আগামী ৩ মাস ভ্যাকসিন রপ্তানির নিশ্চয়তা নেই: সেরাম
আন্তজার্তিক ডেস্ক
সত্যবাণী
ভারতঃ করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং ভ্যাকসিন ঘাটটির মধ্যে ভারত সরকার ‘ভ্যাকসিন মৈত্রীর’ আওতায় টিকা রপ্তানি স্থগিত করেছে।আগামী জুলাই পর্যন্ত এই অবস্থা থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনেওয়ালা।অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ উৎপাদন করে সেরাম।ভারত,বাংলাদেশসহ এশিয়া, ইউরোপ,আফ্রিকা,উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় কোভিশিল্ড টিকার ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেয়ার জন্য ‘কোভ্যাক্স’ কর্মসূচির আওতায় ২০ কোটি ডোজ কোভিশিল্ড নেবে সেরামের কাছ থেকে।বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের এই সিইও ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে আগামী দুই মাস তারা টিকা রপ্তানির কথা ভাবছেন না।
আগামী জুন-জুলাইয়ে তারা সম্ভাব্য স্বল্প পরিমাণ টিকা রপ্তানি শুরু করতে পারবেন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, এখন আমরা দেশের প্রয়োজন অগ্রাধিকার দিচ্ছি।ভারতে প্রতিদিন করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুই হাজার ২৩ জন। এটিই এখন পর্যন্ত দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। করোনায় এ পর্যন্ত ভারতে মারা গেছেন এক লাখ ৮২ হাজার ৫৫৩ জন। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৪১ জন। এটিই এখন পর্যন্ত দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত।আগামী ১ মে থেকে নতুন ধাপে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে ভারত সরকার। এই ধাপে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকেই টিকা দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে প্রতি মাসে দেশটির আরও ২০ লাখ ডোজ বেশি প্রয়োজন পড়বে। সিরামের জন্য সেই চাহিদা পূরণ বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রথমত, টিকা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভারত সরকারের কাছে তিন হাজার কোটি রুপি চেয়েছিলেন আদর পুনেওয়ালা। সেই অর্থ এখনও তার হাতে পৌঁছায়নি। এ বিষয়ে সিরাম প্রধান বলেন, আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেনেছি তিন হাজার কোটি রুপি মঞ্জুর হয়েছে। শিগগিরই এটি তাদের হাতে পৌঁছাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা অর্থের জন্য অপেক্ষা করিনি, উৎপাদন বাড়াতে ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করেছি।সিরামের সামনে বড় আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে টিকার কাঁচামাল রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। চলতি সপ্তাহে আদর পুনেওয়ালা টুইটের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও ঠিকঠাক সাড়া মেলেনি।সিরাম প্রধান বলেন, মার্কিন প্রশাসন মিডিয়ার মাধ্যমে সাড়া দিয়েছে। আমরা খবরে তাদের বলতে দেখেছি, তারা বিষয়টিতে অবগত এবং পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন। তারা বিষয়টি দেখছেন। কিন্তু এখনও কাঁচামাল রফতানি চালু হয়নি।তিনি জানান, এর কারণে ভারতে কোভিশিল্ডের উৎপাদন বা দামে কোনো প্রভাব পড়বে না। রাজ্যের কাছে কোভিশিল্ডের প্রতি ডোজ টিকা ৪০০ রুপি, প্রাইভেট হাসপাতালের কাছে ৬০০ রুপিতে বিক্রি করবেন; তবে কেন্দ্র প্রতি ডোজ টিকা পাবে ১৫০ রুপিতে।
তবে কোভোভ্যাক্সের ওপর দামের প্রভাব পড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে এটি ভারতের বাজারে ছাড়ার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত, কোভোভ্যাক্স হচ্ছে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি নোভাভ্যাক্সের আবিষ্কৃত করোনা টিকা, যা সিরামের কারখানায় উৎপাদিত হওয়ার কথা।কোভিশিল্ডের টিকা কেনার জন্য বাংলাদেশ সরকার গত ১৩ ডিসেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে।ওই চুক্তি অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে শুরু করে পরবর্তী ছয় মাসে ৫০ লাখ করে মোট তিন কোটি টিকা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।চুক্তির পর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে দু’টি চালানে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসাবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ।বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে রাশিয়া এবং চীন থেকে টিকা আনার চেষ্টা করছে সরকার।