আফগান নারীদের কাছে সন্তান প্রসব এখন ‘আতঙ্ক’

আন্তজার্তিক ডেস্ক
সত্যবাণী

আফগান: তালেবান নিয়ন্ত্রণ শুরু হওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যেই ভেঙে পড়েছে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। আর এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সন্তান জন্ম দেয়া মা এবং নবজাতকের চিকিৎসা খাতে।আাফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের নানহারগার প্রদেশের একটি ছোট্ট হাসপাতাল, যেখানে বাচ্চা প্রসব করার কাজ করেন ধাত্রী আবিদা। গতকাল রোববার রাবিয়া নামের একজনের সন্তান প্রসব করেছেন তিনি, যার ভয়াবহ বর্ননা দেন বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে।তিনি বলেন, প্রসবের পুরো প্রক্রিয়া চলার সময় রাবিয়াকে ব্যাথানাশক ওষুধ, কিংবা খাবারসহ প্রয়োজনীয় কোনো সেবাই দিতে পারেনি হাসপাতালটির জন্মদানকারী ইউনিট।

শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ ছিল না সেসময়। জেনারেটরও চলেনি তেলের অভাবে। যেকারণে প্রচণ্ড গরমে ঘেমে-নেয়ে, মোবাইলের আলোয় বাচ্চা প্রসব করান তিনি। তার ভাষ্য, সেসময় প্রসব ইউনিটের তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।এই পরিস্থিতে যে রাবিয়া ও তার নবজাতক বেঁচে ফিরেছেন এটাই সৌভাগ্য। নবজাতককে কোলে জড়িয়ে রাবিয়া বলেন, ‘এটি আমার তৃতীয় সন্তান, কিন্তু সন্তান জন্ম দেয়ার এই অভিজ্ঞতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ভয়াবহ।’ধাত্রী আবিদাও বলেন, চাকরী জীবনে এটাই তার সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা। কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে, তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে বেশিরভাগ হাসপাতালেই এখন এই চিত্র নিত্যদিনের।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার আফগানিস্তানে। যেখানে প্রতি দশ হাজার জীবিত নবজাতক জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান ৩৮ জন নারী। যদিও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ শুরু হলে তা কিছুটা কমেছিল।আফগানিস্তানে তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে আর্থিক বরাদ্দের সরবরাহ। এতেই সংকটে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্যখাত।

এই পরিস্থিতি হতাশার বলে মনে করছেন জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল ‘ইউএনএফপিএ’র নির্বাহী পরিচালক নাটালিয়া কানেম। তার মতে দ্রুত এর সমাধান প্রয়োজন।তা না হলে, ২০২৫ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে অতিরিক্ত আরও ৫১ হাজার নারীর মৃত্যু হতে পারে বলেও জানান কানেম। এছাড়া ৪৮ লাখ নারী অনিচ্ছাকৃতভাবে গর্ভধারণ করতে পারেন। এখন যতজন নারী পরিবার পরিকল্পনার আওতায় আছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে তা নেমে যাবে অর্ধেকে।দেশটির এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে ইউএনএফপিএ। তবে এখন এজন্য তহবিল দরকার বলে জানান কানেম।এদিকে দিন যতই যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই জটিল হচ্ছে, বলছেন আফগানিস্তানের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।সূত্র : বিবিসি

You might also like