অনৈতিক সাংবাদিকতা থেকে বিরত থাকুন: সাংবাদিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন লেখা এবং দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদের অনৈতিক সাংবাদিকতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা চাই, তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন, দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যশীলতা চাই। অনৈতিক সাংবাদিকতা কোনো দেশের পক্ষে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না কারণ এটি ক্ষতির কারণ … তাই কোনো অনৈতিক সাংবাদিকতা যেন না হয়।’রোববার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।মানুষের কল্যাণে সাংবাদিকতার নিরপেক্ষ নীতি বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকলকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং এটিই (সমাজের জন্য) সবচেয়ে বড় বিষয়।’

দেশের সাংবাদিক সমাজকে জনকল্যাণে দায়িত্ব ও দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।জনগণকে বিভ্রান্ত করে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে এবং তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভেতরের অনেক গল্প সামনে উঠে আসে। যার ফলে, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সহজ হয়।সাংবাদিকদের জন্য বিদ্যমান নীতিমালা মেনে চলার বিষয়ে জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য তাদের এই পেশায় জড়িত হতে হবে।জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, রাজনীতির মতো, নীতিমালা ব্যতীত সাংবাদিকতা দেশ ও জাতিকে কিছুই দিতে পারে না।অন্য সকলের মতামতকে সম্মান করার পাশাপাশি যেকোনো সমালোচনা করার সময় রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং সম্প্রচার আইন কার্যকর করার কাজ চলছে।আমরা সম্প্রচার আইন তৈরি করবো যাতে তথ্যভিত্তিক কাজগুলো করা যায় … অপ্রয়োজনীয় সমালোচনার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কোনো হলুদ সাংবাদিকতা যেন না থাকে,’ বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার একটি আইন তৈরি করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এসে দেশে হত্যা, লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে এলিট শ্রেণির শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২১ বছর পর আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশকে আবার উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসি। আমরা অল্প সময়ে দেশের যে উন্নতি করেছি, ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা তা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া একটি রাজনৈতিক দল। আমরা কারো কাছে হাত পেতে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই না। আমরা জাতি হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা অর্জন করতে চাই। আমাদের এখন বিশ্ববাসী মর্যাদার চোখে দেখে। আমরা নিজেদের সম্পদ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমি নিজেও সাংবাদিক পরিবারের একজন সন্তান। সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ। সমাজের দুর্নীতি ও অনিয়মগুলো সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। আমরা এগুলো দেখে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে দল বিবেচনায় আনছি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালের আগে দেশে মোবাইল ফোন ছিল না। আমরা সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন দিতে পেরেছি। আগের সরকারের সময়ে আধুনিক চিন্তাচেতনার অভাব ছিল। তাই তারা দেশের কল্যাণে কাজ না করে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করেছে।করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা, বন্যা ও দুর্যোগকে মোকাবিলা করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সরকারের সেবা কার্যক্রম দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পেরেছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে একটি মামলা হলেই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা যেত। এখন আমরা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইন সংশোধন করেছি। এটিও সাংবাদিকদের কল্যাণে করা হয়েছে। আমি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি করি। মানুষের জীবনমান উন্নত করাই হচ্ছে আমার জীবনের লক্ষ্য।’

মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণভবন থেকে এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।ডিআরইউ এর সাবেক সভাপতি ও রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান শাহজাহান সরদারের সভাপতিত্বে, ডিআরইউ’র সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ফিরোজ,বর্তমান সহ-সভাপতি নজরুল কবীর, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অন্যদের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

You might also like