একটি প্রীতিকর আনন্দ-আড্ডার কিয়দংশ—
সারওয়ার-ই আলম
অতিথি লেখক, সত্যবাণী
লন্ডন: সমমনা মানুষদের সম্মিলনে বেশ প্রীতিকর একটি আনন্দ-আড্ডা জমে উঠেছিল আজ সন্ধ্যায় সহকর্মী সাংবাদিক, সত্যবাণীর সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা ভাইয়ের বাসভবনে। মূলত আয়োজনটি ছিল বাংলাদেশ থেকে আগত ঐতিহ্যবাহী জাতীয় দৈনিক সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিমের সঙ্গে সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের সৌজন্য সাক্ষাত উপলক্ষে। পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ হতে হতে তখন সন্ধ্যাটা প্রায় ঘনীয়ে এসেছিল। ততক্ষণে সুপরিসর বসার ঘর সংলগ্ন খাবার টেবিলে হরেক রকম খাবারের সমারোহ। দেখেই মনে হচ্ছিল খুব সুস্বাদু হবে। আনাস ভাইয়ের স্ত্রী সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা কলি ভাবী সারাদিন খেটে অতিথিদের ভুরিভোজের আয়োজন করেন একেবারে বাঙালিআনায়।
কবিতা ও গান ছাড়া বাঙালির আনন্দ-আড্ডা পূর্ণতা পায় না। তাই অনেকটা অবধারিতভাবে এই পর্বটি ছিল নৈশভোজের পর পরই।অতিথিরা সবাই যে যার মত করে আয়েশী ভঙ্গিতে প্রস্তুত উপভোগের জন্য। এক ঝলক চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম সহকর্মীদের উপস্থিতি। দেখি ওদিকটাতে আছেন বার্কিং এন্ড ডেগেনহ্যাম কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলর মঈন কাদরী, সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা ভাই, সৈয়দ বদরুল আহসান ভাই, হরমুজ আলী ভাই, মিজানুর রহমান, হাবিব ভাই, সঙ্গীতশিল্পী লুসি আপা, সংস্কৃতিকর্মী স্মৃতি আজাদ আপা ও মিঠু ভাই। আমার পাশে স্বপন নন্দী দাদা, আবু মুসা হাসান ভাই, সৈয়দ এনাম ভাই, জোবায়ের ভাই। নিলুফা ইয়াসমিন হাসান আপা খুব খেয়াল করে মোবাইলে ধারণ করছিলেন আড্ডার স্মৃতি।
সঙ্গীতশিল্পী মোস্তফা কামাল মিলন ভাইয়ের সাবলীল পরিচালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনেকটা আনুষ্ঠানিকভাবে অনানুষ্ঠানিকতার প্রারম্ভিকা। তিনি ডেকে নিলেন আমাদের আরেক সহকর্মী সংবাদ পাঠক ও সঙ্গীতশিল্পী রূপি আমীনকে। রূপি আপার সঙ্গে হারমোনিয়ামে যুক্ত হলেন তাঁর স্বামী শাহীন ভাই; যিনি নিজেও একজন সৌখিন শিল্পী। এই সুন্দর দম্পতি একে একে পরিবেশন করলেন ‘ আমার এই পথ চাওয়াতে আনন্দ’, ‘ এই কথাটি মনে রেখো’, এবং ‘ বেদনা মধুর হয়ে যায় তুমি যদি দাও’ গান ক’টি।
অভ্যাগত অতিথিবৃন্দ ততক্ষণে আয়েশী ভঙ্গিতে একেবারে নিবিষ্ট বাংলা গানের সুর লালিত্যে। হারমোনিয়ামের শব্দ ছাপিয়ে রান্নাঘর থেকে শোনা যাচ্ছিল টুংটাং শব্দ। আমরা বুঝতে পারছিলাম ভাবী চায়ের আয়োজন করছেন। আনাস ভাই ঘুরে ঘুরে সবার হাতে তুলে দিলেন দুধের আধিক্য ও চিনির স্বল্পতায় বানানো ধোঁয়া ওঠা দুধ চা।
প্রশস্ত দরজাগুলো খোলাই ছিল। বাহির থেকে একটা হিমেল বাতাস ঘরে এসে আমাদেরকে দিয়ে যাচ্ছিল শীতল আবেশ। চায়ে আয়েশ করে একটা চুমুক দিয়েছি এরইমাঝে ডাকল পড়ল আমার কবিতা পড়ার জন্য। রূপি আপাকে সঙ্গে নিয়ে আমি পড়লাম আমার প্রেমপদ্য সিরিজের একটি প্রথম কবিতা ‘প্রাণ’; যার প্রথম কয়েকটি পঙ্কতি এরকম— মলাট খুলে উল্টে দেখো, পাতায় পাতায় পাতায় পদ্য, শেষ পাতাতে লুকিয়ে রাখা, গগনজোড়া রৌদ্র’। কবিতা পাঠ শেষে করতালির সংখ্যা দেখে মনে হলো আমরা একেবারে নিরাশ করিনি। পরে আমি এককভাবে পাঠ করলাম ঋণ কবিতাটি; যার কয়েকটি পঙ্কতি এরকম— বুকের ভেতর অথৈ নদী, সাগর করে বাস, ভয় পেয়ো না মেয়ে তুমি, নেইকো সর্বনাশ’। এ পর্যায়ে অতিথিদের কাছ থেকে একটিও ‘ ওয়ান মোর’ না আসাতে মানে মানে কেটে পড়া ছাড়া আমার আর কোনও গত্যন্তর ছিল না!
সহকর্মী সাংবাদিক ও নাট্যকার বুলবুল হাসান ভাই এলেন তাঁর গান নিয়ে। তিনি গাইলেন শচীন দেব বর্মনের ‘ মন দিল না বধূ মন নিল যে শুধু, আমি কী নিয়ে থাকি’।
এবার অনুরোধের তীর স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী গৌরী চৌধুরীর দিকে। গৌরী দি সবারই প্রিয় শিল্পী। তিনি গলাটা খুললেই মুগ্ধ হয়ে যায় শ্রোতা। তিনি সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে দিয়ে একে একে গাইলেন, ‘ একটা গান লিখো আমার জন্য’, মধু মালতী ডাকে আয়’। গাওয়া শেষে অতিথিদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় সিক্ত হলেন তিনি।
এরপর এলেন আবৃত্তিকার শাহাব আহমেদ বাচ্চু ভাই। রবীন্দ্রনাথের একটি দীর্ঘ কবিতা ‘পৃথিবী’ মুখস্থ পাঠ করে সবাইকে যুগপৎ বিস্মিত ও অভিভূত করলেন তিনি।
গান হলো, কবিতা হলো।এবার কিছু গল্পকথার পালা। জীবনের ছোট ছোট স্মৃতিকথা বলে সবাইকে মুগ্ধ করলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি
সুলতান শরীফ ভাই। আনন্দ- আড্ডার আয়োজক আনাস ভাই ঘোষণা দিলেন জুলাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য একটি মু্ক্ত আলোচনা সভার; যে সভায় সংবাদকর্মীরা পরস্পর ভাগ করে নেবেন দৈনিক সংবাদসহ অন্যান্য কাগজে কাজ করার টুকরো টুকরো স্মৃতিকথা।
গল্পকথার পর আবারও কবিতা ও গানে ফিরে যাওয়া। সত্যব্রত দাস স্বপন দা এলেন সিলেটি ভাষায় রচিত তাঁর ছড়া নিয়ে। আড্ডার প্রধান আকর্ষণ সাধারণত শেষেই থাকে। মিলন ভাই সুকৌশলে সেই সুযোগটা রেখে দিলেন তাঁর নিজের জন্য। এবার তাঁর পালা। তিনি গভীর একাগ্রতা নিয়ে গাইলেন ‘ মনে কী দ্বিধা রেখে চলে গেলে’। সত্যি সত্যি তখন আমাদের যাওয়ার সময় ঘনীয়ে আসছিল কারণ পরদিন সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। মিলন ভাইয়ের সুরের আবেশ নিয়ে আমরা একে একে বিদায় নিলাম আনাস-কলি দম্পতির কাছ থেকে।