করোনায় মারা গেলেন ভাষা সৈনিক সমেলা রহমান

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

নীলফামারী: নীলফামারীর নারী ভাষা সৈনিক সমেলা রহমান (৮৭) আর নেই।আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ অমল রায়, ভাষা সৈনিক সমেলা রহমানের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।জেলা শহরের শাহীপাড়া কলেজ সড়কের স্থায়ী বাসিন্দা ভাষা সৈনিক ও সঙ্গীতশিল্পী প্রয়াত ওয়ালিউর রহমানের সহধর্মিণী ছিলেন ভাষা সৈনিক সমেলা রহমান। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের নাট্য অভিনেত্রী সাহানা সুমীর মা সমেলা রহমান মৃত্যু কালে ৪ মেয়ে ৩ ছেলে ও নাতী নাতনী এবং অসংখ্য গুহগ্রাহী রেখে গেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানানো হয় চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারী প্রথমডোজ ও ১৭ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ করোনা টিকা গ্রহণ করেছিলেন সমেলা রহমান। চলতি বছরের গত ৭ জুলাই র্যা পিট এন্টিজেন টেষ্টে তিনি নীলফামারীতে করোনাভাইরামে আক্রান্ত হন। পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন এই ভাষা সৈনিক। গত ৯ জুলাই তাঁকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে সেন্টার অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। তার অক্সিজেন লেবেল ৮০ নিচে নেমে এসেছিল বলে জানান জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ অমল রায়।সমেলা রহমানের ছোট ছেলে সুমন রহমান জানান আজ বৃহস্পতিবার বাদ আছর নামাজে জানাজা শেষে শহরের পৌর কবরস্থানে মাকে দাফন করা হবে। সমেলা রহমানের মৃত্যুকে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন নীলফামারী সদর আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নুর, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।

নীলফামারীতে ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, নীলফামারীতে মহান ভাষা আন্দোলনে দবির উদ্দিন আহমেদ, আবু নাজেম মোহাম্মদ আলী, আমেনা বেগম, খয়রাত হোসেন, শফিয়ার রহমান, এ্যাড. কাজী মাহবুবার রহমান দুলু, খাদেমুল চৌধুরী, অলিয়ার রহমান, আব্বাস আলী, ইউছুফ আলী, আব্দুল গনি, খোরশেদ আলম, এমএ ছাত্তার আলী, ডাঃ ফজলুল হক, সামসুল হক, শওকত আলী, ফজলুল করিম সরকার, সমেলা রহমান, হালিমা বেগম, ফওজিয়া বেগম বেবী, হাসিনা বেগম, তৈয়বা খানম, মিসেস বুলু চৌধুরী, জাহেদা বেগম, জাকিয়া সুলতানা, রেজিয়া বানু, জেবুন নাহার ছিলেন সোচ্চার। যাদের নাম নীলফামারীর সরকারী কলেজের শহীদ মিনারে খোদাই করা রয়েছে। এই নামের তালিকায় ২৭ জনের মধ্যে রয়েছেন ১১ জন নারী। এদের মধ্যে শুধু একমাত্র বেঁচে ছিলেন সমেলা রহমান। তিনি আজ প্রাণঘাতি করোনায় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন।

চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারী পালনের সময় সমেলা রহমান ভাষা আন্দোলন নিয়ে কথা বলার সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন তার বাবার নাম সমজান আলী এবং মায়ের নাম সফিরন-নেছা। ১৯৫২ সালে তিনি নীলফামারী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী ছিলেন। সে সময়ে ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। সে সময় নীলফামারীতে অন্যদের সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচীতে তিনি অংশ নিয়েছি। ভাষার দাবি আদায়ে ছিলেন অনড় এবং আপসহীন। করেছিলেন মিছিল ও মিটিং। অনেক কটূক্তি আর লাঞ্ছনা উপেক্ষা করে ভাষার দাবিতে রাজপথে নেমেছিলাম। সেই গর্বিত ইতিহাসের অংশ আমি একজন।

You might also like