কমরেড শ্রীকান্ত দাশ স্মরণে ভার্চুয়াল সভা
জুয়েল রাজ
সত্যবাণী
লন্ডনঃ অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, ঐক্য ন্যাপের কেন্দ্রীয় সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন কমরেড শ্রীকান্ত দাস একাধারে শিল্পী, চারণ বিপ্লবী ও প্রচার বিমুখ মানুষ ছিলেন। তিনি বলেন শ্রীকান্ত দাস সারা জীবন মানুষের জন্য, মানুষের সাথে মিশে থেকে জনগণের কল্যাণ সাধনায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য নিজের দেহ দান করে এক অনন্য সাধারণ উচ্চতা নিজেকে আসীন করেছেন।তিনি গতকাল রোববার শ্রীকান্ত সংহতি পরিষদ যুক্তরাজ্যের আয়োজনে ভার্চুয়াল স্মরণসভায় এ কথা বলেন।তিনি আরো বলেন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আজ পিছু হটছে ।সাম্প্রদায়িকতার কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করে দিচ্ছি নিজেকে। মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো বেহাত হচ্ছে।এমন সময়ে কমরেড শ্রীকান্ত দাস এর জীবন সংগ্রাম আজ বাংলাদেশে চরম প্রাসঙ্গিক।
ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন কমরেড শ্রীকান্ত ব্যক্তিজীবনের চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই, তাঁর জীবনের এতো ত্যাগের ফলাফল আমরা ভোগবো তাই আজকের নান্দনিক সুনামগঞ্জের উন্নয়নে মেডিকেল কলেজ ও নতুন প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে কোন ফ্যাকাল্টি বা বভন করলে নতুন প্রজন্ম তাঁর আত্মত্যাগের কথা শুনে উদ্ভুদ্ধ হয়ে দেশ সেবায় উন্নীত মনমানসিকতায় গড়ে উঠবে।গতকাল রোববার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্য থেকে পরিচালিত ভার্চুয়াল স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রীকান্ত সংহতি পরিষদের অন্যতম উদ্যোক্তা কমরেড আবেদ আলী আবিদ। ভার্চুয়াল স্মরণসভা পরিচালনা করেন যুব ইউনিয়ন যুক্তরাজ্যের সভাপতি ইফতেখারুল হক পপলু। স্মরণসভার শুরুতেই সূচনা বক্তব্য রাখেন শ্রীকান্ত সংহতি পরিষদের অন্যতম সংগঠক সাংবাদিক জুয়েল রাজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমরেড শ্রীকান্ত দাসের সন্তান ও যুক্তরাজ্য যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত দাস প্রশান্ত । স্মরণসভার শুরুতে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল পরিবেশন করেন উদীচী যুক্তরাজ্যের অন্যতম নেতা গণসংগীত শিল্পী গোপাল দাস। স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলার প্রাক্তন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা লোকমান আহমদ,ঐক্য ন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল মোনায়েম নেহরু, লন্ডনের প্রগতিশীল বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহমুদ এ রউফ, সিপিবি যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক নিসার আহমদ, দিরাই কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা মিহির রঞ্জন দাস, উদীচী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক, উদীচীর যুক্তরাজ্যের সভাপতি হারুনুর রশিদ, তাজপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক প্রাণকান্ত দাস, সুশাসনের জন্য
নাগরিক সুজনের সভাপতি অনাদি তালুকদার, উদীচী শাল্লা শাখার সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস, সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমন, সিপিবি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনাম আহমদ, সিপিবির যুক্তরাজ্যের সহসাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বিন আলী, সাংস্কৃতিক সংগঠক সৈয়দা নাজনীন সুলতানা শিখা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল আহমদ খান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ডঃ জহিরুল হক শাকিল, লেবার পার্টি নিউহ্যাম কাউন্সিলের ওয়াল এন্ড ওয়ার্ড সভাপতি স্বরূপ শ্যাম চৌধুরী, সত্যেন সেন স্কুল অফ পারফর্মিং আর্টস এর উদ্যোক্তা জুবের আক্তার সোহেল, সিলেটের গণসংগীত শিল্পী অংশুমান দত্ত অঞ্জন, পন্ডিত রামকানাই দাশের কন্যা কাবেরি দাস, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার প্রাক্তন সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মনির উদ্দিন, উদীচী সুনামগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্র ইউনিয়ন শাবিপ্রবি সংসদের প্রাক্তন নেতা এবং ভবতোষ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের অন্যতম উদ্যোক্তা গুরুপ্রসাদ হোম চৌধুরী দেবাশীষ প্রমুখ। ভার্চুয়াল স্মরণ সভা কে সফল করে তোলার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা যুক্ত হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি আয়োজন পরিষদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য কমরেড শ্রীকান্ত দাশ জন্ম – ৫জুলাই ১৯২৪ মৃত্যু – ১৯নভেম্বর ২০০৯ ইংরেজী।
আজীবন ত্যাগব্রতী বিপ্লবী,গণসংগীত শিল্পী,মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং মরনোত্তর দেহদানকারী কমরেড শ্রীকান্ত দাশ সুনামগঞ্জ জেলায় শাল্লা উপজেলার আঙ্গারুয়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা যোগেন্দ্র কুমার দাশ ও মাতা জ্ঞানদায়িনী দাশ।
কমরেড শ্রীকান্ত দাসের জন্ম একটি সমাজ-সচেতন অগ্রসর চিন্তার পরিবেশে। পিতার কাছ থেকে মূলত তাঁর সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া। তারপর আমৃত্যু একটি শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন প্রশ্নাতীত নিষ্ঠা ও সততার সাথে। কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবী শৃঙ্খলা বহির্ভূত কোন কিছুর সাথে আপোষ করেননি কখনো। শোষণ ও দারিদ্র –লাঞ্ছিত এই সমাজের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক দ্রোহী সংশপ্তক। মানুষকে ভালোবাসার এক অমিত শক্তিতে বলীয়ান ছিলেন তিনি। এই ভালোবাসার জোরেই তিনি নিজ দেহ দান করে গেছেন চিকিৎসাশাস্ত্রের শিক্ষা ও গবেষণার কাজে। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে নিজ উপজেলার অপারেশন থেকে ভারতের শরণার্থী ক্যাম্প পর্যন্ত শরণার্থীদের সাহায্যে তাঁর কন্ঠ থেমে থাকেনি। লিখে গিয়েছেন অর্ধশত গণসংগীতসহ, মুক্তিযুদ্ধের অনন্য দলিল ঐতিহাসিক নাটক “ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যন্ত অঞ্চল “।