আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিরোধপূর্ণ ভূমি জবরদখলের চেষ্টা
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
সিলেট: সিলেটে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে রাতের অন্ধকারে বিরোধপূর্ণ ভূমি জবরদখলে উদ্দেশ্যে মাটিভরাটের চেষ্টায় লিপ্ত বিবদমান পক্ষদ্বয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ৯ জানুয়ারি সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় এ ঘটনাটি ঘটে নগরির ২৯ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সুরমা থানার পিরোজপুর এলাকায়। সাথে সাথেই বিষয়টি দক্ষিণ সুরমা থানাকে অবহিত করা হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে দেখে দূর্বৃত্তরা তাৎক্ষণিক সটকে পড়ে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।মামলা সুত্রে জানা গেছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার পিরোজপুর মৌজায় এসএ-৭১ ও ৪৪০ নং খতিয়ানের ৭১৯ নং এবং ৭১৯/১১০৭নং দাগে মোট ৪০ শতক ভূমির মালিক স্থানীয় লাউয়াই নিবাসী আব্দুল লতিফ গং ৪ সহোদয় ভাই। ভাইদের মৃত্যুর পর মৌরশী সুত্রে তাদের উত্তরাধিকারীরা ভূমির মালিকানা প্রাপ্ত হন। এক পর্যায়ে মৃত আব্দুল লতিফের অংশ ১০ শতক রেখে দাগের বাকি ভূমি অংশীদারেরা বিক্রি করে দেন। কিন্তু মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে এবং তৎপরবর্তীতে ছেলের ঘরের উত্তরাধিকারীরা তাদের অংশের ভূমি যথারীতি শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ-ব্যবহার করতে থাকেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ৯টায় উপরোক্ত মৃত আব্দুল লতিফের ছোটভাই পিরোজপুর নিবাসী মৃত নামর মিয়ার ছেলে মৃত সামছুল হকের উত্তরাধিকারী শাহরিয়ার হক ও রাজেদুল হক এলাকার চিহ্নিত ভূমিখেকো চক্রের কয়েকজন দূর্বৃত্তকে সাথে নিয়ে মৃত আব্দুল লতিফের অংশ জবরদখল করে মাটি ভরাট করতে থাকেন। খবর পেয়ে আব্দুল লতিফের ছেলে মৃত শফিকুল হকের ছেলে সাব্বির আহমদ ও সায়েম আহমদরা বাঁধা দিতে গেলে উভয়পক্ষে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ তাদের উপর চড়াও হয়। ঘটনা দেখে স্থানীয় সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ তাহসিন আহমদ দীপু, আব্দুস সালাম গয়াস এবং দিলোয়ার মিয়াসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করেন এবং বিষয়টি আপোষে নিস্পত্তির চেষ্টা চালান। কিন্তু দখলদার চক্রের জেদের মুখে আপোসে নিস্পত্তির চেষ্টা ব্যর্থ হলে ভূমির মূল মালিক শফিকুল হকের ছেলে সাব্বির আহমেদ গত ২৬ ডিসেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিরোজপুর নিবাসী মৃত সামছুল হকের ছেলে শাহরিয়ার হক ও রাজেদুল হকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারা মতে ভূমির মুল মালিকপক্ষকে বেদখল, ভূমির আকৃতি-প্রকৃতি পরিবর্তন না করার আবেদন জানিয়ে বিবিধ মামলা (মামলা নং-৫৮/২০২২) দায়ের করেন।
আদালত বাদীর আবেদন গ্রহণপূর্বক এসএমপি’র দক্ষিণ সুরমা থানার ওসিকে ঘটনাস্থলে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার লক্ষ্যে বিবাদীপক্ষকে নোটিশ প্রদান এবং সরেজমিন তদন্ত করে মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি সহকর্মী এসআই খায়রুল বাশারকে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেন। এসআই বাশার আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিরোধপূর্ণ ভূমিতে বিবাদীপক্ষকে শান্তি বিঘ্নিত না করতে বিধি অনুযায়ী নোটিশ প্রদান করেন।কিন্তু আদালতের নির্দেশনা ও শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় পুলিশের নোটিশ উপেক্ষা করে বিবাদীপক্ষ ভূমিখেকো চক্রের চিহ্নিত কিছু দূর্বৃত্ত নিয়ে গত ৯ জানুয়ারি সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় অন্ধকারে বিরোধীয় ভূমিতে মাটিভরাট করতে থাকেন। জানতে পেরে বাদীপক্ষ ঘটনাস্থলে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে মৃদু ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। খবর পেয়ে এসআই খায়রুল বাশারের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ দেখে জবরদখলদার চক্র দ্রুত সটকে পড়ে। কিছুক্ষণ অবস্থান করে উপস্থিত লোকজনকে আদালতের নির্দেশনা অক্ষুন্ন রাখার আহবান জানিয়ে পুলিশ থানায় ফিরে যায়। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।এদিকে, বাদীপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, উপরোক্ত ভূমির মালিকানা নিয়ে সাব্বির আহমদ বাদী হয়ে সিলেটের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একই বিবাদীদের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানী মামলা (স্বত্ব মোকদ্দমা নং-০৫/২০২৩) দায়ের করেছেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ৭ মার্চ বিবাদীপক্ষকে জবাব দেয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছেন। এমতাবস্থায় দু’ দু’টো মামলা চলমান থাকা স্বত্তেও শাহরিয়ার ও রাজেদ গং বিবাদীপক্ষ বার বার আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিরোধপূর্ণ ভূমি জবরদখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।