অল ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়্যার
দিলীপ মজুমদার
পশ্চিমবঙ্গে শাসকদলের সঙ্গে বিজেপির তরজা এখন তুঙ্গে । তৃণমূল থেকে ভোটের আগে যাঁরা গিয়েছিলেন,তাঁদের অনেকে আবার তৃণমূলে ফিরতে আগ্রহী।এদিকে পরাজয়ের জ্বালা ভুলতে পারছেন না বিজেপি নেতৃত্ব।তাঁরা আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অজুহাতে রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন লাগু করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ।এ রকম রাজনৈতিক তরজার মধ্যে নজর কেড়েছে একটি প্রেম কাহিনি।শোভন-বৈশাখীর প্রেম কাহিনি।হেজি-পেজি লোক নন শোভন চ্যাটার্জী।কলকাতার মেয়র ছিলেন । মন্ত্রী ছিলেন।দেখতেন একাধিক দপ্তর ।মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিশেষ পেয়ারের লোক ছিলেন।মমতা আদর করে তাঁকে ডাকতেন ‘কানন’ বলে।তাঁর স্ত্রী রত্না।একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে তাঁর । অন্যদিকে বৈশাখী ব্যানার্জী ছিলেন অধ্যাপিকা।বিবাহিতা।অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল তাঁর স্বামী । একটি মেয়েও আছে তাঁর ।
কি ছিল বিধাতার মনে, শোভন মজলেন বৈশাখীতে । স্ত্রীর পরকীয়াতে আসক্তি ও অত্যাচারের জন্যই নাকি শোভন বিক্ষুব্ধ হয়ে গৃহত্যাগ করলেন, উঠলেন গোলপার্কের এক ফ্ল্যাটে । ত্যাগ করলেন মন্ত্রীত্ব, ত্যাগ করলেন তৃণমূল দল । নিশ্চয়ই শক্তি জোগাল প্রেম । প্রেমের কত লীলা ! বিজেপিতে গেলেন শোভন । দিল্লি গিয়ে পদ্মফুলশোভিত পতাকা ধরলেন । সঙ্গে সেই বৈশাখী । কিন্তু নতুন দলে বৈশাখীকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগে বিক্ষুব্ধ হতে লাগলেন শোভন চ্যাটার্জী । নির্বাচনে তাঁকে মনোমত আসন না দেওয়ায় বিক্ষোভ বাড়তে লাগল ।নির্বাচনের পরে ত্যাগ করলেন বিজেপি । মূলত প্রেমের জন্য । তারপরে নারদ কাণ্ডে গ্রেপ্তার করা হল তাঁকে । রাখা হল জেল হেফাজতে । সেখানে রাতের বেলায় কেঁদে-কেটে, দরজা ধাক্কিয়ে, নির্ভেজাল প্রেমিকার মতো তাঁর ভূমিকা পালন করলেন বৈশাখী । জেল থেকে পিজি হাসপাতাল । শোভনের স্ত্রী ও ছেলে সেখানে গেলে শোভন তাঁদের বের করে দিতে নির্দেশ দিলেন ।তাঁর দেখভাল করার অধিকার শুধু দুঃসময়ের বন্ধু বৈশাখীর । তখনও পর্যন্ত ‘বন্ধু’ । সাধারণ মানুষ ব্যাপারটাকে ‘কেচ্ছা’ মনে করছে, মিডিয়ায় নানা কথা বলা হচ্ছে । শোভন-বৈশাখীর ভ্রূক্ষেপ নেই ।
অল ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়্যার । আসরে নামলেন বৈশাখীর স্বামী । শোভন-বৈশাখীর বন্ধুত্ব তাঁর কাছে দোষের নয় । পরকীয়ার পক্ষেও তিনি প্রকারান্তরে । বলিষ্ঠ তাঁর কণ্ঠ । উদারচিত্ত এই মানুষটিকে নমস্কার । যদিও শোভনপত্নীর ভাষায় মনোজিৎ মণ্ডল ‘হানি ট্র্যাপের’ কারিগর ।তারপর একদিন আমরা দেখলাম বৈশাখীর ফেসবুক পেজ হল ‘ শোভন বৈশাখী ব্যানার্জী’ । বৈশাখী জানিয়ে দিলেন ‘আমি’ থেকে ‘আমরায়’ পরিবর্তনের কথা । শোভন তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দিয়ে দিলেন বৈশাখীকে । কেননা তাঁর দুঃখের বরষায় এই বন্ধুর রথ তো তাঁর দুয়ারপথে এসে থেমেছিল ।এসব ঘটনায় অনেকেই ছি ছি করছেন । তাঁরা রক্ষণশীল।তাঁরা জানেন না প্রেমের মাহাত্ম্য । তাঁরা উপলব্ধি করতে পারছেন না শোভনের মহান ত্যাগের কথা।পদ ত্যাগ, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ত্যাগ, মন্ত্রীত্ব ত্যাগ, দল ত্যাগ, শেষ পর্ষন্ত বিষয়-আশয় ত্যাগ।ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ । উপনিষদের সেই বাণী । ত্যাগ বৈশাখীরও।অধ্যাপনা ত্যাগ, স্বামী-কন্যা ত্যাগ । মনে পড়ে যায় শ্রীরাধার কথা । তিনিও সমাজ-সংসার ত্যাগ করেছিলেন পরকীয়ার জন্য । বলেছিলেন :তোমার লাগিয়া কলঙ্কের হার গলায় পরিতে সুখ।ধন্য প্রেম !ধন্য শোভন-বৈশাখী জুটি।
লেখক: কলামিষ্ট, ফেলোশীপ প্রাপ্ত গবেষক, সত্যবাণীর কন্ট্রিবিউটিং কলামিষ্ট।