অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার বিচার দাবীতে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ শিক্ষা, সংস্কৃতি-মনুষ্যত্ব রক্ষায় রুখো সাম্প্রদাযিক সন্ত্রাস” সারাদেশব্যাপী অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা ও নড়াইলসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা প্রতিমা ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ সাম্প্রদায়িক এসব ধারাবাহিক সুপরিকল্পিত হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবীতে সুনামগঞ্জে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠি জেলা সংসদ ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে শহরের আলফাত উদ্দিন স্কয়ার( ট্রাফিক পয়েন্টে ) ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি গৌরী ভট্রাচার্য্যর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠি জেলা সংসদের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে এ সময় বক্তব্য রাখেন, জেলা উদীচীর সহ-সভাপতি রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষসহ সভাপতি সঞ্চিতা চৌধুরী, বাংলাদেশ কমিউনিষ্টপার্টি সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এড. এনাম আহমেদ, জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের মিয়া, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আসাদ মণি প্রমুখ।
সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্রাচার্য্য ও জেলা সিপিবির সভাপতি এড. এনাম আহমেদ বলেছেন, বাঙ্গালীর বিবেকের জায়গা থেকে আমরা কথা বলতে চাই সেই তিস্তা নদী, এস এম সুলতানের মাটি নড়াইলকে বিশ্ববাসী জানতো অন্য একরকম ভাবে। কিন্ত আজ এস এম সুলতানের জন্মস্থান ও সংস্কৃতি এবং সম্প্রীতির উর্বরভূমি নড়াইলে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের উপর হামলা, জুতার মালা পড়িয়ে হত্যা করা, হিন্দু সম্প্রদায়ের একাধিক বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং যৌন নিপীড়নের মতো বিভৎস্রতার কথা আজ বিশ্ববাসী জানছে আরেক রকমভাবে। তারা বলেন সাম্প্রতিক স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিভাগ সিলেট সুনামগঞ্জের মানুষজন যখন বন্যা কবলিত, মানুষ যখন জীবন জীবিকার পাশাপাশি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যুদ্ধ করছেন ঠিক তখন সমাজের একটা শ্রেণীর কিছু মানুষ নামের নরপশু ঝাপিঁয়ে পড়ল দেশের নড়াইলসহ বিভিন্নস্থানে সাম্প্রদাযিক সম্প্রীতির বাংলাদেশে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের উপর হামলা, হত্যা, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলে প্রেরণ, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলাসহ অগ্নিসংযোগের মতো জঘন্য ঘটনার জন্ম দেয়া হলো। ১৯৭১ সালে পাকিস্থান সরকারের শাসন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহবানে স্বাধীন ভূখন্ডের একটি লাল সবুজের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন সাড়ে সাতকোটি মানুষ যাদের পরিচয় ছিল সবাই বাঙ্গালী তারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে অংশগ্রহন করেছিলেন। ঐ সময়টাতে ত্রিশ লক্ষ শহীদ জীবন আত্মহুতি দিয়ে দু”লাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশটিতে আজ একের পর সাম্প্রদায়িক সহিংস্রতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। তারা বলেন কাদের ইশারায় কার ইন্দনে শিক্ষকদের উপর হামলা, হিন্দু পল্লীতে বাড়িঘরে হামলা অগ্নিসংযোগ হচ্ছে তা কি সরকারের নজরে আসেনি। কেন স্বাধীনতার ৫০টি বছর ধরেই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিগুলো হামলা করে আসলেও একটির বিচার কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আজ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা এই বাঙ্গালী জাতিকে দেখতে হতো না। তারা বলেন দুইশত বছর পূর্বে বিট্রিশদের উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে শাসকদের হঠানোর জন্য তখনকার সময়টাতে আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী কোন মানুষের ধর্মের পরিচয় ছিল না, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে কোন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠির পরিচয় ছিল না আমাদের একটাই পরিচয় ছিল আমাদের একটাই সত্বা ছিল আমরা বাঙ্গালী জাতি । আমরা এখনো ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে এই দেশটিতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সবাই মিলেমিশে বসবাস করে আসছি। কিন্ত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিগুলো ক্রমশ তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মের অবমাননার অজুহাতে সুপরিকল্পিত সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, ফলে এসব হামলায় মনে পড়ে গেল কোথায় ছিল আমাদের ৭১ এর মুৃক্তিযুদ্ধের চেতনা যেখানে নারীপূরুষ হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সমগ্র জনগোষ্টি আমাদের পরিচয় ছিল আমরা বাঙ্গালী। কিন্ত বেশকিছু বছর আগে নারায়নগঞ্জে রাজনৈতিক পরিবারের সুযোগ্য সন্তান দ্বারা এক শিক্ষককে লাঞ্চিত করার মধ্যে দিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা ঘটনার ধারাবাহিকতা শুরু হলো এবং তা আজ ব্যাপক আকার ধারন করেই চলেছে। তখন যদি শিক্ষক হামলাকারী ঐ রাজনৈতিক নেতার বিচার হতো তাহলে এমন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পূর্নরাবৃত্তি হতো না আজ পুরো জাতি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হতো ।
তারা বলেন পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পরপরই সেতুতে একটি নাট কে খুলে নিয়েছিলেন সেটা সরকার জানতেন বলেই তাকে গ্রেপ্তার করে ৫দিনে রিমান্ডে নিয়ে তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। অথচ দেশে সাম্প্রদায়িক এতসব হামলার ঘটনা চলমান থাকলেও সরকার এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর সদ্যদের হাতে কি সাম্প্রদায়িক হামলায় ঘটনায় কে বা কারা জড়িত কারা এসব হামলাগুলো ঘটিয়ে যাচ্ছে এসব তথ্য কি সরকারের হাতে আছে, থাকলে ও তাদের বিচার কার্য কেন হচ্ছে না এমন প্রশ্ন মানববন্ধনকারীদের। সাম্প্রতিক সময়ে মানুষগড়ার কারিগর হিসেবে দেশের বিভিন্নস্থানে শিক্ষকদের উপর হামলা মামলা, জুতার মালা পড়ানো হত্যা সহ নড়াইলসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার ইন্দনদাতাসহ যারাই ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদানের জন্য সরকেোরর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবী জানান। অন্যতায় আগামী কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ও হুশিয়ারী উচ্চারন করেন মানববন্ধনকারীরা।