করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে আলোচিত শতবর্ষী ক্যাপ্টেন টম মুর মারাও গেলেন করোনায়

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

লন্ডনঃ যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রবীণ সেনা কর্মকর্তা, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যিনি হেঁটে হেঁটে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করে পরিণত হয়েছিলেন জাতীয় প্রতীকে, সেই টম মুর আর নেই।সম্প্রতি কয়েকসপ্তাহ ধরে নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন টম মুর। গত সপ্তাহে তার করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ ধরা পড়ে।গত ৩১ জানুয়ারিতে মুরকে হাসপাতালে ভর্তির কথা টুইটারে জানিয়েছিলেন তার মেয়ে। এরপর অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার হাসপাতালেই তিনি মারা যান।

টম মুরের টুইটার একাউন্ট থেকেই তার মৃত্যুর খবর জাননো হয়েছে বলে জানায় ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’। তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া ক্যাপ্টেন মুরকে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বের ‘বীর’ বলে বর্ণনা করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।মুর গত গ্রীষ্মে ঘোষণা দিয়েছিলেন নিজের শততম জন্মদিনের (৩০ এপ্রিল) আগে নিজের বাগানের ২৫ মিটার জুড়ে হেঁটে ১০০টি পাক দেবেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ‘চ্যারিটিজ টুগেদার’ এর জন্য ১০০০ পাউন্ডের তহবিল জোগাড় করা।

নিতম্বের হাড় ভেঙে যাওয়ার পর থেকে নিত্যদিনের সঙ্গী চাকাযুক্ত ক্র্যাচে ভর করেই টম ‍সেই চক্কর কেটেছিলেন; আর শততম চক্কর শেষ করার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান তিনি।তহবিল গঠনের জন্য ‘জাস্টগিভিং’ ওয়েবসাইটে খোলা তার পেইজে ততক্ষণে অনুদান দিয়ে ফেলেন আট লাখ মানুষ; জমা হয় এক কোটি ২০ লাখ পাউন্ড। এরপরও থেমে থাকেনি। ওইদিন বিকাল নাগাদ তহবিলে জমা হয় এক কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড। আর পরদিন ১৭ এপ্রিল সকালে অনুদান এক কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড ছাড়িয়ে যায়।

প্রিন্স উইলিয়ামও তার পাতায় অর্থ সাহায্য দিয়েছিলেন। দ্রুতই তার তহবিলে প্রায় তিন কোটি ২৮ লাখ পাউন্ড জমা পড়ে। ততদিনে তিনি বিশ্বতারকায় পরিণত হন। তার হাঁটার দৃশ্য বিবিসি, সিএনএন, এনবিসি এবং আল জাজিরার মত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়।ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলোর প্রথমপাতায় তাকে নিয়ে খবর প্রকাশ পায়। ক্যাপ্টেন মুরের মৃত্যুতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের টুইটার একাউন্ট থেকেও শোক জানানো হয়েছে।করোনাভাইরাস মাহামারীর বিরুদ্ধে অনবদ্য লড়াইয়ের জন্য তারকাখ্যাতি পাওয়া মুরকে অবশ্য শেষ দিকে কিছুটা সমালোচনাও সইতে হয়েছে।নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, গত ডিসেম্বরে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র বার্বাডোজে বেড়াতে গিয়েছিলেন। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হয়েছিল।

বলা হয়েছিল, ১০০ বছরের একজন বৃদ্ধ কেন এই সময়ে বিদেশে ছুটি কাটাতে গেলেন। যেখানে যুক্তরাজ্য সরকার মহামারীর কারণে জনগণকে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে।মুরের পক্ষেও অবশ্য কথা বলার লোকের অভাব ছিল না। তাদের যুক্তি ছিল, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত ১৯ ডিসেম্বর দেশে নতুন করে কঠোর লকডাউন আরোপের আগেই তিনি বিদেশে যান।১৮ ডিসেম্বর মুরের টুইটার পেজে তার শর্টস পরা একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘বার্বাডোজের রোদে একটি সুন্দর পারিবারিক দিন উপভোগ করছি’।ওই সফরের পর ক্যাপ্টেন মুর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ‍কিনা তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

You might also like