আদিবাসী স্বীকৃতি আর ভূমি অধিকার চায় চুনারুঘাটের ৬১ নৃগোষ্ঠী

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ আজ ৯ আগস্ট। বিশ্ব নৃ-গোষ্ঠী দিবস। এ দিবসটিতে চূনারুঘাটের ৬১ নৃ-গোষ্ঠী ভূমি অধিকার আর আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থেকে সংবাদদাতা আবুল কালাম আজাদ জানান, নানা জাতি-গোষ্ঠী, বর্ণ-ভাষা এবং সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা। পাহাড়, চা বাগান ও সীমান্তবেষ্টিত সিলেটে বিভাগের একমাত্র এ উপজেলাতেই রয়েছে ৬১ নৃজাতি-গোষ্ঠীর বসবাস। উপজাতি বা নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষা এবং সংস্কৃতি, উৎসব, পার্বণ ও ধর্মীয় সংস্কৃতি আমাদের চেয়ে স্বতন্ত্র হলেও তারা আজও অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। বিশেষ করে উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়িসহ চা বাগান, পল্লী ও পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী গারো, হাজং, দেববর্মা ও ত্রিপুরাসহ বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এখনও অনুন্নত ও শিক্ষাবঞ্চিত।

চুনারুঘাট উপজেলায় ৬১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৭টি জাতিগোষ্ঠীকে সরকার নৃগোষ্ঠী স্বীকৃতি দিয়েছে। বাকি ১৪টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী আদিবাসীর স্বীকৃতির দাবি এখনো উপেক্ষিত।চুনারুঘাট উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। তার মধ্যে আদিবাসী বা নৃ-জনগোষ্ঠী রয়েছে লক্ষাধিক। যা উপজেলার মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। যেখানে এক তৃতীয়াংশ নৃগোষ্ঠীর বসবাস, সেখানে একটি আন্তর্জাতিক দিবসও পালন করা হয়না। শুধু কি তাই, সারা বছরই তাদের কেউ স্মরণ করে না। একমাত্র ভোটের সময় এলে তাদের কদর বাড়ে। এরপর আর কেউ তাদের খবরও রাখে না। তারা অধিকার আদায়ে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সাথে। পাহাড়ি কিংবা চা বাগানে এদের বসবাস বলেই এরা আজীবন চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থান থেকে বঞ্চিত।উপজেলায় ৬১ নৃ জনগোষ্ঠীর বসবাস হলেও এখানকার মাত্র ৪৭টি জাতি সরকারিভাবে স্বীকৃত। বাকিরা উপজাতির স্বীকৃতির জন্য বার বার সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। উপজাতি স্বীকৃতি থাকলে পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠী চাকরিসহ নানা ক্ষেত্রে সুবিধা পেত। কর্মক্ষেত্রেও তারা অন্যান্যের চেয়ে মজুরি কম পায়। চা বাগানে মজুরি যেমন ১২০ টাকা, তেমনি তারা বাইরে কাজ করেও পায় কম মজুরি। যেখানে ৫শ’ টাকা একজনের মজুরি সেখানে তারা পায় ২৫০ টাকা। একইভাবে সকল ক্ষেত্রে তারা চিরকাল বঞ্চিত হয়ে আসছে।

উপজেলা রেমা কালেঙ্গা, সাতছড়িসহ পাহাড়ি এলাকায় নৃগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশের বসবাস। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বনবিভাগের ভূমিতে বাস করে। কিন্তু তাদের উপর নির্যাতন থেমে নেই। এখানকার গারো, হাজং, দেববর্মা ও ত্রিপুরা, চাকমারা ভিলেজার হিসেবে বনবিভাগের জমিতে যুগ যুগ ধরে বসবাস করলেও তারা জমির মালিক নয়।
সম্প্রতি রেমা কালেঙ্গার নৃগোষ্ঠীর পাড়ায় গেলে দেখা হয়, তাদের চোখেমুখে বিষাদের ছায়া। তারা যেন নিজভূমে পরবাসী। কোন রকম তারা বাঁচতে চায়। তাদের কয়েকজন জানালেন, কোন রকম আমরা এ দেশে বেঁচে থাকতে চাই। আমরা আদিবাসী। আমাদের তো সরকারও কোন সুযোগ-সুবিধা দেয় না।আদিবাসী কিংবা নৃগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো পৌঁছেনি শিক্ষার আলো। উপজেলার রেমা কালেঙ্গা এবং সাতছড়ি এলাকার নৃগোষ্ঠীপাড়ায় নেই কোন বিদ্যালয়। রেমা-কালেঙ্গার গারো, চাকমা, দেববর্মা, সাঁওতাল ও হাজংরা মানবেতর জীবনযাপন করে। তেমনি সাতছড়ি পল্লীর দেববর্মা কিংবা ত্রিপুরারাও রয়েছে একই অবস্থায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী চা শ্রমিক ফোরামের সভাপতি স্বপন সাঁওতাল বলেন, আমরা চিরকাল অবহেলিত ছিলাম, চিরকালই থাকবো। সরকার বরাদ্দ দিলেও আমরা পাই সামান্য। আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে বেকার হচ্ছে। উপজাতি কোটা থাকলেও স্বীকৃতি না থাকায় আমরা এ সুবিধা পাই না। তিনি সকল আদিবাসীদের সরকারি স্বীকৃতির দাবি জানান।আদিবাসী নেতা পলাশ হাজং বলেন, আমাদের উন্নয়নে সরকার খুব সামান্য বরাদ্দ দিচ্ছে। তিনি রেমা কালেঙ্গার সবগুলো পাড়ায় বিদ্যালয় স্থাপন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি তাদের নিরাপত্তা দানের দাবি জানান।

You might also like