আল কবীর নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে এমপি নির্বাচনে অংশ নিতে নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কেউ। স্থানীয় সরকারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ না থাকায় সিলেটে অনেকেই পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু করছেন। এরমধ্যে কেউ আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আবার কেউ মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পদত্যাগ করছেন।
ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগে ২ জন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। আজকালের মধ্যে আরও কয়েকজনের পদত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। যারা ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পদ শূণ্য ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগকারীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ চৌধুরী (আল আমিন চৌধুরী)। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আগেই তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দল অবশ্য তাকে নিরাশ করেনি। শেষ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে আল আমিন চৌধুরীই আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পান। এই আসনের বর্তমান এমপি প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্ত এবার দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ একেএম শফি আহমদ সলমান। আসনটিতে নৌকার টিকেট নিশ্চিত করেন আ’লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শফি আহমদ সলমান। গত ২৭ নভেম্বর সোমবার তিনি কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্বশেষ স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ সামছুল হক স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই পত্রে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের ৮নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সৈয়দ মো. শামীম আনোয়ারকে অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এই আসনের বর্তমান এমপি দেওয়ান শাহনওয়াজ গাজী এবার আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পাননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি অথবা তাঁর পরিবারের অন্য কোন সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।

You might also like