ব্রিটেনের নতুন মন্ত্রিসভায় আছেন যারা
৮শ বছরে প্রথম নারী চ্যান্সেলর
যুক্তরাজ্যের নতুন মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বড় চমক রেইচেল রিজ, যিনি যুক্তরাজ্যের ৮০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম অর্থমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যে অর্থমন্ত্রীর পদের নাম ‘চ্যান্সেলর অব একচেকার’।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হয়, দুটি বাদে শুক্রবার পাওয়া যায় ৬৪৮টি আসনের ফল।
গতবারের চেয়ে ২১৪টি আসন নিয়ে কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টি এবার ৪১২টিতে জয় নিশ্চিত করেছে। আর গতবারের চেয়ে ২৫২টি আসন হাতছাড়া হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির, তারা এবার পেয়েছে ১২১টি আসন। ভোটের রাজনীতি এবার চমক দেখিয়েছে লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টি, দলটি এবার তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৭১টি আসন পেয়েছে। বাকি আসনগুলো অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন।
শুক্রবার সকালে নিরঙ্কুশ জয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই সরকার গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন স্টারমার। বিদায়ী টোরি নেতা ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে পদত্যাগ করার পরই বাকিংহাম প্রাসাদে রাজার সঙ্গে দেখা করেন স্টারমার। সেখান থেকে সরকার গঠনের অনুমতি পেয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ফিরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এরপরই শুরু হয় তার মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া।
শুক্রবার দুপুর থেকে বিকাল নাগাদ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে একে একে ডাক পান লেবার পার্টির অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা, যারা শুক্রবারের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
উপপ্রধানমন্ত্রী রেইনাহ
কিয়ার স্টারমার তার সরকারে উপ-প্রধানমন্ত্রী করেছেন অ্যাশটন-আন্ডার-লিন এর এমপি অ্যাঞ্জেলা রেইনাহকে। গ্রেটার ম্যানচেস্টারের বাসিন্দা রেইনাহ নির্বাচনের আগে বাড়ি বিক্রি করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। তবে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করেনি।
যুক্তরাজ্যে সরকারের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন অর্থমন্ত্রী, যার দায়িত্ব পেয়েছেন রেইচেল রিজ। দক্ষিণ লন্ডনে বেড়ে ওঠা রিজ ২০১০ সালে লিডস ওয়েস্ট থেকে প্রথমবার সংসদ সংদস্য নির্বাচিত হন, যার আগে তিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করতেন। এবার লিডস ওয়েস্ট ও ফাডজি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তার ছোট বোন এলি রিজ ২০১৭ সাল থেকে এমপি।
অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় লেবার পার্টির নীতি-পরিকল্পনার আলোকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড লামি
স্টারমারের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন গায়ানিজ বংশোদ্ভূত ডেভিড লামি। তার জন্ম লন্ডনে। ১২ বছর বয়সে বাবা মারা গেলে তার মা একাই তাকে লালন-পালন করে বড় করেন। অত্যন্ত মেধাবী লামি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশ হিসেবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। ২০০০ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে টনেনহ্যাম থেকে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রিসভায় জুনিয়র মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় পার্লামেন্টে তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেইনের প্রতি লেবার পার্টির ‘লৌহকঠিন সমর্থন’ রয়েছে। তবে ট্রাম্পের প্রতি একসময় বিরূপ ধারণা পোষণ করতেন, ট্রাম্পকে একবার ‘নব্য নাৎসি মানসিকতা পোষণকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থান পাল্টে বলেন, ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে যৌথ স্বার্থে তার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এভেট কুপা
লেবার পার্টির মধ্যে শীর্ষ পদধারী নারীদের মধ্যে এভেট কুপা একজন। স্টারমারের মন্ত্রিসভায় তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একসময় সাংবাদিকতা করা কুপা ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্র হন। তার স্বামী এড বলসও তখন সংসদ সদস্য ছিলেন।
আরও যারা মন্ত্রী হলেন
যুক্তরাজ্যের সার্বভৌম ‘প্রাইভেট এস্টেট’ ডাচি অব ল্যাংকাসটাহর চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন লেবার পার্টির জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা প্যাট ম্যাকফ্যাডেন।
(বাঁয়ে উপর থেকে ক্রমান্বয়ে) প্যাট ম্যাকফ্যাডেন, শাবানা মাহমুদ, জন হিলি, ওয়েস স্ট্রিটিং, ব্রিজিট ফিলিপসন ও এড মিলিব্যান্ড। ছবি: বিবিসি
জীবনে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রাজনীতিতে আসা তুখোড় আইনজীবী শাবানা মাহমুদকে করা হয়েছে বিচার প্রতিমন্ত্রী ও লর্ড চ্যান্সেলর। সাবেক কনজারভেটিভ নেত্রী লিজ ট্রাসের পর তিনিই দ্বিতীয় নারী, যিনি এ দায়িত্ব পেলেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে জন হিলিকে। সামরিক ব্যয় কমানোর পক্ষে হলেও ইউক্রেইনের পক্ষে জোরালো অবস্থান রয়েছে তার।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় সমস্যার মধ্যে বেশি আলোচিত স্বাস্থ্য খাত। এবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলেন ওয়েস স্ট্রিটিং।
আর শিক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে ব্রিজিট ফিলিপসনকে। ২০১০ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন তিনি।
জ্বালানিমন্ত্রী করা হয়েছে এড মিলিব্যান্ডকে। অবশ্য তার মন্ত্রণালয়ের নাম জ্বালানি নিরাপত্তা ও নেট জিরো। ২০১০ সালে লেবার সরকারের শেষ দিকে এমন দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।
কর্ম ও পেনশন মন্ত্রী হয়েছেন লিজ কেন্ডাল। ব্যবসা ও বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছেন জোনাথন রেনল্ডস। বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পিটার কাইল। লুইস হাইগকে করা হয়েছে পরিবহন মন্ত্রী। পরিবেশমন্ত্রী হয়েছেন স্টিভ রিড।
(বাঁয়ে উপর থেকে ক্রমান্বয়ে) লিজ কেন্ডাল, জোনাথন রেনল্ডস, পিটার কাইল, পিটার কাইল, লুইস হাইগ ও স্টিভ রিড। ছবি: বিবিসি
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন লিসা নন্দি। হিলারি বেনকে নর্দান আয়ারল্যান্ড বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, আইয়ান মুরেইকে স্কটল্যান্ড বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও ওয়েলস বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে জো স্টিভেনসকে।
(বাঁয়ে উপর থেকে ক্রমান্বয়ে) লিসা নন্দি, হিলারি বেন, আইয়ান মুরেই, জো স্টিভেনস, লুসি পাওয়েল ও ব্যারোনেস স্মিথ। ছবি: বিবিসি।
গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা
লুসি পাওয়েল হয়েছেন কমন্স নেতা এবং লর্ডসের নেতা করা হয়েছে ব্যারোনেস স্মিথকে।
পার্লামেন্টে লেবার পার্টির চিফ হুইপ করা হয়েছে অ্যালান ক্যাম্বলকে।
রেইচেল রিজকে দায়িত্ব দেওয়ার পর তার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ড্যারেন জোনস।
অ্যাটর্নি জেনারেল পদে বসানো হয়েছে রিচার্ড হারমারকে।