অন্ধকারের অতল গহ্বরে জগন্নাথপুরের পিয়ারা বেগম এনজিও ঋণ আর গয়না বেচে কেনা ৬টি গরু চুরি
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ এনজিও ঋণ আর গয়না বেচে কিনেছিলেন ৬টি গরু। সেই গরুর দুধ বেচা টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি দেয়াসহ ভালোই চলছিল। সংসারের স্বচ্ছতা আনতে লড়াই করছিলেন একাই। কিন্তু হুট করেই সব শেষ। চুরি হয়ে গেছে সব ক’টি গরু। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় দশা এই নারীর। কান্না যেন থামছেই না পিয়ারা বেগমের। কারণ তাঁর চোখে যে পুরো পৃথিবীটাই এখন অন্ধকার!জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, পিয়ারা বেগম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের কাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা। ৭ সন্তানের এ জননীর ৮ বছর পূর্বে স্বামী মারা যান। চুরির ঘটনায় জগন্নাথপুর থানায় অভিযোগ করেছেন পিয়ারা। সব হারিয়ে দিশেহারা এ নারী আকুতির সুরে গণমাধ্যমকে বলেন, চোরেরা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। ২৩ জুলাই রোববার রাতে গোয়ালঘরের সব গরু চুরি হয়ে গেছে। এখন আমি কিভাবে বিভিন্ন এলজিও ঋণের টাকা পরিশোধ করব। এ চিন্তায় চোখে ঘুম নেই।তিনি জানান, প্রতিদিন ৪ লিটার দুধ বিক্রি করে ৪ শ’ টাকা পেতেন। এই টাকা দিয়ে সংসার চলতো। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেন । স্বামী মারা যাওয়ার পর গরু লালন-পালন করে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের বিয়ে দেন। তৈরী করেন টিনশেডের পাকাঘর।ওই নারী জানালেন, ২ সপ্তাহ আগে একটা এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিচ্ছি আর ছেলের বউয়ের একটি গয়না বেঁচে একটা ষাঁড় কিনেছিলাম। এখন আমার সব শেষ হয়ে গেল।
পিয়ারা বেগমের ছেলে কামাল উদ্দিন বলেন, বিদেশি জাতের ৩টি গাভি ও ৩টি ষাঁড় গরু ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র সম্বল। মায়ের সঙ্গে আমরা ২ ভাই গরু লালন-পালন করি। প্রতিদিনের মতোই গত রোববার ১০টার দিকে গরুগুলোকে খাবার দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে গোয়ালঘরের তালাভাঙা। ভেতরে ঢুকে দেখে গরু নাই। পরে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে একটা গরুরও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালের দিকে আমার বাবা আনোয়ার হোসেন মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা ২ ভাই ও ৫ বোন মায়ের সঙ্গে থেকে সংসারে মাকে সহযোগিতা করতাম।স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম জানান, ৮ বছর আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ আর নিজের গয়না বেঁচে কিনেছিলেন কয়েকটি গরু। সেই গরুর দুধ বেচা টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি দেয়াসহ ভালোই চলছিল পিয়ারা বেগমের সংসার। কিন্তু সেই গরুগুলো চুরি হয়ে যাওয়ায় তছনছ হয়ে গেছে ওই নারীর সংসার।জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে এবং গরুগুলো উদ্ধারে কাজ করছে।