কােরআন খতমের অনুভূতি

আকবর হােসেন

আলহামদুলিল্লাহ।জীবনে প্রথমবারের মতাে আজ পবিত্র কােরআন খতম করে ভীষণ আনন্দিত হলাম,শিহরিত হলাম।এটি একটি বিশাল অর্জন আমার মতাে নাখান্দার জন্য। যে আসমানী কিতাবকে আমাদের সমাজে রাতভর মাইক বাজিয়ে শুধু তেলাওয়াত আর দােআ তাবিজের জন্য রাখা হয়েছে তেকে উঠিয়ে, সেই কিতাবকে বুঝে পড়া চাটটিখানি কথা নয়। খতম করেছি আরবীর সাথে সহজ সরল বাংলা অনুবাদসহ। প্রতি বছরই রােজায় কােরআন পড়া হয়। কিন্তু খতম করতে পারি না।যারা করতে পারেন তাদের প্রতি ঈর্ষা হয়। এবার লকডাউন এক অপার সুযােগ এনে দেয়।জিলাবী, বিরিয়ানী ইত্যাদি বানানাের প্র্যাকটিসের পাশাপাশি কােরআন খতম।যাইহােক কােরআন খতম খুবই চ্যালেন্জিং ছিলাে। প্রতিদিনের পারার সাথে মিলাতে পারছিলামনা। তবে ঘর থেকে কাজের কারণে সময় বাঁচানাে যাচ্ছিলাে। মিটিং, সমাবেশ নেই, বাইরে ইফতার পার্টি নেই,এক চমৎকার রামাদ্বান কাটালাম ঘরে থেকে। আল্লাহতাআলার অশেষ রহমতে কােরআন খতম সম্ভব হয়েছে।তেলাওয়াত শুরু করি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় রােজা থেকে তারপর প্রতিদিনই পড়তাম।আজ কাজ থেকে ছুটি নিয়েছিলাম যাতে ইফতারের আগেই শেষ করতে পারি। কারণ চাঁদ দেখা গেলে কাল শনিবার ঈদ হয়ে যেতে পারে।খবর পেলাম আজ চাঁদ দেখা যায়নি,তাই ঈদ হবে রােববার। যাক রহমতের মাসের আরাে একদিন পাওয়া গেলাে। কােরআন খতম করে মনের অনুভূতির কথা লিখে শেষ করার মতাে নয়।

সবার সাথে শেয়ার করে নিজের খুশির খবর জানান দিতে চাই। তবে সবার কাছে একটি নিবেদন আছে আমার। অন্ততঃ জীবনে একবারের জন্যে হলেও অর্থ বুঝে কােরআন পড়েন। আপনার চােখ খুলে যাবে। অনেক কিছু জানবেন। কেরআন বুঝুন, নিজেকে শুধরে নেবার পথ পাবেন, আলাকিত জীবনের সন্ধান পাবেন, শ্বাশতঃ জ্ঞানের জগতে প্রবেশ করবেন। কােরআন এসেছে অন্ধকার থেকে আলাের পথ দেখাতে। এই কােরআন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বমানবতাকে পথ দেখাতে আল্লাহতাআলা প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাঃ প্রতি নাজিল করেছেন। এই কিতাব আজাে পর্যন্ত অবিকৃত অবস্থায় আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। এই কিতাব কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। নকুল কুমারের একটি গানের কথা মনে পড়ে গেলাে – বিশ্ব থেকে হারাবেনা পবিত্র কােরআন।

আমার কাছে খুবই বিস্ময়কর লেগেছে আল্লাহতায়ালা কেমন শব্দচয়ন করেছেন। কােন কােন সুরায় কবিতার মতাে ছন্দমিল, ভাব, উপমা উৎপ্রেক্ষা ভাবনার জগতকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়েছে। এটা কােন মানুষের বানানাে গ্রন্থ নয়। এজন্যই কােরআনের সুরার মতাে একটি সুরা তৈরির চ্যালেন্জ আজাে পর্যন্ত গ্রহনের সাহস পায়নি কেউ। জান্নাতের অপরূপ বর্ণনা পড়ে যেমন ভালাে লেগেছে তেমনি জাহান্নামের ভয়াবহ বর্ণনায় আঁতকে উঠেছি। সবচে’ বেশী ভালাে লেগেছে – বারবার এসেছে জান্নাতের নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত থাকবে, তাসনীম, সালসাবিল, জানযাবিল, হরেক রকমের ফলমুল, পানীয়, দুধ, মধু , জান্নাতীদের আসন, উঁচু উঁচু বিশাল, মখমল কার্পেটে মােড়া, রেশমী কাপড় পরিধান, সঙ্গী, সঙ্গিনী ইত্যাদির মনমাতানাে বর্ণনায়। এক কথায় জান্নাতে যা চাইবেন তাই পাবেন। আপনার কী চাই? একেবারে মুখের কাছে রেডি। আল্লাহতাআলা আমাদেরকে জান্নাতে দিতে চান কিন্তু শর্ত হচ্ছে তাঁর পথে চলতে হবে। তাঁর পথের সন্ধান দিতে আমাদেরকে সাবধান করতে এবং গাইড করতে যুগে যুগে নাবী রাসূল পাঠানাে হয়েছে। নবীদের কথা মানলেই আল্লাহকে পাওয়া যাবে। যারা এর বিরােধিতা করেছে তাদের পরিনামের কথা বলে তিনি আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। ফেরাউন, নমরুদ, আদ সামুদ জাতির দাম্ভিকতা ও তাদের ধ্বংসের কথা বারবার এসেছে। আশচর্যের বিষয় হচ্ছে মুসা আঃ এর কথা এতাে এতাে বার এসেছে। চমৎকার সব বর্ণনা। আমি হিসাবই রাখতে পারিনি।

