ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার দায় অস্বীকার সৌদির
আন্তজার্তিক ডেস্ক
সত্যবাণী
সৌদি আরবঃ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যার পেছনে সৌদি আরবের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তেহরান। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ ফখরিজাদেহকে হত্যায় রিয়াদের ওপর দায় চাপিয়েছেন। যদিও সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানী তেহরানের পূর্বাঞ্চলে মহসেন ফখরিজাদেহের কাছাকাছি অন্য একটি গাড়ি থেকে রিমোট কন্ট্রোলড বন্দুকের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি চালানো হয়। এমনটাই ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে দাবি করে।প্রথম থেকেই ইরানের শীর্ষ নেতারা হত্যাকাণ্ডটির জন্য ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছিলেন। তারা বলেছেন, ইসরায়েলি অস্ত্র দিয়েই মহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যা করা হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এবং অন্যান্য নেতারা দেশটির প্রধান পরমাণু বিজ্ঞানীর হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
মহসেন ফখরিজাদেহের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ইরানের সঙ্গে এর শত্রু দেশগুলোর মধ্যকার উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বৈঠকের পরই হত্যাকাণ্ডটির ঘটনা ঘটল। নির্মম এই ঘটনাকে ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।এ দিকে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর বিবৃতির মাধ্যমে বলেন, ইরানে যে কোনো নেতিবাচক ঘটনা ঘটলেই তার দায় সৌদির ওপর চাপিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছিলেন, এরপর কি ইরানে ভূমিকম্প বা বন্যার জন্যও আমাদের দায়ী করা হবে? তিনি আরও বলেন, কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার নীতিতে বিশ্বাস করে না সৌদি আরব।
কিন্তু অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মতোই সৌদি আরবও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা বা সমবেদনা প্রকাশ করেনি।গত মাসে সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে বৈঠক করেছেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও সৌদি প্রথম থেকেই এই বৈঠকের কথা অস্বীকার করে আসছে।শুধুমাত্র নেতানিয়াহুই নয়, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ইয়োসেফ মেইর কোহেনও ক্রাউন প্রিন্স ও পম্পেওর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সৌদির নিওম শহরে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস, এক মার্কিন কর্মকর্তা এবং আরও দু’জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফখরিজাদেহের হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইসরায়েলের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির স্থপতি হিসেবে পরিচিত ছিলেন পরমাণু বিজ্ঞানী ফখরিজাদেহ। গত শুক্রবার একটি বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে তার স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। সে সময় নিরাপত্তাবাহিনীর তিনটি গাড়ি তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। তখন একটি গাড়িতে বুলেট লাগার শব্দ হয়। তিনি কী ঘটেছে তা দেখার জন্য বের হন। তিনি গাড়ি থেকে বের হওয়ার পরপরই একটি রিমোট কন্ট্রোলড বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়।ফার্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফখরিজাদেহের গাড়ি থেকে ১৫০ মিটার দূর থেকে তাকে গুলি করা হয়েছিল। তাকে কমপক্ষে তিনবার গুলি করা হয়। তার দেহরক্ষীকেও গুলি করা হয়েছে। প্রায় তিন মিনিট ধরে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।এ দিকে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামির বরাতে অপর আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ইসনাও জানিয়েছে, ফখরিজাদেহের গাড়িতে বন্দুকহামলা চালানো হয়েছে। সে সময় বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে এবং এলোপাথাড়ি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
ইরানের কৌশল বিষয়ক কাউন্সিলের প্রধান সায়েদ কামাল খারাজি এই হত্যাকাণ্ডকে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান কাশেম সোলাইমানির মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করেছেন। চলতি বছরের শুরুতে ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় সোলাইমানির মৃত্যু হয়।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।যদিও ফখরিজাদেহের মৃত্যুর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইসরায়েলি মন্ত্রী তাচি হানেগবি দেশটির চ্যানেল ১২ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, কারা মহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যা করেছে সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।