কমলগঞ্জবাসীর ভয়াল স্মৃতির ১৪ জুন ২৫ বছরেও জুটেনি ক্ষতিপূরণ
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ বছর ঘুরে আসে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জবাসীর ভয়াল স্মৃতির ১৪ জুন। মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৫ বছর আজ। সেদিন মধ্যরাতে বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়া ও এর পাশের মাগুরছড়া এলাকা। মুহূর্তে আকাশচুম্বি কালো ধোঁয়া আর আগুনের লেলিহান শিখা দেখে দিক-বিদিক ছুটাছুটি শুরু করেন এলাকাবাসী। অপূরণীয় ক্ষতি হয় বনের পশুপাখি ও নানান জাতের উদ্ভিদসহ জীব বৈচিত্রের। তবে ২৫ বছরেও জনসম্মুখে সেদিনের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রকাশ হয়নি, আদায় হয়নি ক্ষতিপূরণও।১৯৯৭ সালের ১৪জুন মধ্যরাত ১টা ৪৫মিনিটে মাগুরছড়া গ্যাসকূপে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা কমলগঞ্জ। সেদিন প্রায় ৫০০ফুট উচ্চতায় ওঠা আগুনের লেলিহান শিখা লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল বিস্তীর্ণ বনভূমি এলাকা। আগুনের শিখায় গ্যাসফিল্ড সংলগ্ন লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্ট, মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি, জীববৈচিত্র, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, ফুলবাড়ী চা বাগান, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ এবং কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ সেই অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গভীর বন ও এর সাহচার্যে থাকা বিপুল সংখ্যক জীববৈচিত্র। ক্ষতির মুখোমুখি হয় রেল ও সড়কপথ, বিদ্যুৎ লাইনসহ এই অঞ্চলের অসংখ্য স্থাপনা। কিন্তু দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মার্কিন গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি বন বিভাগ। পূর্ণ ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ইউনিকলের কাছে হস্তান্তরের পর সর্বশেষ শেভরনের কাছে বিক্রি হয়েছে এই গ্যাসক্ষেত্র।
শেভরন ২০০৮ সালে ওই বনে ত্রি-মাত্রিক ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করে। এতেও স্থানীয়ভাবে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০১২ সালে শেভরন মৌলভীবাজার ১৪নং ব্লকের অধীনে নূরজাহান, ফুলবাড়ি এবং জাগছড়া চা বাগানের সবুজ বেষ্টনী কেটে কূপ খননের পর এসব কূপ থেকে চা বাগানের ভেতর দিয়ে ড্রেন খনন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে উত্তোলিত গ্যাস কালাছড়া হয়ে রশীদপুর গ্রিডে স্থানান্তর করছে।পরিবেশ সংরক্ষণবাদীদের তথ্য মতে, সে সময় বিস্ফোরণে ৬৩ প্রজাতির পশু-পাখির বিনাশ হয়। সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ১৬৩ দিন বন্ধ থাকে। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। মার্কিন অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও বন বিভাগ কোনো ক্ষতিপুরণ পায়নি। ফিরে আসেনি এখনো প্রাকৃতিক বনের স্বাভাবিক পরিবেশ।বিভিন্ন সংগঠন মাগুরছড়া দুর্ঘটনার যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে আন্দোলন পরিচালনা করে এলেও দীর্ঘ ২৫ বছরেও ক্ষতিগ্রস্তদের দাবিকৃত ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। তৎকালীন সরকারও ক্ষতিপূরণ আদায়ে জোরালো ভূমিকা পালন করেনি। ফলে মাগুরছড়া দুর্ঘটনার ২৫ বছর পূর্ণ হলেও আজো ক্ষতিপূরণ না পেয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে ক্ষতিগ্রস্তরা।