কতবার আবেগাপ্লুত হয়েছি। এই বুঝি এই আয়াত আমাকে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহতাআলা এখনই নাজিল করেছেন। ইউসুফ আঃ এবং তার ভাইদের ব্যবহার, তাঁর ক্ষমতায় মসনদে অধিষ্ঠিত হবার ঘটনা বিশেষ করে আজীজের স্ত্রীর অপবাদ ও তাঁর প্রতিক্রিয়ার ঘটনা পড়লে মনে হবে যেনাে আপনি কােন উপন্যাস পড়ছেন।
কােরআনে আদেশ নিষেধ অনেক কিছুই আছে কিন্তু আপনি নবীজীর জীবন অনুসরণ করলেই সঠিক রাস্তা পেয়ে যাবেন। কারণ তাঁর জীবনই হচ্ছে কােরআনের ব্যাখ্যা। কােরআন যেনাে আল্লাহতাআলার সাথে নবীজীর কথোপকথন।সময়ের প্রয়ােজনে যখন যেটা প্রয়ােজন আল্লাহতাআলা তাঁর নবীকে বলে দিয়েছেন।বিশ্বাস করুন আপনি একেবারেই বােরড হবেন না। একের পর এক বর্ণনা আপনার মনকে অমিয় সুধায় ভরিয়ে দেবে। আপনি যা পড়বেন তাই ভাবতে থাকবেন আর মনে মনে বলবেন এতাে দেখি এক আজব কিতাব যেখানে ইতিহাস, কাব্য, সাইন্স, রাষ্ট্র, আইনকানুন সবই যেনাে স্থান পেয়েছে। যেনাে একের ভেতর বহু মনিমুক্তার সমারােহ।তাই আর দেরী না করে এখনােই নিয়ত করে ফেলুন যারা এখনাে অর্থসহ পড়তে পারেননি। ফ্লুয়েন্টলি আরবী পড়তে না পারলে তা ভালােভাবে পড়তে শিখুন কিন্তু অর্থটা আগে পড়ে নিন। আল্লাহতাআলা আমাদের ভূলত্রুটিগুলাে মাফ করে দিন। সঠিক পথে চলার তওফিক দিন, দুনিয়াবাসীকে বিপদমুক্ত করুন এই দােআ করি। আজ কােরআন শেষ করে একটু খারাপও লেগেছে এই ভেবে যে জীবনের এতােটি দিবস চলে গেলাে কিন্তু জীবনের সঠিক পথ দেখানাে কিতাব আরাে আগে কেনাে এভাবে পড়তে পারলাম না। এ যেনাে প্রবাসী ভাইয়ের লেখা ভিন ভাষার চিঠির মতাে কিংবা ঔষধের নাম লিখা কাগজের মতাে যা বুঝারও চেষ্টা করলাম না; শুধু চিঠিকে এতােদিন চুমুই খেয়ে গেলাম আর কাগজ ধুয়ে পানিই খেলাম। কাগজে লিখা ঔষধ কিনে খেলাম না বা চিঠির ভাষা বুঝে কােন কাজ করলাম না। সুতরাং আমরা যে অসুস্থ সেই অসুস্থই রয়ে গেলাম। কিন্তু মনে রাখবেন কােরআন হচ্ছে শিফা। না বুঝে পড়লেও শান্তি পাবেন। কিন্তু জীবন জিগ্্সার জবাব ও কােরআন থেকেই নিতে হবে। অবহেলা করলে ধরা খেয়ে যাবাে।

পরিশষে সবাইকে কােরআনের উদাত্ত আহবান – ওয়লাক্বাদ ইয়াস্সারনাল কােরআনা লিজ জিকির ফাহল মিম মুদ্দাকির স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।আল্লাহতাআলা কােরআনকে সহজ করে দিয়েছেন, কে আছাে এত্থেকে শিক্ষা নেবার? জার্মানীতে অনেক বছর আগে আমি যখন কােরআনের এই আয়াত বারবার তেলাওয়াত করছিলাম তখন চাদ দেশের আমার এক বন্ধু মােস্তাফা আদাম পাশের রুম থেকে এর অর্থ অনুধাবনের কথা বলেছিলাে। সেই থেকে আজাে যখন এই আয়াত পড়ি তখন তার কথা মনে হয়। রােববার ঈদ। এ বছর করােনা ভাইরাসের কারণে মসজিদে কিংবা ঈদগাহে নামাজ হবে না, কারাে বাসায় কিংবা মনের মতাে ঘুরে বেড়ানাে যাবে না। সত্যিই এক ব্যাতিক্রমী ঈদ। তবে কােন কােন স্কলার ঘরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুতবা ছাড়া ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে বলে অভিমত দিয়েছেন। কারাে কারাে এর বিপক্ষেও মতামত আছে। আমরা নামাজ পড়তে চাই। এক নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হবে।ভাইরাসের কবলে পড়ে লকডাউনে আমরা জীবন নিয়ে অন্যরকম ভাবতে শিখলাম।সেটাও কম কিসে! ভাইরাস আমাদের এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে।

সবাইকে ঈদ মােবারক

ও মন রমজানের ঐ রােজার শেষে এলাে খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শােন আসমানী তাগিদ।

লেখক: সাংবাদিক

You might also like