অসামাজিক কার্যকলাপ দেখে ফেলায় দেবরপুত্র হত্যাঃ চাচির যাবজ্জীবন

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় চাচির অসামাজিক কার্যকলাপ দেখে ফেলায় দেবরের শিশুপুত্রকে হত্যা করে গুমের দায়ে সেই চাচিকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে খুনী চাচিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। রায়ে পেনাল কোডের আরেকটি ধারায় তাকে ৭ বছরের কারাদ-, ১ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। উভয় সাজা একত্রে চলার নির্দেশ দেন বিচারক। ২৮ মে রোববার সিলেটের সিনিয়র দায়রা জজ মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন।দ-প্রাপ্ত সুরমা বেগম (৪১) সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার উত্তর আকাখাজানা গ্রামের রুনু মিয়ার স্ত্রী। আর হত্যার শিকার ৩ বছরের সায়েল আহমদ তার দেবরের ছেলে। এই মামলায় অপর ২ আসামি নাহিদুল ইসলাম ইব্রাহিম ও রুনু মিয়াকে খালাস দেয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৭ জুন ভোরে মামলার বাদী বিয়ানীবাজার উপজেলার উত্তর আকাখাজানা গ্রামের খসরু মিয়ার ৫ বছর বয়সী শিশুপুত্র আরিফ আহমদ ও সাড়ে ৩ বছর বয়সী সায়েল আহমদ আম কুড়াতে যায়। একপর্যায়ে চাচি সুরমা বেগমের অসামাজিক কার্যকলাপ দেখে সবার কাছে প্রকাশ করার কথা বলে দেবরের ছেলে শিশু সায়েল আহমদ। প্রমাণ না রাখতে শিশুটিকে হত্যার পর মরদেহ গুম করতে ঘরের বাথরুমে প্লাস্টিকের ড্রামে কম্বল দিয়ে মোড়ে রেখে দেন সুরমা।

ওইদিন সকাল ৭টার দিকে আরিফ ফিরলেও সায়েল ঘরে না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। পুকুরে জাল ফেলেও না পাওয়ায় সুরমা বেগমকে সাহেলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তার কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হয়। একপর্যায়ে সুরমা বেগমের ঘরের বাথরুমের প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় সাহেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ সুরমা বেগমকে আটক করে।জিজ্ঞাসাবাদে সুরমা বেগম পুলিশকে জানান, অসামাজিক কার্যকলাপ দেখে সবার কাছে বলে দেয়ার কথা বলায় ভয়ে তিনি দেবরের ছেলে সায়েল আহমদকে হত্যা করেন এবং পরে মরদেহ ঘরের বাথরুমে প্লাস্টিকের ড্রামে কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে রাখেন।এ ঘটনায় শিশুটির বাবা খসরু মিয়া ২০২০ সালের ৮ জুন সুরমা বেগম, তার পরকীয়া প্রেমিক নাহিদুল ইসলাম ইব্রাহিম ও স্বামী রুনু মিয়াকে আসামি করে হত্যা ও গুমের মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ৩ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ২০২২ সালের ২৭ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানি এবং ১৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রোববার বিচারক রায়ে সুরমা বেগমকে দ-িত করেন।সুরমার পরকীয়া প্রেমিক বিয়ানীবাজারের চারখাই গ্রামের কামাল মিয়ার ছেলে নাহিদুল ইসলাম ওরফে ইব্রাহিম (২৯), আকাখাজানা গ্রামের রইছ আলীর ছেলে রুনু মিয়ার (স্বামী) অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মো. নিজাম উদ্দিন পিপি।

You might also like