উপজেলা প্রশাসনেও ব্যয়ের সীমা বেঁধে দিল সরকার
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট মন্দাভাব ও করোনাভাইরাস মহামারী অভিঘাত কাটিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে সরকারি কর্মকর্তাদের সব ধরনের বিদেশ সফর বন্ধ, জরুরি প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করাসহ নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সরকারের এই ব্যয় সংকোচন নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে মাঠ প্রশাসনেও। বরাদ্দ দেয়া অর্থের অতিরিক্তি ব্যয় না করা, কৃচ্ছ্রসাধননীতি মেনে চলা, নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করাসহ উপজেলা প্রশাসনে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন উপখাতের বাজেট বরাদ্দ বণ্টন এবং সঠিকভাবে বাজেট ব্যবহারের লক্ষ্যে এসব নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. মায়সুর মাহমুদ চৌধুরীর সই করা এ-সংক্রান্ত চিঠি বুধবার দেশের সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং দেশের সব জেলা, উপজেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারকে পাঠানো হয়েছে।
সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আগের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হওয়ায় দেশে রিজার্ভে টান পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিলাসদ্রব্যের আমদানিও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।গতবছর দেশের রিজার্ভ একপর্যায়ে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলেও রিজার্ভের বর্তমান অবস্থান গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
নির্দেশনায় যা থাকছে
১. ক) অতিরিক্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যয়োত্তর অনুমোদন দেয়া হবে না বলে বরাদ্দ করা অর্থের অতিরিক্ত ব্যয় করা যাবে না।
খ) প্রদত্ত বরাদ্দপত্রের বিষয়ে জিজ্ঞাসা থাকলে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অবশ্যই মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।
গ) বরাদ্দ করা অর্থ সরকারের প্রচলিত আর্থিক ও প্রশাসনিক নিয়মাবলি প্রতিপালন সাপেক্ষে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ব্যয় করতে হবে।
ঘ) অর্থবছর শেষে ১৫ জুলাই তারিখের মধ্যে ব্যয়ের বিবরণীসহ সমর্পণ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।
ঙ) বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সময় এই অধিশাখার চিঠি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো কারণে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হলে, তার কারণ ব্যাখ্যা করে অতিরিক্ত বরাদ্দের চাহিদাপত্র পাঠাতে হবে।
চ) বরাদ্দ করা বাজেটের ভিত্তিতে অর্থবছরের শুরুতেই বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সে পরিকল্পনা অনুসরণ করে ব্যয় করতে হবে।
ছ) অর্থবছরের শেষপর্যায়ে তড়িঘড়ি করে অর্থ ব্যয় করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে।
জ) বেতন-ভাতাদি খাতে বাজেটের বরাদ্দ সীমার মধ্যে আছে কি না পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন হলে যথাসময়ে অতিরিক্ত বরাদ্দের চাহিদাপত্র পাঠাতে হবে।
২. জেলা প্রশাসকের অধীন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অরগানোগ্রামের সেটআপ অনুযায়ী কর্মরত সংরক্ষিত বিষয়ের কর্মচারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ থেকে বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি গ্রহণ করবেন।
৩. জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন ও জনপ্রশাসন পদক প্রদান, উন্নয়ন মেলা এবং আন্তর্জাতিক পাবলিক সার্ভিস দিবসসহ অন্যান্য জাতীয় দিবস উদযাপনের জন্য পরবর্তীতে চাহিদার ভিত্তিতে অনুষ্ঠান/উৎসবাদি খাত থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে।
