একটি বেড়িবাঁধের অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বিশ্বনাথ উপজেলাবাসী

সিলেট অফিস 
সত্যবাণী
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তরসীমান্তের লামাকাজী ও খাজাঞ্চি এ দু’টি ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুরমা নদী। কিন্তু দীর্ঘ কয়েকটি বছর ধরে এই সুরমা নদীর পাড় রয়েছে অরক্ষিত। বর্ষায় উজান থেকে চলে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভরপুর হয়ে পড়ে নদীটি। তাই এই পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে নদীর পাড় ডুবে প্রায় প্রতিটি বছর’ই উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে প্রতিবছর উপজেলার লাখো মানুষকে পোহাতে হয় চরম দূর্গতি।

এছাড়াও বন্যায় প্রতিবছর পানির স্রোতে পাকা সড়ক ভেঙে সরকারের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি সুরমা নদীর পাড়ে উচু করে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে প্রতিবছরে বন্যার কবল থেকে লাখো মানুষ মুক্তি পাবে। এছাড়াও প্রতিবছর পানির স্রোতে ভেঙে যাওয়া পাকা সড়ক মেরামতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় থেকে সরকার মুক্তি পাবে। পাশাপাশি খাল-নালা দখলে-দূষণে বিলীন হওয়ায় ঢুকে যাওয়া বন্যার পানি নিস্কাশনে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বনাথ থেকে সংবাদদাতা জানান, সুরমা নদীর বিশ্বনাথ অংশে একটি বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর উপজেলার লাখো মানুষ বন্যার কবলে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গত ২০২২ সালের জুন মাসে বিশ্বনাথে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। তখন উজান থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢলের পানি। আর এই পানি সুরমা নদীর পাড় ডুবিয়ে লামাকাজী ও খাজাঞ্চি ইউনিয়নে প্রবেশ করে। পানির স্রোত বেশী হওয়ায় রেললাইন ও অনেক এলজিইডির সড়ক খালের মতো গর্ত করে ভেঙে ৮টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ও মানুষের ঘর-বাড়ি তলিয়ে পড়ে। ফলে মানুষ প্রাণে বাঁচতে প্রতিবছর বাসস্থান ছেড়ে ৪/৫দিন ছোট ছোট বাচ্চা আর বয়োবৃদ্ধ লোকজন নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়। এ বছরও একইভাবে সুরমা নদীর পানিতে বিশ্বনাথ উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। ফলে মানুষের দুর্গতির পাশাপাশি পাকা সড়কেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুরমা নদীর পাড়ে মাত্র ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ হলে আকস্মিক বন্যা থেকে বিশ্বনাথবাসী রক্ষা পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
জানতে চাইলে খাজাঞ্চি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস বলেন, উপজেলার লাখ লাখ মানুষকে আকস্মিক বন্যা থেকে বাঁচাতে হলে সুরমা নদীর পাড়ে বিশ্বনাথ অংশে একটি বেড়িবাঁধ স্থাপন অতি জরুরী। এছাড়াও মাকুন্দা ও বাসিয়া নদীসহ খাল-নালা খনন করা না হলে পানি নিস্কাশনে চরম বাঁধা হয়ে পড়েছে।
একইভাবে লামাকাজী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান এনামুল ইসলাম বলেন, সুরমা নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধসহ তার ইউনিয়নে অনেকটি খাল ও নালা খননের প্রয়োজন। পাশাপাশি আখতাখালি খালে স্লুইসগেইট নির্মাণসহ আখতাখালি খাল, পাকুখালী খাল ও নলকটক খাল খননের প্রয়োজন। এই খালগুলো দখল আর দূষণে বিলীন হওয়ায় পানি নিস্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিলেট-২ আসনের এমপি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, উপজেলাবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সুরমা নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সাথে আলাপ হয়েছে। এছাড়াও বাসিয়া নদীর প্রবেশ মুখ ও শেষ প্রান্তের মুখসহ মাকুন্দা নদী খনন এবং ভরাট হওয়া খালগুলো উদ্ধার করে খনন করা হবে বলে তিনি জানান।

You might also like