অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলনের ডাকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে পলাশী দিবস পালিত
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ডেস্ক
সত্যবাণী
লণ্ডন, ২৪ জুন: পলাশী শঠতা ও প্রহসনের বিয়োগান্তক ইতিহাসের ২৬৭ বছর পর ঐতিহাসিক পলাশী দিবসে “অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন”(The United Bengal Movement) এর উদ্যোগে ও “United Bengal News” এর পৃষ্ঠ পোষকতায় যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিনস্টারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে ইতিহাসে প্রথমবারের মত পালিত হলো পলাশী দিবস, অনুষ্ঠিত হলো প্রতিবাদ সমাবেশ।
২৩ জুন, রবিবার, বেলা দুপুর ১টা থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে“অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন”(The United Bengal Movement) এর কর্মী ও সমর্থকেরা জমায়েত হতে শুরু করেন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত সেখানে তাঁরা অবস্থান নেন। প্রবাসী বাঙালি ও বাংলাদেশি মানবাধীকার কর্মীরা এতে যোগ দেন। এসময় প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকারী জনতা বাংলা ও ইংরেজিতে ‘রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন বিশ্বাসঘাতক, সম্পদ লুন্ঠনকারী ও নিপীড়ক।’ ‘সিরিল রেড ক্লিফের বাংলা ভাগ আমরা মানি না, তিনি বাঙালিদের সাথে প্রতারণা করেছেন।’ ‘আমরা নবাবী বাংলা ফেরত চাই। আমরা নবাব সিরাজ–উদ–দৌলা‘র বাংলা ফেরত চাই।’ ‘দেশের জন্য জীবন দিতে আমরা প্রস্তুত।’ ‘আমরা অবিভক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলা চাই, এটা আমাদের ঐতিহাসিক দাবি।’ ‘Have a United Bengal and Smile.’ ‘Together We Can, Together We Will.’ ‘Voices for Change, Hearts for Justice.’ ‘Stand Up, Speak Out, Changethe Bengal.’ ‘Join the Journey, Be the Change.’ ‘Unite for a Brighter Tomorrow.’ ‘Paws and Hearts for a Better & Undivided Bangladesh.’ ইত্যাদি লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
“অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন” (The United Bengal Movement) এর আহবায়ক ও “United Bengal News” এর সম্পাদক হাসনাত আরিয়ান খানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত “PALASHI TO WESTMINSTER” গণসমাবেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের দৌহিত্র শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুন মোর্শেদ, সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ও সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, কবি আহমেদ ময়েজ, জৈষ্ঠ সাংবাদিক ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট বদরুজ্জামান বাবুল, সাংবাদিক হাসান আল জাবেদ ও অ্যাক্টিভিস্ট মাহতাব উদ্দিন।
বাংলা ভাগ ও পলাশী দিবসের ইতিহাস তুলে ধরে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুন মোর্শেদ বলেন, ‘পলাশী থেকে শিক্ষা নেবার অনেক কিছু আছে। এক নম্বর হলো ষড়যন্ত্র।ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে সেদিন ওরা জয়ী হয়েছিলো। আজও নানান ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা যে আমাদের দু‘টা পোর্ট দিলাম ভারতকে, কিসের বিনিময়ে? তারা কত ভাড়া দিবে? রেলপথ যেটা করছে ওরা, ওখান থেকে আমরা কি ভাড়া পাবো? জায়গাটা তো আমাদের? ওখান থেকে আমরা কিছুই পাবো না? যাত্রীদের ভাড়াটাও তো আমাদের পাওয়ার কথা। মংলায় যদি মালামাল নিয়ে ভারতের একটা জাহাজ ভিড়ে, আমাদেরকে ভাড়া দিবে না? ট্রেডের টাকা না দিয়ে, কেমন করে তারা সেটা ওখানে নিয়ে যাবে? ওদের দেশে একটা ভিসার জন্য গেলেও তো তিন মাসের আগে পাওয়া যায় না। সত্যি কথা বলতে গেলে আমরা হচ্ছি ভেড়ার পাল। সাহস বলতে কিছু নাই। আমাদের ‘ইউনাইটেড বেঙ্গল‘ এর কাঙ্খিত লক্ষে পৌছতে হলে সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এখানে আমরা এক মিলিয়ন বাঙালি আছি। শুধু বিলেতের বাঙালিরা না, পৃথিবীতে যত বাঙালি প্রবাসী আছি, আমাদের সবার ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ইনশাআল্লাহ এমন একদিন আসবে যেদিন আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষে পৌছবো। আমরা কমিউনাল ডিভিশনে বিশ্বাস করি না। আমাদের কেউ বিভক্ত করে বেশিদিন রাখতে পারবে না। শুধু দুই বাংলাই না, ঐতিহাসিকভাবে বিহার, উড়িষ্যা, আরাকানও বাংলার প্রভিন্স। এটাঐতিহাসিক সত্য, এটা ঐতিহাসিক বাস্তবতা। কেনো তারা আমাদের বিভক্ত করে রাখবে!’ তিনি আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলার স্বাধীনতা নির্ভর করছে ইউনাইটেড বেঙ্গলের উপর, বৃহত্তর বাংলার উপর। এটাই বাস্তবতা। অখন্ড বাংলা নিয়ে আমাদের নিয়মিত প্রোগ্রাম করা উচিত, প্রতিমাসে করা উচিত।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন বলেন, ‘পলাশী দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিবস। আমরা আজকে দু:খের সঙ্গে এই দিবসটি পালন করছি।পলাশী থেকে ব্রিটেন সুবে বাংলায় দুইশো বছরের ব্রিটিশ শাসনের সূচনা করে। ব্রিটিশ শাসনের দুইশো বছর পর আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, তা ছিলো আংশিক। ১৯৭১ সালে আমরা আবারও স্বাধীন হয়েছিলাম, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা আমরা আজও পাইনি। দুইশো বছর শাসনের পর ব্রিটিশরা চলে আসার আগে যে ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাক্ট‘ করে দিয়ে এসেছে, আমরা সেই অ্যাক্টের ফার্স্ট শিডিউল বাস্তবায়নের জন্য আমরা ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতা চাই। আমরা ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাক্ট ১৯৪৭‘ এর ফার্স্ট শিডিউল অনুসারে অবিভক্ত বাংলা চাই। আমরা কমনওয়েলথ ভ্যালুজ অনুসারে স্বাধীনতা এবং মানবাধীকার নিশ্চিত চাই। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কমনওয়েলথের মূল ভিত্তি। আমরা দিল্লীর আধিপত্যবাদের কবলমুক্ত বাংলাদেশ চাই। আধিপত্যবাদের অবসানের লক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স আইন১৯৪৭‘ পাশ করেছিলো। কালের বিবর্তনে ভারত তার প্রতিশ্রুতি থেকেও এই অঞ্চলে আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ তার শিকার হয়ে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাক্ট ১৯৪৭‘ এই পার্লামেন্টে পাস হয়েছিলো। নতুন যে পার্লামেন্ট আসবে তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের জন্য যেমন প্রতিবছর ব্রিটিশ সরকারকে দু:খ প্রকাশ করতে হয়, ক্ষমা চাইতে হয়, ঠিক তেমনিভাবে এই অ্যাক্ট বাস্তবায়ন না করার কারণে সেদিনের সেই সুবে বাংলা আজকে যে সমস্যার মধ্যে পড়েছে সেখান থেকে মুক্তির জন্য ফার্স্ট সিডিউল বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকা রাখা দরকার।’ তিনি ভারত সরকারকে চাপ দিতে ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ জানান এবং আজকের বাংলাদেশকে দিল্লীর আধিপত্যবাদের কবলমুক্ত করে ইতিহাসের সেই দায় পরিশোধ করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহবান জানান।