৪. উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোর ছুটি নগদায়ন বেতন (অফিসার), ছুটি নগদায়ন বেতন (কর্মচারী), ভ্রমণভাতা, প্রশাসনিক ব্যয়ের পুরস্কার, পানি খাতে এবং মূলধন ব্যয়ের অধীন আর্থিক সম্পদের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের-কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক, টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামাদি ক্যামেরা ও আনুষাঙ্গিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, অফিস সরঞ্জামাদি-আসবাবপত্র খাতে অধিযাচনের ভিত্তিতে পরবর্তীতে বরাদ্দ দেয়া হবে। শুধুমাত্র শুদ্ধাচার পুরস্কার ব্যতীত অন্য কোনো খাতের ব্যয় পুরস্কার খাত থেকে দেয়া হবে না।
৫. মূলধন ব্যয়ের অধীন আর্থিক সম্পদের অর্থ অধিযাচন প্রেরণের ক্ষেত্রে বিগত ৩ অর্থ বছরের বরাদ্দ ও চলতি অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট খাতে অর্থ ব্যয়ের পর বিদ্যমান জের এবং বর্তমান অধিযাচনের যৌক্তিকতা প্রদর্শন করতে হবে। কম্পিউটার ও অফিস সরঞ্জাম খাতে অধিযাচনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কম্পিউটার ও অফিস সরঞ্জামের সংখ্যা, কেনার তারিখ, মেরামত যোগ্য কি না, বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
৬. আসবাবপত্র অধিযাচনের ক্ষেত্রে যৌক্তিকতাসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ছকে বরাদ্দ চাইতে হবে। মূলধন ব্যয়ের অধীন খাতগুলোতে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত আর্থিক ক্ষমতা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পিপিআর অনুসরণ করতে হবে।
৭. বাজেট মঞ্জুরিপত্র ইস্যুর সঙ্গে সঙ্গে এ অধিশাখা থেকে আইবাস++ এ সংশ্লিষ্ট উপজেলার বিপরীতে বরাদ্দ এন্ট্রি করা হয়। এ অধিশাখা থেকে আইবাস ++ এন্ট্রি না দেয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলা বরাদ্দ উত্তোলন করতে পারবে না। কাজেই বাজেট মঞ্জুরিপত্র পাওয়ার ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করে বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে আইবাস++ এ এন্ট্রি করা হয়েছে কি না নিশ্চিত করতে হবে। মঞ্জুরিপত্রে উল্লেখিত বরাদ্দের অঙ্কের সঙ্গে আইবাস++ এন্ট্রির কোনো গড়মিল পাওয়া গেলে বা এন্ট্রি না হয়ে থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এ অধিশাখাকে অবহিত করতে হবে।
৮. কর্মচারীদের পোশাকের অধিযাচনের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ শাখার পরিপত্রের নির্দেশনা অনুসারে পোশাকের প্রাপ্যতা হিসাব করে বরাদ্দ চাইতে হবে।
৯. উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সার্বক্ষণিক শারীরিক ও বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত একজন পিসি/এপিসি ও ৯ জনসহ ১০ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য ব্যতীত অতিরিক্ত কোনো আনসার সদস্যদের বেতন ও ভাতা এ মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে পরিশোধ না করার জন্য দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সশস্ত্র আনসার সদস্যদের বেতন ও ভাতাদি পরিশোধের সময় চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে বিগত (২০২১-২২) অর্থবছরের কোনো বকেয়া পরিশোধ করা যাবে না। অর্থবছরের শেষ প্রান্তে হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিধিবিধান অনুসরণ করে বিল দাখিল এবং আনসার সদস্যদের বেতন ভাতাদি পরিশাধে করতে হবে। এ খাতে পদ্ধতিগত ভুলের জন্য বরাদ্দ করা বাজেট ব্যবহার না করে বাজেট সমর্পণ করা হলে পুনরায় বাজেট বরাদ্দ দেয়া হবে না।
১০. চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে উপজেলায় নিয়োজিত ১ জন পিসি/এপিসি ও ৯ জন আনসার সদস্যদের বেতন ও ভাতাদি নিরাপত্তা সেবা (ভাড়ার ভিত্তিতে) খাত থেকে পরিশোধের জন্য সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের অনুরোধ করা হয়েছে।