আগামী কাল ছাতক পৌরসভা নির্বাচন: সুবিদায় ধানের শীষের প্রার্থী ন্যান্সি, কোন্দলে কোনটাসা নৌকার প্রার্থী কালাম চৌধুরী
শামীম আহমদ তালুকদার
সত্যবাণী
সুনামগঞ্জ থেকেঃ দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশে ৬০ পৌরসভায় কাল নির্বাচনী লড়াই। এ ধাপে সুনামগঞ্জ জেলায় সুনামগঞ্জ পৌরসভা, জগন্নাতপুর পৌরসভা ও ছাতক পৌরসভাসহ তিন পৌরসভা নির্বাচনে চলছে ভোট যুদ্ধ। জেলার মধ্যে সব চেয়ে আলোচিত শিল্পনগরী খ্যাত ছাতক পৌরসভা নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। বৃস্পতিবার রাত ৮টার থেকে সব ধরণের প্রচারিভাযান শেষ হয়েছে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে উপজেলা নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ভোট নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উৎকন্ঠা রয়েছে প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী (নৌকা) ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রাশেদা আহমদ ন্যান্সি (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এবার পৌরসভায় দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে।
তবে প্রিজাইডিং অফিসার হিসাবে দ্বায়িত্ব পালনের জন্য মনোনিত দুইজনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী রাশিদা আহমদ ন্যান্সী। বুধবার সন্ধ্যায় ছাতক পৌর শহরের কাস্টম রোড এলাকায় এক নির্বাচনী পথ সভায় তিনি পেপারমিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারাধন তালুকদার এবং ছাতক সরকারি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মইনুল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন। এর আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরও তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানা গেছে। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা টক অব দ্য টাউন। জানা যায়, আবুল কালাম চৌধুরী এর আগে টানা তিনবার মেয়র ছিলেন। চতুর্থ বারের মতো তিনি মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। রাশিদা আহমেদ ন্যান্সি প্রথমবারের মতো মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এর আগে ছাতক উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও ছাতক পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৩৩জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৩০হাজার ২৭৮ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পরুষ ভোটার রয়েছেন ১৫ হাজার ২৭১ ও নারী ভোটার রয়েছেন ১৫হাজার ৯জন। ১৯টি কেন্দ্রের ৭৭টি ভোট কক্ষে ছাতক পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ দিকে বিএনপি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রাশিদা আহমদ ন্যান্সি (ধানের শীষ) প্রতীককে বিজয়ী করতে দীর্ঘ দিনের আভ্যন্তরিন-দ্বন্ধ ভুলে এক মঞ্চে সাবেক সংসদ সদস্য, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান। তারা ছাতক পৌরবাসীকে নতুন স্বপ্ন ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাধারন ভোটারদের দোয়ারে দোয়ারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে আওয়ামীলীগে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সময় ধরে চলে আসা আভ্যন্তরিন কোন্দল ও দ্বীধা-বিভক্তির কারনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলয়ের নেতা-কর্মীদের এক মঞ্চে দেখা যায়নি। কিন্ত শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রিয় নেতাদের সাথে পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহিদ মজনুসহ অন্যান্য নেতারা নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তৃণমুল নেতাকর্মীদের ধারনা এ সব ছিল লোক দেখানো ফুল ঝড়ি।
আওয়ামীলীগে আভ্যন্তরিন কোন্দল নিরসন না হওয়াতে পারায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। স্থানীয় ভাবে প্রথম থেকে শেষ পযন্ত বিএনপির দু’বলয়ের নেতারা ঐক্য হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করছেন। কলিম উদ্দিন মিলন ছাতক-দোয়ারাবাজার আসন থেকে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়াও মিজানুর রহমান চৌধুরী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ অঞ্চলে বিএনপি’র বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। তৃণমুল বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধারনা সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রাশিদা আহমেদ ন্যান্সি (ধানের শীষ) প্রতীককের বিজয় হবে।
কিন্ত আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতাকর্মীরা দলীয় কোন্দল বিষয়ে একধরনের নিরব ভূমিকা পালন করছেন।
আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরী জানান, দেশ জুড়ে উন্নয়নের মহোৎসব চলছে। এর অংশ হিসেবে ছাতক পৌরসভায়ও উন্নয়ন চলমান রয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে এ পৌরসভা একটি আধুনিক পৌরসভায় রূপান্তরিত হবে। ১৬ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য সকল ভোটারদের প্রতি আহবান জানান তিনি। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রাশিদা আহমদ ন্যান্সি জানান, দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচনী মাঠে কাজ করে পৌরবাসীর সমর্থন আদায়ে চেষ্টা কাজ করেছেন। জনবান্ধব মেয়র হতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন।তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ধানের শীষ বিজয়ী হবে। এক যুগেরও অধিক সময় ধরে বর্তমান মেয়র পৌরবাসীকে শাসন করেছেন। এ পৌরসভায় ভাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, লাইটিং ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কোন ব্যবস্থা নেই। রাস্তঘাটের বেহাল অবস্থা। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা। ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে নিবাংচীত করে পৌরবাসীকে উন্নয়নের মুল ¯্রােতে নিয়ে আসার জন্য পৌরসভার সকল ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে জন্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বলেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ট ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব প্রস্ততি ইঅতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।