কমলগঞ্জে শীতে বাড়ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াঃ জনদুর্ভোগ চরমে

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় শীতের প্রাদুর্ভাব থেকে বাড়ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া। প্রচন্ড শীতে কাবু হয়ে পড়ছেন চা শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষ। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে গরম কাপড়েরও অভাব রয়েছে।
কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, ২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ছিল ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গাছ-গাছালি ও সবুজে ঘেরা থাকায় চা বাগানসমুহে সাধারণত শীত, মৃদু বাতাস ও কু‚য়াশাও তুলনামূলক বেশি থাকে। ফলে প্রচন্ড ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েন চা শ্রমিকরা। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে হাড়কাঁপানো শীতে তারা খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন। কয়েক বছর আগেও শ্রমিকদের চাহিদা অনুযায়ী বাগান কর্তৃপক্ষ শীত নিবারণে চটের বস্তা বিতরণ করলেও এখন আর কোন কিছু দেয়া হয় না। বস্তি ও চা বাগানে শীতে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
চা শ্রমিকরা জানান, স্বল্প আয় থাকায় গরম কাপড় কেনা তাদের অধিকাংশেরই সামর্থ্যের বাইরে। শীত নিবারণে এসব পরিবারেরে সদস্যরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়খুঁটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে গরমের ভাপ লাগান।
শমশেরনগর দেওছড়া চা বাগানের জনৈক নারী শ্রমিক বলেন, ‘চা বাগানে হামরা শরমিকদের মাত্র ১৭০ টেকা হাজরি পাই। এ টাকা থেকে কারেন্ট বিল, মন্দির চাঁদা, ইউনিয়নের চাঁদা কাটে। এরপরে হামরা সপ্তাহে ৮শ’ টেকা পেয়ে পরিবারে মধ্যে খাবার দাবার-ই করতে পারি না! হামদের সবসময়ই কষ্ঠ থাকে আর ঠান্ডায় বেশি কষ্ট হচ্ছে।’
শমশেরনগর চা বাগানের অন্য শ্রমিক বলেন, দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে ৫/৭ সদস্যের পরিবারের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আমরা চা শ্রমিকরা খাইবো কি আর কাপড়-চোপড় কিনবোই বা কি?  আর বাজারে জিনিসপত্রের দামও যে হারে বাড়ছে তাতে গরম কাপড় কেনার মোটেও সাধ্য নেই। তারা আরও বলেন, শীতে খড়কুঁটো জ্বালিয়ে ঘরের ভেতরে গরম করার চেষ্টা করি।
শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক এক নেতা, দেওছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি এবং চা শ্রমিক সংঘের নেতা বলেন, শীতের সময়ে চা শ্রমিকদের মধ্যে বাগান কর্তৃপক্ষ কোন শীতবস্ত্র বিতরণ করেন না। অধিকাংশ শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা শীতে কষ্ট পোহাচ্ছেন। তাছাড়া চা বাগানগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাও নাজুক। ডিসপেনসারিগুলোতে ভালো চিকিৎসা সুবিধাও নেই। সব মিলিয়ে চা শ্রমিকরা ভালো নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, শীতের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এদের মধ্যে চা বাগানে বেশি।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

You might also like