আরডিএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরী আর নেই
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ বিশিষ্ট সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব, আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংগঠন রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ) গ্লোবাল এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরী আর নেই। ৪ জুন শনিবার, বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিটে পূর্ব লন্ডনের কুইনস হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর। তিনি ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ে সহ অসংখ্য নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহি রেখে গেছে। জীবনের শেষ সময়ে সব সন্তানই তাঁর শয্যাপাশে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলে, প্রিয়জনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মরহুমের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের চানপুর গ্রামে। ষাটের দশকে তিনি যুক্তরাজ্যে আসেন।
গত কয়েক বছর ধরে রেডব্রীজের সেভেনকিংস এলাকায় বসবাস করলেও সত্তর ও আশির দশকে আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরী পূর্ব লন্ডনে বাঙালি কমিউনিটির অধিকার আদায়ে সামনের সারিতে ছিলেন। বিশেষ করে টাওয়ার হ্যামলেটসে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন, মূল ধারার রাজনীতিতে কমিউনিটির তরুণদের অংশ গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণসহ অনেক সামাজিক আন্দোলন ও উদ্যোগের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরী।তিনি বিশ্বাস করতেন – এই দেশে নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে হলে মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রজন্মের অবস্থান সুসংহত করতে হবে। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক দিকে দিয়ে কমিউনিটিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি দেয়ার প্রয়াস চালানোর পাশাপাশি তিনি প্রজন্মের জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইসলামের দাওয়াতী কাজের জন্য তিনি প্রায় অর্ধ শত দেশও সফর করেছেন।মানুষের কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন জীবনভর। তিনি তাঁর সামাজিক ও কল্যানমূখি কাজের ধারাকে অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এক সময় নিজের সন্তানদের নিয়ে গঠন করেন রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বা আরডিএফ গ্লোবাল নামের আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্যোগে জন্মভূমি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চানপুর গ্রামে নির্মান করেছেন আরডিএফ ম্যাটারনিটি হসপিটাল। এরই পাশে রয়েছে তাঁর ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক এডুকেশন সেন্টার ও মসজিদ। আরডিএফ এর উদ্যোগে এখন শুধু সিলেট নয়, গোটা বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্ত-পীড়িত মানুষের জন্য সহায়তামূলক নানা কর্মসূচি পরিচালিত হয়ে আসছে।সাপ্তাহিক জনমত এর প্রতিষ্ঠা কাল থেকেই মরহুম শামসুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন এর পাঠক এবং মূলত তাঁর আগ্রহ এবং ব্রিটেনপ্রবাসী বাঙালি কমিউনিটিতে জনমত এর অবদানের জন্য এটির প্রকাশনা অব্যাহত থাকা দরকার বলে তিনি মত দিলে তাঁর সন্তান, তরুণ ব্যবসায়ি জুনেদ চৌধুরী জনমত এর মালিকানার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হন এবং এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে এর প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন।
বিভিন্ন মহলের শোক প্রকাশ
লুৎফুর রহমান, মেয়র, টাওয়ার হ্যামলেটসঃ
বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।এক শোক বানীতে মেয়র বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসের কমিউনিটির সাথে তাঁর সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় এই বারার মানুষের কল্যানে কাজ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে কমিউনিটি একজন প্রজ্ঞাবান মুরব্বীকে হারালো।
শোকবার্তায় নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
কাউন্সিলর শাফি আহমদ, স্পিকার, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলঃ
আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের সদ্য নির্বাচিত স্পিকার, কাউন্সিলর শাফি আহমদ। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস্ বিশেষ করে ক্রিশ্চিয়ান স্ট্রিট এলাকার প্রধানতম মুরব্বী ছিলেন। আল্লাহ তা’য়ালা উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। দুনিয়ায় উনারা সুন্দর হায়াত পেয়েছিলেন এবং এই নেক হায়াতকে দ্বীনের কল্যানে, মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা সহ মানুষের সেবায় কাজে লাগানোর চেষ্ঠা করেছেন, যার অনেক কিছুই আমরা নিজেরা সচক্ষে দেখেছি। আল্লাহ তায়ালা তাদের মেহনতকে কবুল করুন।এদিকে, রাতেই মরহুম শামসুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় যান স্পিকার কাউন্সিলর শাফি আহমদ। তিনি শোকাহত পরিবার পরিজনদের তাদের সান্তনা দেন এবং তাদের সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করেন।
