অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব বাংলাদেশ একাডেমি অফ সাইন্সেস এর ফেলো নির্বাচিত
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান ও হেপাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল সম্প্রতি বাংলাদেশ একাডেমি অফ সাইন্সেস এর ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ একাডেমি অফ সাইন্সেস এর বার্ষিক সাধারণ সভায় একাডেমির সভাপতি এমিরেটস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবকে বাংলাদেশ একাডেমি অফ সাইসেন্স এর ফেলো হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন।
উল্লেখ্য, এ বছর বাংলাদেশ একাডেমি অফ সাইসেন্স এর ফেলোদের সিংহভাগের ভোটে একমাত্র অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব-ই এ বছর ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবকে বাংলাদেশ একাডেমি অফ সাইন্সেস এর ফেলো হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে এমিরেটস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন যে তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞান একাডেমি এবং বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করবেন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞান তার দ্বারা সমৃদ্ধ হবে।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস বাংলাদেশী বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের জন্য একটি একাডেমিক ফোরাম। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত, এটি বাংলাদেশে বিজ্ঞানের গবেষণা ও উন্নয়নের ভূমিকা পালনের লক্ষ্য রাখে।
ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাগের পর, পাকিস্তান একাডেমি অফ সায়েন্সেস ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, একাডেমির ১২ জন বাংলাদেশী ফেলো (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানি) ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস গঠন করেন। মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ভূমিকা পালন করেন।
২০১৪ সাল থেকে, BAS ডিজিটাল লাইব্রেরি Bangladesh Journals Online (BanglaJOL) পরিচালনা করছে।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ মালায়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের নতুন ওষুধ ন্যাসভ্যাক এবং হেপাটাইটিস বি ভাইরাসজনিত লিভার রোগ বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য তাকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের থেরাপিউটিক ভ্যাকসিন ন্যাসভ্যাকের ফেইজ ১, ২ ও ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রধান গবেষক হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। তার গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে ওষুধটি এরই মধ্যে কিউবাসহ একাধিক দেশে রেজিষ্ট্রেশন পেয়েছে এবং বাংলাদেশেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধটির রেসিপি অনুমোদন করেছে। তিনি বাংলাদেশে উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেরও প্রধান গবেষক।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক স্বপ্নীল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৯৫ সালে এম.বি.বি.এস ১৯৯৮ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে এম.এস.সি. এবং ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেপাটোলজিতে এম.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ইন্ডিয়ান কলেজ অব ফিজিসিয়ানস, রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব আয়ারল্যান্ড এবং রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব লন্ডনের ফেলো। পাশাপাশি তিনি জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও মেটাবোলজি বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক এবং ভারতের অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেস, ঋষিকেশের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের বোর্ড অব স্টাডিজের সদস্য। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিন-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের ভাইরাল হেপাটাইটিস, এইচআইভি-এইডস, এসটিআই সংক্রান্ত স্ট্র্যাটেজিক এন্ড টেকনিক্যাল এডভাইজারি গ্রুপেরও অন্যতম সদস্য।
বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বৈজ্ঞানিক জার্নালে অধ্যাপক স্বপ্নীলের ৩০০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লিভার বিষয়ক ৫টি টেক্সট বই সম্পাদনা করেছেন যার প্রতিটি বিভিন্ন খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক মেডিকেল প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করেছে। এগুলো হচ্ছে ‘লিভার: এ কমপ্লিট বুক অব হেপাটো-প্যানক্রিয়াটো-বিলিয়ারী ডিজিজেজঃ প্রকাশক: এলসেভিয়ের, প্রকাশকালঃ ২০০৯), ‘কম্প্রিহেনসিভ টেক্সট বুক অব হেপাটাইটিস বি’, ‘টেক্সট বুক অব হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’ ও ‘হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি প্রেসক্রাইবার’ (প্রকাশকঃ জেপি ব্রাদার্স, প্রকাশকাল যথাক্রমে : ২০১০, ২০১৫ ও ২০১৬) এবং ‘ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ (প্রকাশকঃ ম্যাকমিলান পাবলিশার্স, প্রকাশকাল : ২০১২)।
অধ্যাপক স্বপ্নীল ২০১৩ সালে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিস্টিংশন’ অর্জন করেন আর ২০১৪ সালে ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ‘অর্ডার অব মেরিট’-এ ভুষিত হন। ভারতের কলিঙ্গ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল ফাউন্ডেশন তাকে ২০১৫ সালে সম্মানসূচক ‘ব্লুমবার্গ ওরেশন’ প্রদান করে। ২০১৭ সালের ‘হুজ হু’-তে তার জীবনী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি ২০১৮-তে মার্কুইস হুজ হু কর্তৃক ‘এলবার্ট নেলসন মার্কুইস লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড’ এ ভুষিত হন।
অধ্যাপক স্বপ্নীলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন দু’টি হচ্ছে কিউবান একাডেমি অব সাইন্সেস কর্তৃক ন্যাসভ্যাক উদ্ভাবনের জন্য ২০১৯-সালে যৌথভাবে ‘প্রিমিও ন্যাশনাল’ পদক এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সেস কর্তৃক ‘বাস গোল্ড মেডেল এওয়ার্ড ২০২১’ লাভ।
কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় অধ্যাপক স্বপ্নীল ওয়ালটন গ্রুপ কর্তৃক ‘হেলথকেয়ার হিরোজ এওয়ার্ড ২০২০’, বাংলাদেশ-আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স কর্তৃক ‘গ্লোবাল বিজনেস সিএসআর এওয়ার্ড ২০২১’, ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানস কর্তৃক ‘গ্লোবাল হেলথকেয়ার লিডারশিপ এওয়ার্ড ২০২১’, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ‘কোভিড-১৯ হিরো’ এবং নারীকন্ঠ ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘কোভিড হিরো’ এওয়ার্ডে ভূষিত হন।
বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশের তিনি পরপর সাতবার নির্বাচিত জেনারেল সেক্রেটারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হেপাটোলজি এলুমনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ফোরাম ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
পাশাপাশি তিনি ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের সাধারণ সম্পাদক, এশিয়ান প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের কার্যকরী সদস্য এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর স্টাডি অব দ্যা লিভারের ইন্টারন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর। অধ্যাপক স্বপ্নীল বাংলাদেশ স্টেম সেল এন্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তিনি ইন্টার-একাডেমি পার্টনারশিপের রিজেনারেটিভ মেডিসিন সংক্রান্ত ওয়ার্কিং পার্টির সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ১২ জন সদস্যের অন্যতম।
অধ্যাপক স্বপ্নীল বাংলাদেশে লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় সর্বাধুনিক পদ্ধতি ট্রান্স-আর্টারিয়াল কেমো-এম্বোলাইজেশন (টেইস)-এর পুরোধা। পাশাপাশি তিনি লিভার ফেইলিওরে অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেমসেল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, প্লাজমা এক্সচেঞ্জ ও লিভার ডায়ালাইসিসেরও পথিকৃত।
অধ্যাপক স্বপ্নীল ১৯৭০ সালে সিলেট শহরের কালিঘাটে একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম ইঞ্জিনিয়ার মাহতাব উদ্দিন আহমেদ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন।