অসম্পূর্ণ স্পিডব্রেকারের কারণে প্রাণহানি বাড়ছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ মৌলভীবাজার সদরের ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের জগন্নাথপুরে অসম্পূর্ণ একটি স্পিডব্রেকারের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) স্পিডব্রেকারটি ২ মাস ধরে অসম্পূর্ণ রাখায় এবং রঙ না দেয়ায় বাড়ছে আরও দুর্ঘটনার শঙ্কা।
মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা জানান,গত ১১ জানুয়ারি অসম্পূর্ণ স্পিডব্রেকার পারাপারের সময় চালক দেখতে না পাওয়ায় রডবাহী ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-৪৩-০০৫৪) স্টিয়ারিং বিকল হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের নির্মাণাধীন ভবনের সামনের অংশ। ভেঙে যায় বিদ্যুৎপরিবাহী থাকা পল্লী বিদ্যুতের একটি খুঁটিও। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত খুঁটিটি অপসারণ করে। পরে নতুন খুঁটি স্থাপন করে দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ।
মধ্যরাতের এ ঘটনায় কোনো হতাহত না হলেও ট্রাকটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ৬দিন পর ১৭ জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে প্রাইভেটকারের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রাইভেটকারটির সামনের অংশ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান ওই প্রাইভেটকারের ৪ যাত্রী।
ওই দু’টি ঘটনারই মূল কারণ স্পিডব্রেকারে রঙ না থাকা। কেননা, রঙ না থাকায় চলতি পথে চালক দেখতে পান না স্পিডব্রেকার। এছাড়া রাতে ঘন কুয়াশা থাকে। এসব ঘটনা ছাড়াও সামনে আরও বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা স্থানীয়দের মধ্যে।
এছাড়াও স্পিডব্রেকার পারাপারের সময় যানবাহনগুলো ধাক্কা খেয়ে বিকট শব্দ হয়। এতে গাড়ির নাট-বল্টু খুলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। রাতে প্রায়ই গাড়ির বিকট শব্দে আশপাশের বাড়িঘরের লোকজনের মধ্যেও তৈরি হয় আতঙ্ক।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সওজ স্পিডবেকারটি স্থাপন করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল দুর্ঘটনা রোধসহ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু এখন এটি ২ মাস ধরে অসম্পূর্ণ থাকায় দুর্ঘটনা রোধের বিপরীতে বেড়ে চলেছে আরো দুর্ঘটনা।
ওই এলাকার বাসিন্দা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, স্পিডব্রেকার দেয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু এটা অসম্পূর্ণ থাকায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। তিনি বলেন, আমি নিজেও তাদের অফিসে গিয়ে বিষয়টি জানিয়ে এসেছি, তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু ৩ দিন পার হলেও সমাধান হয়নি। এটা নিশ্চয়ই তাদের অবহেলা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ নভেম্বর এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা জহুরা বিউটি সিলেট-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের ওই স্থানে একটি স্পিডব্রেকার স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে মৌলভীবাজার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনের দু’দিন পরই সওজ সেখানে স্পিডব্রেকার স্থাপন করে। কিন্তু ২ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় রঙ দিয়ে মার্কিং করা হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা জহুরা বিউটি বলেন, আবেদনের পর দ্রুত স্পিডব্রেকার স্থাপন করে দেয় সওজ। তবে রঙ না দেয়ায় এখানে আবারও দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি ফোনে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ২ মাস ধরে পদক্ষেপ না নেয়াটা দুঃখজনক।
এদিকে, দুর্ঘটনাসহ বিষয়টি নিয়ে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ একাধিক কর্মকর্তাকে বারবার জানালেও নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
মৌলভীবাজার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে, রোদ না থাকায় স্পিডব্রেকারে রঙ দেয়া যাচ্ছে না। শিগগিরই সেখানে রঙ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

You might also like