কক্সবাজারে গণধর্ষণের ঘটনায় মূলহোতা টর্নেডো আশিক গ্রেফতার

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

কক্সবাজার: কক্সবাজারে পর্যটন এলাকায় স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে এক নারীকে দলবদ্ধ ভাবে ধর্ষণের ঘটনায় মূলহোতা ও প্রধান আসামি মো. আশিকুল ইসলাম ওরফে টর্নেডো আশিক (২৯)কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)। র‌্যাব-৮ ও ১৫ এর একটি দল রোববার রাতে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি বাস থেকে তাকে আটক করে। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারস্থ র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

এসময় র‌্যাবের বিভিন্ন স্তরের উধর্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর কক্সবাজারে দু’দিন আত্মগোপন ছিলেন আশিক। টনের্ডো আশিক গ্রেফতার এড়াতে ভ্রু দাঁড়ি ও গোঁফ কেটে ফেলেছিলেন। কারণ তার দাড়ি গোঁফওয়ালা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। বেশভুষা পরিবর্তন করে কক্সবাজার থেকে একটি এসি বাসে ঢাকায় আসেন আশিক। পরে একটি এসি মাইক্রোবাস ভাড়া করে পটুয়াখালীতে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে তার গতিবিধি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন র‌্যাব সদস্যরা। বাস তল্লাশি করে তাকে সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয়।তিনি বলেন, অপহরণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী র‌্যাব-১৫-এর কাছে সহায়তা চেয়েছেন। পরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করা হয়। এ অপরাধে সহযোগিতার অভিযোগে ২৩ ডিসেম্বর রাতে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ‘আশিক ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন’ এ কথা জানিয়ে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, তিনি ও তার সহযোগিরা ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। ভুক্তভোগী ও তার পরিবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর লাবনী বিচ এলাকার রাস্ত থেকে তারা ভুক্তভোগী নারীকে সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যায়। আশিক ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটক করে রাখেন।

টর্নেডো আশিক কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি অপরাধী চক্রের মূলহোতা জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, কক্সবাজারে তার নিয়ন্ত্রণে ৩০ থেকে ৩৫ জন সদস্য কাজ করতো। তারা পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদকের কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন। এরআগে আশিক অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। সে ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার পর্যটক এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে ৮ মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। শিশুটির জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন। শিশুটির চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহের আশায় স্বামীসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। তারা মূলত বিত্তবান পর্যটকদের কাছে অর্থ সাহায্য চাইতেন। এ সময় ওই নারী অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হন।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশিকের নামে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। ইতিপূর্বে পুলিশ তাঁকে পাঁচবার গ্রেফতার করে। দীর্ঘদিন তিনি কারাভোগ করেছেন। গত ২২ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হন ওই পর্যটক নারী। এই ঘটনার পরের দিন ২৩ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদি হয়ে চারজনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আরও দুই থেকে তিন জনকে আসামি করা হয়।

You might also like