গঠন হচ্ছে ৮টি স্ট্রাইকিং টিম জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রস্তুত সিসিক

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ অতিবৃষ্টির কারণে নগরীতে সম্প্রতি সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন,‘বর্তমানে বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে সিলেটে বৃষ্টিপাত বেড়েছে, তাপমাত্রাও বেড়েছে। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতিতে বিরাজ করছে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ। এমন অবস্থায় সিলেটে গত ১৬ জুলাই রাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এক থেকে দেড়ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বন্যা পরিস্থিতির কারণে বন্যার্তদের সহায়তা, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পানি নিষ্কাশনসহ নানা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এরপরই কোরবানির ঈদ আসলো। পশু কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নগরভবনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। মাঝখানের সময়টাতে ড্রেনেজ সিস্টেম পুরোপুরি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সম্ভয় হয়ে ওঠেনি। পাশাপাশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাতে নাগরিকরাও ড্রেনের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলেছেন।তিনি বলেন, ‘অতিবৃষ্টির কারণে বিভিন্নস্থানে টিলার মাটি ধসে নালা-নর্দমার পানি প্রবাহ আটকে দিয়েছে। যার কারণেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছুর পর আমি দায় মাথায় নিয়ে নগরবাসীকে আশ্বস্থ করতে চাই সামনেও অতিবৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ঠেকাতে সিলেট নগরজুড়ে ৮টি স্ট্রাইকিং টিম তৈরি করা হয়েছে। যাদের সাথে থাকবেন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আমি মনিটরিং করবো।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় নগরভবনের কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন।সংবাদ সম্মেলনের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, গত ১৬ জুলাই রাতে যে বৃষ্টি হয়েছে সেটা ছিল এ যাবতকালে সবচেয়ে কমসময়ে বেশি বৃষ্টিপাত। নগরের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি অনেক উঁচু এলাকায়ও পানি জমেছে। তবে সেই পানি আবার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে নেমেও গেছে। এছাড়া সারাদিন রাস্তাঘাটে যে ময়লা জমে সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় রাত ১২টার পরে। কিন্তু সেই রাতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেগুলো পরিষ্কারের আগেই। এতে রাস্তার ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে চলে গিয়ে পানি প্রবাহে বিঘœ সৃষ্টি করে।তিনি জানান, বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখে পরের দিন বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সুধীজন, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নগরভবনের সভাকক্ষে জরুরি মতবিনিময় করা হয়। জলবায়ু পরিস্থিতি পরিবর্তনের কারণে সামনেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির আভাস জানাচ্ছে আবহাওয়া অফিস। এটিকে মাথায় রেখে আমরা কর্মপন্থা অবলম্বন করেছি। দিনে কিংবা রাতে যেকোনো সময় অতিবৃষ্টি হলে স্ট্রাইকিং টিম জলাবদ্ধতা ঠেকাতে মাঠে নামবে।
মেয়র বলেন, নগরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে অতিবৃষ্টি ছাড়াও সম্প্রতি আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। দলদলি চা বাগানের টিলা ধ্বসে পলি ড্রেনে পড়ছে। ড্রেনেজ সিস্টেমে বিঘœ ঘটাচ্ছে। এছাড়া দরগাহ গেটের উল্টোদিকেও জজ বাংলোর টিলা ধ্বসে পাশের ছড়ার পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ছড়া-খাল, ড্রেনের গভীরতা বাড়াতে আমরা বন্যা ও বর্ষার কারণে কোনো কাজ করতে পারিনি।

আরিফুল হক নাগরিকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেক নাগরিক ময়লা-আবর্জনা, লেপ-তোষকও ড্রেনের মধ্যে ফেলছেন। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সরকারী নির্দেশনায় তো এমন অপরাধে ২ লাখ টাকা অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। কিন্তু আমরা সেটা প্রয়োগ করছি না। সবার সহযোগিতায় আমরা এ নগরকে সাজাতে চাই।
মেয়র তার বক্তব্যে আক্ষেপের সাথে উল্লেখ করেন, সবাই কথায় কথায় খোঁচা দেন, ‘শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন গেলো কোথায়! এ বিষয়ে বলতে চাই, আমরা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে ১২২৮ কোটি টাকা শর্ত সাপেক্ষে বরাদ্দ পেয়েছি। শর্ত হচ্ছে বরাদ্দের ২০ শতাংশ অর্থাৎ ২৪৫ কোটি টাকা আমাদেরকেই পূরণ করতে হবে। বাকি ৯৮৩ কোটি টাকা সরকারের কাছ থেকে চারটি অর্থবছরে পাবে সিসিক। এরমধ্যে আমরা ২টি ধাপে ৩২৯ কোটি টাকা পেয়েছি। এই টাকার কাজ চলমান রয়েছে। বাকিটা পর্যায়ক্রমে পাবো। তাই কথায় কথায় হাজার কোটি টাকা জলে গেলো এমনটি বলা কতোটা সঠিক হবে তা আপনারা বিচার করবেন। মেয়র বলেন, আমরা যেসব কাজ করাচ্ছি সেগুলো আমাদের ইচ্ছাতে নয়। সরকারী মাস্টার প্ল্যান অনুসারে। এগুলো মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে তারপর অনুমোদন হয়। দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে আমরা টানা ৩ বার সেরা হয়েছি। আমাদের কাজে-কর্মে ভুল থাকলে নিশ্চয় সরকারীভাবে আমরা শ্রেষ্ঠ হতাম না।এছাড়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার বক্তব্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অসহযোগিতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পাঠানটুলা থেকে মদিনা মার্কেটের রাস্তা, সোবহানিঘাটের রাস্তা, আম্বরখানা থেকে বিমানবন্দর রাস্তা এগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তাদেরকে আমরা বলেছি ড্রেনগুলো ঠিক করে দিতে। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেন না। এটাও জলাবদ্ধতার কারণ। নগরবাসীর স্বার্থে একে অন্যকে সহযোগিতা করা উচিত।সংবাদ সম্মেলনে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী সাম্প্রতিক বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায়, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, প্যানেল মেয়র(১) ও কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপনসহ কাউন্সিলরবৃন্দ ও কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

You might also like