কমছে বন্যার পানি নগরীতে পচা-ময়লা-আবর্জনা পানিবাহিত রোগ বাড়ার আশঙ্কা

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ সিলেট নগরীতে বন্যার পানি কমলেও অনেক স্থানে আবদ্ধ হয়ে থাকা পানি নামছে না। ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত এসব পানি কালো রং ধারণ করেছে। যেসব স্থান থেকে পানি সরে গেছে সেসব স্থানে পঁচা-গলা-ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। চারদিকে গলে-পঁচে যাওয়া ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। চলাচলের সময় মানুষ নাক-মূখ ঢেকে এসব স্থান পার হচ্ছেন। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির পর সিলেট নগরীতে মারাত্মকভাবে দুর্গন্ধ ও দূষণ বেড়েছে।গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর তালতলা সিলেট ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে জলাবদ্ধতা রয়েছে। আশপাশের কিছু দোকান থেকে পানি সরে গেলেও ফায়ার সার্ভিস ভবন ও আঙ্গিনায় এখনও হাঁটুসমান পানি জমে আছে। ময়লা আবর্জনা ভেসে রয়েছে পানির উপর। কালো রং ধারণ করা পানি বাতাসের সাথে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ এলাকার তেরা মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী দোকান থেকে পানি নিষ্কাশন করছেন। তিনি বলেন, দোকানের ভেতরে পানি জমা হয়ে রয়েছে। চারপাশে জমা হয়ে থাকা পানির সাথে ময়লা আবর্জনা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই, পানি নিষ্কাশন করে সবকিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার না করে দোকানে বসা যাবেনা।নগরীর তেলিহাওরের হোটেল হিলটাউন ভবনের নিচে এখনও পানি রয়েছে। এছাড়া, তালতলা পয়েন্টে এখনও হাঁটু সমান পানি রয়েছে। কালো ছাঁই রংয়ের দুর্গন্ধযুক্ত এ পানির ওপর দিয়ে লোকজনকে পায়ে হেঁেট কিংবা রিক্সা ও অটোরিক্সা দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।

গত মঙ্গলবার থেকে সিলেট নগরীর প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে বাসিন্দাদের। অনেক বাসিন্দা বাসাবাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজন ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। পানি কমতে থাকায় ও বেশ কিছুদিন ধরে পানি একই স্থানে থাকায় পানির সঙ্গে ময়লা মিশে পঁচা গন্ধ বের হতে শুরু করেছে।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার সময় নিরাপদ পানির উৎস সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, নিরাপদ এবং পানযোগ্য পানির মারাত্মক সংকট দেখা যায়। বন্যার পানির সাথে পানিবাহিত রোগেরও আগমন ঘটে। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, চর্মরোগ, চোখের অসুখসহ প্রভৃতি সমস্যা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া বর্ষণ এবং বন্যায় মশার বংশবৃদ্ধির হার বেড়ে যায় এবং মশাবাহিত রোগসমূহ ম্যালেরিয়া, ডেংগু ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলছেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আর খুব একটা অবনতি হওয়ার আশংকা নেই। ৪/৫ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকা থেকেই পানি নেমে যাবে। গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে অপরিবর্তিত থাকে। তবে গতকাল সোমবার নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে পাউবো জানিয়েছে।

মাছুদিঘীর পারের বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, বিশুদ্ধ পানির অভাবে বড় কষ্টে আছি। বাসার মটর পানির নিচে রয়েছে। তাই রান্না ও খাবার পানির জন্য হাহাকার চলছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছেনা। অনেকে বাজার থেকে পানি কিনে জরুরী কাজ চালাচ্ছেন।নগরীর মাছিমপুর ও ছড়ারপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, অনেকে নিজের দোকান ও বাসা পরিষ্কার করছেন। তবে বন্যার পানি যাওয়ার কোনো রাস্তা না থাকায় বিভিন্ন স্থানে পানি আটকে আছে। পানিতে ভেসে আসা কলোনী এবং বস্তি এলাকার ময়লা জলাবদ্ধতার মধ্যে আটকে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।এদিকে, বন্যায় সিলেটে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে জানিয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা এস এম শাহারিয়ার বলেন, বন্যার পর ডায়রিয়া এবং চর্মরোগে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য আমরা এরইমধ্যে ১৪০টি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। এসব টিম নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের সেবায় কাজ করছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের গণসংযোগ বিভাগ জানায়, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সিসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা গত রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জুম-এর মাধ্যমে নির্দেশনা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। সভায় সিলেট মহানগর এলাকার প্লাবিত এলাকার নাগরিকদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে মহানগরের প্লাবিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, বাসা-বাড়ির তালিকা প্রণয়ন ও করণীয় বিষয়ক স্ববিস্তার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। এ লক্ষ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশন, সওজ এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়।পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মাসের ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরের নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়। এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় অনেক মানুষই বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নেন। ৫ দিন পানিবন্দী থাকার পর গত শনিবার রাত থেকে এসব এলাকার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে।

You might also like