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দঃ বিলেত থেকে প্রকাশিত প্রাচীনতম বাংলা পত্রিকা জনমতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের জীবনসদস্য জুনায়েদ চৌধুরীর পিতা শামসুজ্জামান চৌধুরী’র মৃত্যুতে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ ও কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ এক শোকবার্তায় মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি স্বজনদের ধৈর্য্য ধারণের শক্তিদানের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করেন।নেতৃবৃন্দ বলেন, মরহুম শামসুজজামান চৌধুরী জীবনের বেশিরভাগ সময় সমাজের কল্যাণকর নানা উদ্যোগে সক্রিয় থেকেছেন। তাঁর মতো একজন সমাজ হিতৈষীর চলে যাওয়া আমাদের কমিউনিটির জন্য বিরাট ক্ষতি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকেঃ সংগঠনের উপদেষ্টা আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরীর ইন্তেকালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে’র পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।এক শোকবার্তায় মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
জনমত পরিবারঃ সাপ্তাহিক জনমত এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর জুনেদ চৌধুরীর পিতা এবং জনমত এর প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এর একনিষ্ট পাঠক ও শুভাকাংখী আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরীর প্রয়ানে গোটা জনমত পরিবার শোকে মূহ্যমান।জনমত পরিবার এর পক্ষ থেকে দেয়া এক শোকবার্তায় বলা হয়, মূলত তাঁর আগ্রহের কারণেই জুনেদ চৌধুরীর মত এই দেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রজন্মের একজন তরুণ ব্যবসায়ি জনমত এর হাল ধরেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে জনমত এর কপি হাতে নেয়ার পর পিতা শামসুজ্জামানান চৌধুরীর অভিব্যক্তি সন্তান হিসেবে জুনেদ চৌধুরীকে জনমত এর প্রকাশণা অব্যাহত রাখতে প্রতি নিয়ত অনুপ্রাণিত করে। জনাব শামসুজ্জামান চৌধুরীর মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যের বাঙালিরা একজন কমিউনিটি অন্তপ্রাণ মুরব্বীকে হারালেন। আর জনমত পরিবার হারালো একজন নিঃস্বার্থ শুভাকাংখি, বিদদ্ধ পাঠক ও অর্ধ শতাব্দীকালের সুহৃদকে।জনমত পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং শোক কাতর পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
দোয়া মাহফিল
আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরীর ইন্তেকালে কমিউনিটির মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সমাজের নানা পর্যায়ের লোকজন ছুটে যান মরহুমের বাসায় এবং শোকাহত স্বজন-পরিজনদের তারা সান্তনা দেন। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে টাওয়ার হ্যামলেটস সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন মসজিদে-মাদ্রাসায় তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।৪ জুন শনিবার রাতে ইক্বরা বাংলা টিভিতে সম্প্রচারিত একটি লাইভ শো’র শেষে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।অই রাতে মরহুমের বাসায় বিপুল সংখ্যক আত্মীয় স্বজন, গুণগ্রাহী, কমিউনিটির নানা পর্যায়ের ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ এক দোয়া মাহফিলের। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুফতি আব্দুল মুন্তাকিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই দোয়া মাহফিলে যোগ দেন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কবি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী ওবিই, বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ও শিল্পপতি আতি চৌধুরী, সাপ্তাহিক জনমত এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে’র সেক্রেটারী মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইউকে’র সেক্রেটারি মুফতি সালেহ আহমদ, ইক্বরা বাংলা টিভির নিয়মিত আলোচক হাফিজ মাওলানা হোসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, মরহুমের বড় জামাতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ি আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে’র সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সৈয়দ নাইম আহমদ, আহবাব চৌধুরী, জামাল মিয়া, মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ প্রমুখ।