করোনায় বিশ্বে আরো ১০ কোটি শ্রমিক দারিদ্র্যে নিপতিত

আন্তজার্তিক ডেস্ক
সত্যবাণী

জেনেভা,সুইজারল্যান্ডঃ গত দেড় বছর ধরে চলমান মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় কর্মসংস্থান হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছেন বিশ্বের ১০ কোটিরও অধিক শ্রমিক। বুধবার (২ জুন) জাতিসংঘের শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে তথ্যটি জানিয়েছে।চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে অন্তত ৭ কোটি ৫০ লাখ কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে বলেও শঙ্কা জানানো হয়েছে আইএলওর প্রতিবেদনে। সেখানে আরও বলা হয়, মহামারি অব্যাহত থাকলে আগামী বছর আরও দুই কোটি ৩০ লাখ কর্মসংস্থান কমে যাবে।আইএলও প্রধান গাই রাইডার সাংবাদিকদের বলেন, করোনা মহামারি শুধু জনস্বাস্থ্যকেই বিপন্ন করছে না, বরং কর্মসংস্থান ও মানবিক জীবনেও বিপর্যয়ে ডেকে এনেছে।আইএলওর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৭০ লাখ (১৮৭ মিলিয়ন)। ২০২২ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২০ কোটি ৫০ লাখে (২০৫ মিলিয়ন)।

তবে আইএলও প্রধান বলছেন, দাপ্তরিক পরিসংখ্যানের বেয়ে বাস্তব অবস্থা অনেক বেশি খারাপ। কারণ মহামারিতে শুধু যে কর্মসংস্থান হারিয়েছে, তা ই নয়, বরং কর্ম ঘণ্টাও হ্রাস পেয়েছে মারাত্মকভাবে।আইএলওর তথ্য মতে, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মঘণ্টা স্রেফ হারিয়ে গেছে। এই পরিমাণ কর্মঘণ্টা ২৫ কোটি ৫০ লাখ (২৫৫ মিলিয়ন) সার্বক্ষণিক চাকরির (ফুলটাইম জব) সমান।বিশ্বজুড়ে মহামারি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কর্মসংস্থানের বাজার এর ইতিবাচক প্রভাব থেকে এখনও অনেক দূরে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আইএলও জানিয়েছে, চলতি বছর যে পরিমাণ কর্মঘণ্টা হারাবে, সেটি ১০ কোটি সার্বক্ষণিক চাকরির সমান।

কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট কর্মহীনতার কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় গত দেড় বছরে দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র মানুষদের সংখ্যায় যুক্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শ্রমিক। এর অর্থ, কর্মহীন এসব শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের জন্য ৩ দশমিক ২০ ডলারের নীচে ব্যয় করছেন। এর বেশি খরচ করার মতো সাধ্য তাদের বর্তমানে নেই।আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বা কর্মহীন শ্রমিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন। এই খাতগুলোতে সাধারণত এমনিতেই নিশ্চয়তা কম থাক। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে কর্মহীন শ্রমিকদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকদের শতকরা হার অনেক বেশি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদদের একাংশ অবশ্য আশা করছেন, যেহেতু করোনা টিকা বাজারে এসে গেছে এবং বিশ্বজুড়ে মানুষ ইতোমধ্যে প্রাণঘাতী এই রোগের সঙ্গে ‘মানিয়ে নেওয়া’ অনেকটাই রপ্ত করতে পারছে, সামনের দিনে এই অবস্থা কেটে যাবে। তবে আইএলও এতটা আশাবাদী হতে পারছে না।সংস্থাটির প্রধান গাই রাইডার সাংবাদিকদের বলেছেন, যদি রাষ্ট্রগুলো নতুন চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষরা যদি প্রয়োজনীয় সহায়তা না পায় এবং মহামারির কারণে অর্থনীতির যে খাতগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পুনর্গঠনে মনোযোগ না দেয়, তাহলে এই বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও অসাম্য আরও বেশি কয়েক বছর আমাদের তাড়া করবে।সূত্র : এএফপি

You might also like