অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজগুলো পথাচারী পারাপারে কোন কাজে আসছেনা ?
মতিয়ার চৌধুরী
সত্যবাণী
লন্ডনঃ বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সড়ক-মহাসড়ক বা বড় বড় শহর গুলোতে ব্যস্ত রাস্তা সহজে পারাপারে জন্য তৈরী করা হয় ‘‘ফুটওভার ব্রিজ‘‘ বা পথাচারী পারাপার সেতু। যা ব্যবহার করে সাধারন পথাচারীরা নিরাপদে রাস্তা ক্রস করতে পারেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই চোঁখ জুড়ানো অসংখ্য ফুটওভার ব্রিজ দেখা যায়। আমাদের দেশেও রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বড় বড় শহর ও নগরীতে তৈরী করা হয়েছে অসংখ্য ‘‘ফুটওভার ব্রিজ‘‘। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং সিলেট নগরী সহ দেশের প্রতিটি শহরেই ফুটওভার ব্রিজ দেখা যায়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজগুলো জনসাধারনের কোন কাজেই আসছেনা।
বরং এসব পথাচারী পারাপার সেতুগুলি মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছ। নাগরিকদের টেক্সের অর্থে নির্মিত এসব পথাচারী পারাপার সেতুসমূহ কেউ ব্যবহার করেনা, সেতু ব্যবহার না করে দ্রুত রাস্তা ক্রস করতে গিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে অসংখ্য দুর্ঘটনা। এসবের জন্য দায়ী কে এই প্রশ্ন অনেকের? কেউ কেউ দায়ী করেন সংশ্লিষ্ট নগর কর্তৃপক্ষকে আর কেউবা দায়ি করেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে। আমি যদি বলি এসবের জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট ডিজাইন কারক বা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা এতে একটুও ভূল হবেনা। আমাদের দেশের বহু ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন যারা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে নির্মান কাজের নক্সা তৈরী করেন তারা একবারও চিন্তা করেননা দেশের কথা। ব্রিটেন আমেরিকা বা বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশে এসব পথাচারী সেতু নির্মান করার আগে চিন্তা করা হয় শারিরিক ভাবে অক্ষম, বয়স্ক এবং ডিজএ্যবল ব্যক্তিদের কথা। এসব মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয় । বাংলাদেশে তৈরীকৃত ফুটওভার ব্রিজগুলোতে বয়স্ক ব্যাক্তি বা যারা লাটির সাহায্যে চলা ফেরা করেন, বা হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী রয়েছেন তারা এসব পথাচারী সেতু ব্যবহার করতে পারেননা। লিখতে বসে একটি সিলেটী প্রবাদ বাক্য মনে পড়ে গেল- ‘‘এক গতেদি দিলাম ধুমা আরেক গাতেদি যায়-যার লাগি দিলাম ধুমা তারে মশায় খায়‘‘। ঢাকা এবং সিলেটে আমি দেখেছি বয়স্ক, হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী এবং পুসচেয়ারে শিশুদের বসিয়ে কোন মা তার শিশু সন্তান নিয়ে ফুটওভার ব্রিজে উঠতে পারেন না। তাহলে এসব কার স্বার্থে করা হচ্ছে কোন উত্তর পাওয়া যাবেনা। জনস্বার্থে বা উন্নয়ন কাজে বর্তমান সরকারের আন্তরিকাতার কোন কমতি নেই, উন্নয়ন কাজে প্রজেক্ট সাবমিট করার সাথে সাথেই পাওয়া যায় বরাদ্ধ। তাহলে কেন উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়? ঢাকার ফুটওভার ব্রিজগুলো এক একটি মরণ ফাঁদ। একটু বৃষ্টি হলেই ফুটওভার ব্রিজের ষ্টেয়ার বা সিড়ি গুলোতে পা রাখার উপায় নেই, পিচলে পড়তে হয়। বিদেশের মত একটু চিন্তা করে ডিজাইন করলেই হয়। এতে যেমন কমবে অপচয়, হবে সকলের ব্যবহার উপযোগী।
ব্রিটেনের ফুটওভার ব্রিজগুলো সিড়ি না দিয়ে ষ্ঠীলের পাতের উপর স্লোপ করে হালকা ঢালাই দিয়ে তৈরী করা হয়। যার মাধ্যমে সহজে শারিরিক ভাবে অক্ষম ও হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী সহ সকলে ব্যবহার করতে পারেন পার হওয়া যায় বাইসাইকেল নিয়েও। এই লিখার সাথে বাংলাদেশ এবং লন্ডনের তিনটি ফুট ওভার ব্রিজের চিত্র তুলে ধরা হলো। আমার বিশ্বাস আমাদের ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা সকলের ব্যবহার উপযোগী এবং জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে জিজাইন করবেন। এতে উপকৃত হবে পথাচারী বাঁচবে দেশের অর্থ। এসব স্লোপ ডিজানের ফুটওভার ব্রিজ তৈরীতে খরচ অনেক কম এবং টেকসই। দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ফুটওভার ব্রিজ তৈরী করা হয়েছে সেগুলোর ষ্টেয়ার অপসারন করে স্পোল করলে সবার জন্য হবে ব্যবহার উপযোগী। এতে সামান্য খরচ করা হলেও জনসাধারণের উপকারে আসবে। আর নতুন করে তৈরী করতে হলে এই ধারনাটি মাথায় রেখে ডিজাইন করলে বাঁচবে রাষ্টের অর্থ কষ্ট লাঘব হবে সকলের। চলমান রয়েছে সিলেট এবং রংপুর বিভাগে জাতীয় মহাসড়ক গুলোকে ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ। এসব মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ফুট ওভারব্রীজ তৈরী করা হবে। এসব যেমন ব্যবহার করবেন বয়স্ক, শারিকর ভাবে অক্ষম, কৃষক, শ্রমিক ছাত্র জনতা সকলে। গ্রামের সাধারণ মানুষ যাতে তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে পারাপার করতে পারে বিষয়টি মাথায় রাখবেন জিজাইন কারকরা।
অন্যদিকে এয়ার পোর্ট টু গাজীপুর বিআরটি লাইনের কাজ চলছে এই সড়কে বিআরটি বাসের জন্য রাস্তার মাঝখানে তৈরী করা হচ্ছে ২৫টি ষ্টেশন। এই রাস্তায় বেশ কয়েকটি ফুট ওভারব্রিজ তৈরী করা হচ্ছে পাশাপাশি ষ্টেশন গুলোতে বসানো হচ্ছে চলন্ত সিড়ি। এসব চলন্ত সিড়ি প্রতিমাসে কম হলেও তিনবার যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে বন্ধ থাকবে। ষ্টেশন গুলোতে চলন্ত সিড়ি না দিয়ে তৈরী করা হউক স্লোপ ডিজাইনের ফুটওভার ব্রিজ। এতে সাধারন মানুষের টেক্সের টাকা যেমন সাস্রয়ী হবে পোহাতে হবেনা বাড়তি ঝামেলা। আমার বিশ্বাস যথাযত কর্তৃপক্ষ সহ নগর পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।