আমরা গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকর ফিরে পেতে চাই:নজরুল ইসলাম
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশে বার বার গণতান্ত্রিক সংকট দেখা দিয়েছে। এখনো দেশ গভীর সংকটে রয়েছে। আর এই সংকট তৈরি করেছে বিনাভোটের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা দখল করে থাকা এই সরকার। অতীতে যখনই দেশে গণতান্ত্রিক সংকট দেখা দিয়েছে তখনই রাষ্ট্র কাঠামোকে মেরামত করে দেশে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিএনপি ১০ দফা আন্দোলন কর্মসূচি ও রাষ্ট্র কাঠামোকে মেরামত করার জন্য ২৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমরা এই কর্মসূচির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ফিরে পেতে চাই, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই, দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তাই এই আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৭ জানুয়ারি শনিবার নগরির একটি হোটেলের হলরুমে সিলেট জেলা ও নগর বিএনপি’র উদ্যোগে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দলীয় ১০ দফা আন্দোলন কর্মসূচি ও ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে’ ২৭ দফা নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী ও ব্যাখ্যামুলক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, রক্তে স্বাধীন আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ গভীর সংকট। এই সংকট বিনাভোটে যারা ক্ষমতা আকড়ে রেখেছে তাদের তৈরি সংকট। একটি রাষ্ট্র ঠিকে থাকে তার জনগণের ঐক্যের উপর। জনগণের নির্বাচিত সরকারের কার্যক্রমের উপর। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার উপর। দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন পরই দেশে গণতান্ত্রিক সংকট দেখা দেয়, আজও তা বিদ্যমান। যখন কোন রাজনৈতিক দল মনে করে তারাই দেশের মালিক তখনই এমন সংকট তৈরি হয়। ১৯৭৫’র ২৫ জানুয়ারিতে দেশে সকল রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক অধিকারসহ মানুষের কথা বলার অধিকারকে বিলুপ্ত করে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হয়, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের আওতায় নিয়ে আসা হয়, মাত্র ৪টি পত্রিকা ছাড়া সকল গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় দেশে দুর্ভিক্ষে বহু মানুষ মারা যায়। রাষ্ট্র এতবড় সংকটের সম্মূখীন আর কখনো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে তখন দেশবাসীকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। কিন্তু দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর আবারো দেশে স্বৈরশাসন শুরু হয়। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সংগ্রাম করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, বার বার দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। আর রাষ্ট্র কাঠামোকে মেরামতের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে। কিন্তু বিএনপি কখনো গণতন্ত্রকে হত্যা করেনি, বরং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছে। মৃতপ্রায় আ’লীগকে দেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল বিএনপি। বাংলাদেশে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে সব দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত। এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় ও মত-পথের রাজনৈতিক দল রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেই সুযোগ নেই। বিরোধী দল ও মতের মানুষ আজ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে না। এই সরকার শুধু গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেনি, মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেয়া হয়, প্রচারণায় বাঁধা দেয়া হয়, ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় নিজের ভোট অন্যজন দিয়ে দিয়েছে। গণতন্ত্রের বাহন নির্বাচনকে ধ্বংস করে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র আছে বলা যায় না। এজন্য বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। যা আমাদের জন্য চরম লজ্জার।জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী’র সভাপতিত্বে ও নগর কমিটি’র সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও ড. এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, নগর শাখার আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী।বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, জেলা পেশাজীবি পরিষদের সভাপতি ডা. শামীমুর রহমান, জেলা ড্যাব সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ, শাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোঃ মোজাম্মেল হক, সিকৃবির অধ্যাপক সিদ্দিকুল ইসলাম প্রমূখ।