কুলাউড়ায় ইমাম মাহমুদ কাফেলা’র প্রধানসহ সন্দেহভাজন ১৭ ‘জঙ্গি’ আটক

চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী

সিলেট থেকেঃ জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে,মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের সেই জঙ্গি আস্তানা থেকে পলায়ন করা ১৭ জনই জঙ্গি। তাদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল তানজিমও রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আব্দুল আহাদ মেন্দি নামের একজন পঙ্গু ব্যক্তি রয়েছেন। তিনি জঙ্গিদের কাছে ‘কমান্ডার’ নামে পরিচিত বলে জানা গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটককৃতদের কর্মধা ইউপি কার্যালয়ে আটক রাখা হয়েছে।কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা জানান, এর আগে শনিবার সকালে কর্মধা ইউনিয়নের বাইশালী টিলায় থাকা জঙ্গি আস্তানা থেকে নারী-পুরুষসহ ১০ জঙ্গিকে আটক করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, সোয়াট ও পুলিশ। এ সময় অভিযানের খবর পেয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে থাকা অনেকেই পাহাড়ের ভেতরে আত্মগোপনে চলে যায়।

অভিযানের পর থেকে স্থানীয় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছিল। সবার ধারণা ছিল পাহাড়ের ভেতরে সেই আস্তানা থেকে জঙ্গিদের কমান্ডার হিসেবে পরিচিত আব্দুল আহাদ মেন্দিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই সটকে পড়েছে। পরে স্থানীয় এলাকাবাসী কেউ কেউ জানান,কয়েকজন লোক একজন পঙ্গু লোককে কাঁধে বহন করে গোপনে চলাফেরা করতে দেখেছেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৪ আগস্ট সোমবার সকাল ১০টার দিকে কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ চা-বাগানের বাঁশফিল্ড খেলার মাঠ থেকে জঙ্গিরা ৫টি সিএনজি অটোরিকশায় করে পলায়ন করার চেষ্টা করছিল। এ সময় অটোরিকশা চালকরা কৌশলে তাদেরকে নিয়ে সরাসরি ইউপি কার্যালয়ে চলে আসে। পরে কুলাউড়া থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা তাদের আটক করে। খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান ঘটনাস্থলে ছুটে যান।অটোরিকশা চালক রবিউল্লাহ বলেন, ‘আটক অপরিচিত লোক তাদের একজনকে কাঁধে বহন করে নিয়ে গাড়িতে আসে। আমার গাড়িতে ৩ জন উঠে। তারা আমাদের জানায় বনভোজনে এসেছে। ওরা আমাকে বলেছিল মৌলভীবাজার যাবে। আমরা তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করে কথাবার্তা সন্দেহজনক হলে কৌশলে পরিষদে নিয়ে আসি।

আরেক অটোরিকশা চালক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার গাড়িতে ৬ জন অপরিচিত লোক উঠেন। এরমধ্যে ১ জন চিকিৎসক রয়েছেন। আমিও তাদের নিয়ে আসি পরিষদে।’
অপর এক চালক জানান, ‘আমার গাড়িতে ল্যাংড়া (পঙ্গু) একজন ব্যক্তি উঠেছিল তাদের সহযোগীদের নিয়ে। আমি তাদেরকে রবিরবাজার থেকে পরিষদের ভেতর নিয়ে আসি।’
কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ ১৭ জন জঙ্গি আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আটককৃতরা পরিষদের হলরুমে আছে। তাদেরকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। প্রায় দেড়মাস আগে ওই জঙ্গিরা কর্মধা ইউনিয়নের বাইশালী টিলায় এক প্রবাসীর ৫০ শতক জায়গা ক্রয় করে বসতি স্থাপন করে। অভিযানের পর থেকে কুলাউড়া থানা পুলিশ ও আমাদের নজরদারি ছিল। রোববার রাতে তারা পাহাড় থেকে নেমে অন্যত্র পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল।সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করার কাজ চলছে। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।’গ্রেফতার ৯ জঙ্গি রিমান্ডে ২ জন কারাগারে
এদিকে একই স্থান থেকে গত শনিবার গ্রেফতার ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ ৯ সদস্যের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই মামলায় আরও ২ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।রিমান্ডে নেয়া আসামিরা হলেন মো. হাফিজুল্লাহ, রাফিউল, শরীফুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম, সানজিদা খাতুন, মাইশা ইসলাম, আমেনা, হাবিবা বিনতে শরীফুল ও ফরহাদ হোসেন ওরফে শিপন। এদের মধ্যে আসামি ফরহাদকে ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের মৌলভীবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধ আইনে মামলা করা হয়।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন শাপলা ও মেঘলা আক্তার। এরমধ্যে আসামি শাপলার দুগ্ধপোষ্য দেড় বছর বয়সী মেয়ে ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলে এবং আসামি মেঘলার দুগ্ধপোষ্য এক বছর বয়সী মেয়েসহ হাজতে পাঠানো হয়।১৩ আগস্ট রোববার আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৯ আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির উপ-পরিদর্শক শাহজাদা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।অপরদিকে ২ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তিনি। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশাররফ হোসেনের আদালত ৯ আসামির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং অপর ২ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

You might also like