উদ্বোধন করে জ্বালানী সচিব তাগিদ দিলেন উৎপাদন বাড়ানোর কৈলাশটিলা ৭ নম্বর কূপ থেকে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট অফিস থেকেঃ সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের ৭ নম্বর কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন গত শনিবার গ্যাস সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এই গ্যাস কূপ থেকে প্রতিদিন ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন আরো বাড়াতে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন। সিলেট গ্যাস ফিল্ড এলাকায় গ্যাসের যে মজুদ রয়েছে তা আহরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় তিনি জানান, গোলাপগঞ্জ আরপিজিসিএল ও এলপি গ্যাস প্ল্যান্ট ও এমএসটিই প্ল্যান্টের এনজিএলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট থেকে এ বিষয়ে জানতে বলেন। গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, দুটি প্ল্যান্ট চালু ও এনজিএল পুড়ানো বন্ধের ব্যাপারে সিনিয়র সচিব খুবই আন্তরিক। তিনি দ্রুত সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে প্ল্যান্ট চালুর ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড সূত্রে জানা যায়, কৈলাশটিলা ৭ নম্বর কূপের নতুন আবিস্কৃত গ্যাস স্তর থেকে গত ৭ মে পরীক্ষামূলক গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড এতোদিন দ’ুটি কূপ থেকে দৈনিক ২৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতো। এখন ৭ নম্বর কূপ থেকে আরো ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, সিলেট গ্যাস ফিল্ড এখন দৈনিক মোট ১০৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক উৎপাদন ২শ’ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। তবে, সিনিয়র সচিব এই লক্ষ্যমাত্রা ৩শ’ মিলিয়নের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার তাগাদা দিয়েছেন।
জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, সিলেট গ্যাস ফিল্ডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিনিয়র সচিবের একান্ত সচিব কাজী শাহজাহান, সিলেট গ্যাস ফিল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, বাপেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শোয়েব আহমদ মতিন প্রমুখ।৭ নম্বর কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের উদ্বোধন ও এমসটিই গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন শেষে কৈলাশটিলা ১ নম্বর ফিল্ডে এসে প্রধান অতিথি সাময়িক যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় সিলেট গ্যাস ফিল্ডের রশিদপুর গ্যাস ক্ষেত্রের এলাকায় শেভরন অনুসন্ধান চালাতে চাইছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবো। ছাতক গ্যাস ক্ষেত্রে পুনরায় উৎপাদন শুরু করা প্রসঙ্গে বলেন, সেখানে আইনগত জটিলতা রয়েছে। আমরা পরীক্ষা করে দেখছি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গোলাপগঞ্জ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ইউনুছ চৌধুরী, সিবিএ কর্মচারী লীগ (১৮৮৯) এর সভাপতি মো. হারুন, সহ-সভাপতি মো. সহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান, সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালিক, অর্থ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মো. গোলাম রব্বানী, কল্যাণ সম্পাদক মনজুর হোসাইন, প্রচার সম্পাদক মো. নাজমুল ইসলামসহ কৈলাশটিলা ও এমএসটিই গ্যাস ফিল্ডের কর্মচারী লীগের নেতৃবৃন্দ। পরে সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন হরিপুর গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন করেন এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হোন।এদিকে, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য থেকে ৭ নম্বর কূপের নতুন আবিস্কৃত গ্যাস স্তরে মজুত গ্যাসের পরিমাণ ৭৫৮ বিলিয়ন ঘটফুট বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস ১০ ইউএস ডলারে হিসাব করলে আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বলে জানান তারা। এরসঙ্গে উপজাত হিসাবে মিলবে দৈনিক ২৫০ ব্যারেল কনডেনসেট (পেট্রোল ও ডিজেল তৈরির কাঁচামাল) এবং ৫০ থেকে ৮০ ব্যারেল এনজিএল (এলপি গ্যাস ও পেট্রোল তৈরির কাঁচামাল)।