করোনার দুঃসময়ের সুযোগে বিএনপি ফায়দা লুটতে চাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

নিউজডেস্ক
সত্যবাণী

জাতীয় সংসদভবন থেকেঃ নিজেদের অপকর্মের কারণে বিএনপি মানুষের থেকে দূরে সরে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে সরকার প্রধান বলেন,করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।তারা কষ্টে আছেন।এই সুযোগে বিএনপি চাচ্ছে— মানুষের দুঃসময়টাকে কাজে লাগিয়ে সরকারের বদনাম করতে।নিজেরা ফায়দা লুটতে।তবে মানুষ এখন অন্ধ নয়।তারা সব দেখে-জানে।সোমবার (১৬ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদনেতা এসব কথা বলেন।এর আগে বিএনপির হারুনুর রশীদ রাজধানীতে বাসে আগুন দেওয়ার প্রসঙ্গটি নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত ঘটান।তিনি ওই ঘটনার সংসদীয় তদন্ত দাবি করেন।

পরে শেখ হাসিনা বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাব দেন।তাকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,উনাকে সামনের সিটে বসিয়েছি।উনি কথা বলেন।কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এমন এমন কথাগুলো তোলেন, সব সময় তার উত্তরও দেই না। আজকে যেভাবে কথাটা তুললেন,বোধহয় নিজেদের পার্টির সম্পর্কে তথ্যগুলো জেনে নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল।শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন।আমরা প্রশ্ন হচ্ছে,তারা আদৌ নির্বাচন করে কিনা? নির্বাচনে উনারা অংশ নেন। নমিনেশন নিচ্ছেন, যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের না প্রচার, না কাজ। নির্বাচনের দিনে কোথাও একটা এজেন্টও ঠিকমতো দেবে না। কোনও কিছু করবে না। একটা সময় পর নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করেই বলে নির্বাচন ঠিক হচ্ছে না। নির্বাচন যদি করতে হয়, সঠিকভাবে যেন করেন। আমরাও রাজনীতি করে আসছি। আমরা মানুষ চিনি।’

বিএনপি অনেক আগেই জনগণের সমর্থন হারিয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।তারপর থেকে তাদের অপকর্মের কারণে মানুষের কাছ থেকে আরও দূরে সরে গেছে। এটা হলো বাস্তবতা। ২০০১ সালে চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে, সন্ত্রাস-খুন-নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে এমন কোনও অপরাধ নাই যে, তারা করেনি। তারপর আসলো তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মানুষ পোড়ানো, খুন করা তাদের আন্দোলন।ঢাকার নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি সিটে নির্বাচন হচ্ছে, পট করে কয়েকটা বাসে আগুন দেওয়া। তারা নিজেরা আগুন দিয়ে দোষ দিচ্ছে এটা নাকি সরকারি এজেন্ট। আমরা আগুন দেবো কী কারণে? আমরা ক্ষমতায় আছি। আমরা আগুন দিয়ে আমাদের সরকারকে বদনামের ভাগিদার করবো কেন? মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া তো আমাদের দায়িত্ব। টেকনোলজির কারণে হাতে হাতে ধরা পড়ে যাচ্ছে কারা আগুন দিচ্ছে।নিজেরা আগুন-টাগুন দিয়ে পার্লামেন্টে এসে সরকারকে দোষারোপ করা হলো। উদরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো, এটা তাদের অভ্যাস।’

বিএনপির গোড়ায় গলদ রয়েছে অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছেন হত্যা-ক্যু- ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তার ক্ষমতা দখল হচ্ছে খুনের মধ্যদিয়ে। তিনি যে পার্টি সৃষ্টি করে গেছেন, তারা অস্ত্র-সন্ত্রাসের রাজনীতি ভালো বুঝে। সন্ত্রাস, বাংলাভাই সৃষ্টি থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, দুর্নীতি করা, অর্থপাচার নানা ধরনের কর্মকাণ্ড তারা করে যাচ্ছে। কোনও কাজ নেই এভাবে বাস আগুন দিয়ে পোড়ানোর। কিন্তু তারা করছে, নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই। মানুষের ভোট পাচ্ছে না। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস হারিয়েছে। তারা ভোটে হারবে না কেন? দলের নেতা বানিয়েছে কাকে? মামলার আসামি, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি সাজাপ্রাপ্ত। যে দেশ থেকে পলাতক, তাকে বানানো হলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বাংলাদেশে বিএনপির এমন কোনও যোগ্য নেতা নেই যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে পারে? ফেরারি খুনের মামলার আসামিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তাদের নেত্রী তিনিও সেই এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ করা সাজাপ্রাপ্ত। তারপরও তাকে বাসায় থাকতে দেওয়া হয়েছে।’

বিএনপির এমপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সংসদ একটি পবিত্র জায়গা। বিএনপির সদস্যকে বলবো, এইভাবে এখানে অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো। এটা মানুষ বিশ্বাস করবে না। আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডটা যেন বিএনপি বন্ধ করে। এটাই আমার আবেদন থাকবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তারা কষ্টে আছেন। তাদের সাহায্য করে যেতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, অর্থনীতির চাকাটা সচল রাখতে। আর সেখানে তারা এই সুযোগে চাচ্ছে— মানুষের দুঃসময়টাকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে বদনাম করা। আর নিজেদের ফায়দা লুটা। এই ফায়দাটা লুটতে পারবে কিনা জানি না। কারণ, মানুষ এখন অন্ধ নয়। তারা সব দেখে-জানে। এ বিষয়টি বিএনপি নেতাদের বুঝা উচিত। টেকনোলজির কারণে সব ধরা পড়ে যায়। আমার মনে হয়, তারা আর অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে না।বক্তব্য দেওয়ার আগে শেখ হাসিনা বাসে আগুন দেওয়া ইস্যুতে বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরী ও দলের একজন নারী নেত্রীর টেলিফোনের কথোপকথনের অডিও সংসদে বাজিয়ে শোনান।

এদিকে ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এমপি হারুন বলেন,সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী গতকাল (রবিবার) সংসদে গাড়ি পোড়ানোর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।’ এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও আমাদের মহাসচিব ফখরুল সাহেবও কথা বলেছেন। উনি (ফখরুল) বলেছেন, ‘সরকারের এজেন্টদের মাধ্যমে আগুন দেওয়া হয়েছে।’ ওই ঘটনায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা হয়েছে। পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন আসছে। পত্রিকায় এসেছে, মামলার কথা বাদী জানেই না। পুলিশ বলছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, ইশরাক হোসেন কোভিড আক্রান্ত। জুয়েল কোভিড আক্রান্ত। আমাদের ছাত্রদলের আরেকজন নেতা চেন্নাই হাসপাতালে এক বছর ধরে চিকিৎসধীন। তারা কী করে মামলার আসামি হয়? মুদিখানার দোকানে একজন বলেছিলেন, তাকে আসামি করা হয়েছে। এটা জুলুম। অন্যায়। আমরাও চাই, একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ না করে অবশ্যই তদন্তের মাধ্যমে… ।স্পিকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই এমপি বলেন,আমি অনুরোধ করবো, একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করুন। সরকারি দলের যাকে যাকে খুশি আপনি রাখেন। বিরোধী দলের তিন জন সদস্য রাখেন। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সাত দিনের মধ্যে এই তথ্য উৎঘাটিত হওয়া দরকার এবং এটি জাতির সামনে উপস্থিত হওয়া দরকার।’

You might also like