আবারও বেপরোয়া কানাইঘাটের চোরাচালানীরা
সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার চোরাচালানীরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোনভাবেই যেন তাদের দমন করা যাচ্ছে না। বিগত কিছুদিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে বিগত কিছুদিন ওদের অপকর্ম কিছুটা হলেও স্থিতিমিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আবারও তারা অবাধে শুরু করেছে তাদের অপকর্ম।সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী চক্র নির্বিঘ্নে তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার লোভানদী ও সুরমা নদীপথ বেছে নিয়েছে।
কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা জানান, প্রতিদিন কানাইঘাট সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী চক্র অবৈধভাবে শত শত বস্তা ভারতীয় চিনি, পাতার বিড়ি, চা-পাতা, কসমেটিক্স সামগ্রী, কাপড়, মোবাইল সেট, স্পোটর্স সামগ্রী, শুটকি ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য নিয়ে আসছে। এরপর গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত লোভা নদী ও সুরমা নদী দিয়ে নৌকাযোগে এসব অবৈধ পণ্য আশপাশের উপজেলাসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। লোভা ও সুরমা নদীতে বিজিবি ও থানা পুলিশের টহল স্পিডবোট থাকা সত্ত্বেও নৌকাযোগে প্রতিদিন শত শত বস্তা চিনির চালান ভারত থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে।
এসব চিনি চোরাকারবারীরা লোভা নদীর চিন্তারবাজার ঘাট, বাগিচাবাজার ঘাট, মুলাগুল বাজার ও মুলাগুল নয়াবাজার ঘাট, সাতবাঁক ইউনিয়নের চরিপাড়া লোভারমুখ বাজার, চরিপাড়া নয়াগাঁও সুরমা নদীর ঘাট, আন্দুরমুখ বাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর ঘাট, বাংলাবাজার, দিঘীরপাড় ইউনিয়নের দিঘীরপাড় সুরমা নদীর ঘাট, মমতাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর ঘাট, দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের কায়স্থগ্রামের পার্শবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার শাহগলি বাজারে মজুদ করে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, পিকআপ, ট্র্যাক্টর-ট্রলি দিয়ে পাচার করা হচ্ছে।
অপরদিকে সম্প্রতি সীমান্তবর্তী কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক দিয়ে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে টাটা পিকআপ, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত মিশুক রিক্সা দিয়ে শত শত বস্তা চিনি পরিবহন করা হচ্ছে। এতে করে প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উপজেলা পরিষদ ও থানার সামনে দিয়ে প্রকাশ্যে চোরাচালান পণ্য পরিবহন করা হলেও তা দেখেও না দেখার ভান করা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে কানাইঘাট থানা পুলিশ ও বিজিবি চিনিসহ ভারতীয় মালামাল আটক করলেও তা একেবারে সীমিত বলে সচেতন মহল জানিয়েছেন।
কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক দিয়ে ভারতীয় চিনি পরিবহন ও ব্যবসার সাথে জড়িত পিকআপ, মিশুক রিক্সা, সিএনজি অটোরিকশার কয়েকজন চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, থানার এএসআই রায়হান মিয়াকে গাড়ী প্রতি নির্ধারিত মাসোহারা দিয়ে প্রতিদিন চিনির চালান আনতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এএসআই রায়হান মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি আমতা-আমতা করে বলেন, টুকটাক লাইন হয়েছে বলে ফোন রেখে দেন।
এছাড়াও কানাইঘাটের অনেক চোরাকারবারী নিরাপদ রোড হিসেবে ভারতীয় চিনিসহ অন্যান্য ভারতীয় পণ্য সামগ্রী ও মাদকদ্রব্য জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার থেকে গাছবাড়ী-হরিপুর সড়ক দিয়ে কানাইঘাটে নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকে। ভারতীয় চিনির বেশিরভাগই দেশীয় চিনি কোম্পানীর বস্তায় পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর কারখানা ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করা হচ্ছে বলে নানা সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির প্রতিটি সভায় সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় তা প্রতিরোধে বিজিবি ও থানা পুলিশকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বার বার বলে থাকেন, তারা চোরাচালান প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিগত মাসের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ও নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন চোরাচালান প্রতিরোধে এখন থেকে টাস্কফোর্সের অভিযান গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
কানাইঘাট থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, সীমান্ত এলাকার চোরাচালান প্রতিরোধ করা বিজিবির দায়িত্ব। তারপরও আমরা চোরাচালান প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি এবং পুলিশ ভারতীয় চিনিসহ মাদকদ্রব্য অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে যাচ্ছে।