অবিলম্বে চুক্তি সম্পাদন করে চা শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরির দাবি

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ অবিলম্বে ২০২১-২২ সালের চুক্তি সম্পাদন করে চা শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ৩০০ টাকা পূনঃনির্ধারণের দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সিলেটের প্রগতিশীল শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।শনিবার সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা আহবায়ক আবু জাফর, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন জেলা সভাপতি সিকান্দর আলী, জাতীয় শ্রমিক জোট জেলা আহবায়ক কে. এ. কিবরিয়া, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের জেলা সংগঠক খায়রুল হাছান, জাতীয় শ্রমিক জোট মহানগর আহবায়ক গিয়াস আহমদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন জেলা আহবায়ক মোখলেসুর রহমান, গণতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলন জেলা আহবায়ক মহিতোষ দেব মলয়, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা যুগ্ম-আহবায়ক প্রণব জ্যোতি পাল, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী আলফাজ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ২ বছর পর চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন হয়। এই চুক্তি নিয়ে সবসময় মালিকপক্ষ টালবাহানা করে। দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থাকাকালীন সময়ে প্রায় ৩ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হবার পর অনেক ছলচাতুরির মাধ্যমে মজুরি মাত্র ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সেই ২০১৯-২০ সালের চুক্তির মেয়াদও শেষ হয় ১৭ মাস আগে। এই ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ এ চুক্তির কোন উদ্যোগ নেয়নি মালিকপক্ষ। চুক্তি দেরিতে হলে স্থায়ী শ্রমিক এরিয়ার বিল পেলেও অস্থায়ী শ্রমিক তা পায়নি। ২০২১ সালে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক গেজেট করে এই মেয়াদসীমা ৩ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনকে সাথে নিয়ে এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। ফলে সে সময় তা বাস্তবায়ন হয়নি। এভাবে সময়ক্ষেপন করে শ্রমিক ঠকানো অব্যাহত রয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকেই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে চা শ্রমিকরা।

চা শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি দাবি করছে ৩০০ টাকা। বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। সব সেক্টরের শ্রমিকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। চা বাগানের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে অবস্থা আরো অমানবিক ও নাজুক। চলমান বাজারের সাথে চা শ্রমিকদের এই মজুরি গ্রহণযোগ্য তো নয়ই, বরং অযৌক্তিক ও অন্যায়। শ্রমিকদের দাবি ৩০০ টাকা সমর্থন করে আমাদের সংগঠন সমুহের পক্ষ থেকে আমরা তা ৫০০ টাকা করার দাবি জানাচ্ছি। কারণ আমরা বিভিন্ন সময় বলেছি, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে শ্রমিক পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ, জীবনযাত্রার খরচ, চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষা, পোশাকসহ আনুসাঙ্গিক খরচ ইত্যাদি বিচার-বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হিসেব করে দেখিয়েছে ৫ সদস্যের একটি পরিবারের ন্যূনতম খাবারের জন্য ৬২৫ টাকা দরকার হয়, যা বর্তমান জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আরো বেড়েছে। চা বাগানের সার্বিক দিক বিবেচনা করলে একটি পরিবার ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি ছাড়া ন্যূনতম মানবিক জীবন-যাপন করতে পারে না। তাই বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে চা শ্রমিকদের ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি দাবির আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক। কিন্তু মালিকপক্ষ বিভিন্ন গোজামিল ও ফাঁকির হিসাব দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করছে।নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা চা শ্রমিকদের এই আন্দোলন আপোষহীন মানসিকতায় শক্তিশালী করার আহবান জানাই এবং তাদের এই দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবিলম্বে ২০২১-২০২২ সালের চুক্তি সম্পাদন করে চা শ্রমিকদের আন্দোলনের দাবী মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

You might also like