অর্ধশত বছরে বাংলাদেশ: লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ৯ মাসব্যাপী কর্মসূচী

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী 

লন্ডন: স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অর্ধশত বছরপূর্তীতে নয় মাসব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করেছে লন্ডনের বাঙালী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারা।

১৬ মার্চ, মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বারার নির্বাহী মেয়র জন বিগস কাউন্সিলের উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দেন। সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমও বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ হাইকমিশন কাউন্সিলের এসব কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা এবং পরামর্শ প্রদান করবে। 

মেয়র জন বিগস আগামী ২৬ মার্চ বাঙ্গালীদের প্রাণকেন্দ্র আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারের পাদদেশে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমকে নিয়ে প্রতিকীভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ৯ মাসব্যাপী এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

বাংলাদেশের জন্মকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই ৯ মাসের মধ্যেই উদ্বোধন করা হবে পূর্ব লন্ডনে বর্ণবাদী হামলায় নিহত আলতাব আলীর নামে একটি কাউন্সিল ভবন। আলতাব আলীর আবাসস্থল ওয়াপিংয়ে এই ভবনটি নির্মান করা হচ্ছে।

মেয়র ঘোষিত ৯ মাস ব্যাপী অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটসে অবস্থিত ইংল্যান্ডের ফাইন্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট ক্যানেরী ওয়ার্ফের সদর দফতর বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকার রঙ্গে আলোকসজ্জিত করা। আগামী ২৯ মার্চ রাত ৭টায় এটি করা হবে। করোনা ভাইরাসের কারনে এই ভবনের কাছে জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকবে। ইংল্যান্ডসহ সারা বিশ্বের মানুষ লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে সরাসরি এই লাইটিং এর দৃশ্য দেখতে পাবেন।

কর্মসূচীর মধ্যে আরও রয়েছে, পর্যায় ক্রমে টাওয়ার হ্যামলেটসের বিভিন্ন সরকারী ভবন একইভাবে বাংলা অক্ষর এবং পতাকার রঙ্গে লাইটিং করা হবে, বাঙ্গালীদের প্রাণকেন্দ্র বাংলাটাউনের গেইট সংস্কার এবং আলোকসজ্জা, অসবর্ন স্ট্রিটের নাম পরিবর্তন করা, হোয়াইচ্যাপেল আইডিয়া স্টোরে বাংলায় লেখা পাবলিক আর্টের প্রদর্শনী,  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে অংকিত চিত্র প্রদর্শনী, 

স্বাধীনতা যুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কাউন্সিলের বিভিন্ন চিঠি পত্রে লাল সবুজ রঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছরপূর্তীর বিশেষ লগো ব্যবহার। 

২৬ মার্চ চালু করা হবে কাউন্সিলের উদ্যোগে বিশেষ ওয়েবসাইট। এতে ৯ মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির নিয়মিত ঘোষনা, আপডেট দেয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সাপ্তাাহিক জনমতে প্রকাশিত ছবি ও খবরাখবরের প্রদর্শনীও থাকবে কর্মসূচীতে।  

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকায় প্রাথমিক দিকে বিভিন্ন কর্মসূচী হবে সম্মানসূচক। অনলাইন এবং সোশাল মিডিয়াকে টার্গেট করে সাজানো হয়েছে অনেক অনুষ্ঠান। লকডাউন শিথিল হলে পরিস্থিতি বিবেচনায় পাবলিক ইভেন্টের আয়োজন করা হবে।

মেয়র বলেন, বাংলাদেশের এই বিশেষ সময়কে স্মরনীয় করে রাখার জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনাই ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারনে আমাদের মেলামেশা যেমন সংকুচিত হয়েছে তেমনি আমরা ব্যাপক আর্থিক চাপের মধ্যে রয়েছি। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক মুহুর্তকে স্মরনীয় করে রাখার।

তিনি বলেন, ৯ মাস ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনকালে আমরা সবার পরামর্শ গ্রহন করবো। মেয়র জানান বাংলাদেশের জন্মের সাথে ব্রিটেন তথা টাওয়ার হ্যামলেটসের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এখানকার প্রবাসী বাঙ্গালীরা নানাভাবে এই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। তাই বাংলাদেশের ৫০ বছরপূর্তি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ন একটি ঘটনা। মেয়র এদেশে বেড়ে উঠা বাঙ্গালীদের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরার উপরও গুরুত্বারোপ করেন। কাউন্সিলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে জানান।

হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে টাওয়ার হ্যামলেটসের উদযাপন কর্মসূচিতে হাইকমিশনকে সম্পৃক্ত কয়ায় এবং ৯ মাস ব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেয়ায় সংবাদ সম্মেলনে মেয়রকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ৫০ বছর আমাদের জাতীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন মাইলস্টোন।

এছাড়া এবছরই বাংলাদেশ এবং ইউকের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কেরও ৫০ বছর হয়েছে। আমরা অবশ্যই ৯ মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে কাউন্সিলকে সকল ধরনের সহযোগিতা এবং পরামর্শ প্রদান করবো। তিনি বলেন, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু যেমন টাওয়ার হ্যামলেটসে মিটিং মিছিল করেছেন, তেমনি এখানকার প্রবাসীরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য টাওয়ার হ্যামলেটস আমাদের কাছে সবসময়ই একটি বিশেষ স্থান। 

তিনি বলেন, ২৬ মার্চ মেয়রের সাথে আলতাব আলী পার্কে আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য আমি গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। হাইকমিশনার কাউন্সিলের উদযাপন কর্মসূচিতে এদেশের সকলকে সম্পৃক্ত করার জন্যও বিশেষ অনুরুধ করেন।

কাউন্সিলের কেবিনেট মেম্বার ফর কালচার, আর্টস এবং ব্রেক্সিট কাউন্সিলার সাবিনা আক্তার বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে ব্রিটিশ বাঙ্গালীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন স্থান। একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী হিসাবে বাংলাদেশের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপনে অংশ নিতে পেরে আমি গর্বিত। আমি গভীর আগ্রহে এসব কর্মসূচি পালনের জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি এসব কর্মসূচি পালনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

You might also like