আজও ক্ষতিপূরণ পায়নি বন বিভাগ মাগুরছড়া দুর্ঘটনার ২৬ বছর আজ

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া গ্যাস কূপ বিস্ফোরণের ২৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ১৪ জুন।১৯৯৭ সনের ১৪ জুন মধ্যরাত ১টায় উপজেলার মাগুরছড়া গ্যাসকূপে মার্কিন অক্সিডেন্টাল কোম্পানির ড্রিলিং চলাকালে ভয়াবহ বিষ্ফোরণে বন, পরিবেশ, রেল ও সড়কপথ, পান জুম, বিদ্যুৎ লাইনসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও বন ও পরিবেশের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও বন বিভাগ কোন ক্ষতিপুরণ পায়নি।কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, লাউয়াছড়া ফরেস্ট বিটের অভ্যন্তরে মাগুরছড়া এলাকায় ১৯৮৪-৮৬ ও ১৯৯৪ সালে দায়িত্ব পায় যুক্তরাষ্ট্রের তেল গ্যাস উত্তোলনকারী অক্সিডেন্টাল কোম্পানী। দায়িত্ব গ্রহণের পর অক্সিডেন্টাল গ্যাস ফিল্ডের ড্রিলিং কাজের জন্য সাবলিজ প্রদান করে ডিউটেক জার্মান কোম্পানীকে। ১৪ নম্বর ব্লকের মাগুরছড়াস্থ মৌলভীবাজার-১ গ্যাসকূপ খননকালে বিষ্ফোরণে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬৯৫ হেক্টর বনাঞ্চলের পরিবেশের জীববৈচিত্র, রেল ও সড়কপথ, ফুলবাড়ি চা বাগান, খাসিয়া পুঞ্জির বাড়িঘর ও পান জুম, পিডিবির ৩৩ হাজার বিদ্যূৎ লাইন।

পরোক্ষভাবে ২৮টি চা বাগানসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়া ২শ’ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে নষ্ট হয়, যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৫০ কোটি ডলার। দুর্ঘটনার দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাগুরছড়া ঘেঁষা লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ বনে শত বছর ধরে বৃক্ষ লতাগুল্ম বেড়ে উঠা বিচিত্র বহু বর্ণের বন্যঅর্কিড, পরগাছার নিবিড় সান্নিধ্যে মায়ামৃগ, ভাল্লুক, উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপড়া বানর, চিতাবাঘ, মথুরা, বুনোমুরগী, ধনেশ পাখী, অজগর, দাঁড়াশ, কেউটে, সুতানালী, ব্যাঙ, গিরকিট, তক্ষক, পেঁচাসহ আরো নাম না জানা হাজারো কীটপতঙ্গের একটি বৃহৎ অংশ।দূর্ঘটনার ২ বছরের মধ্যে ফুলবাড়ি চা বাগানের ক্ষতিগ্রস্ত টি প্ল্যান্টেশন এলাকার ক্ষতিপূরণ, খাসিয়া পুঞ্জির ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ২ কোটি ৫ লাখ টাকা দাবির মধ্যে ৫০ লাখ টাকা ও বাস মালিক সমিতিকে ২৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। ২০০৮ সালে মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়ায় শেভরন ত্রি-মাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ কাজ সম্পন্নকালে বিভিন্ন এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের ফলে লতা, গুল্ম, বহু উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ ও ছোট প্রাণী হারিয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত বড় বড় প্রাণীগুলোকে খাবার সংকটে ভুগতে হচ্ছে।

বন বিভাগের হিসাবমতে প্রত্যক্ষ ক্ষতি ৩২ দশমিক ৫৩ কোটি এবং অন্যান্য ক্ষতি মিলিয়ে ১৭৬ দশমিক ৯৭ কোটি টাকা। এই সময়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় পুরো হিসাব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬০৯ কোটি টাকা নিরূপন করে অক্সিডেন্টালের কাছে দাবি জানায়। দুর্ঘটনার সময়ে তৎকালীন আ’লীগ সরকারের খনিজ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার পর কমিটি ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করেছিল। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী অক্সিডেন্টালের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করা হয়।মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী জিডিসন প্রধান সুচিয়ান জানান, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে প্রাকৃতিক বনের যে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারবে না। যারা এই বনে বসবাস করছি তা বুঝতে পারছি। বন বিভাগ সূত্রমতে মাগুরছড়া দুর্ঘটনায় শুধু পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে ৬শ’ কোটি টাকা। ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে অক্সিডেন্টাল মাগুরছড়া গ্যাসকূপসহ তাদের ব্যবসা ইউনিকলের কাছে হস্তান্তর করে। ইউনিকল দায়িত্ব নেয়ার পর ক্ষতিপূরণ বিষয়ে টালবাহানা শুরু করে।লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম জানান, আমার জানামতো মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণে কোন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। বন ও পরিবেশের এই ক্ষতিপূরণ আদায় হওয়া আমাদেরও দাবি।

You might also like