কুশিয়ারার ভাঙনে প্রতি বছর নিঃস্ব হচ্ছে হাজার-হাজার পরিবার
সিলেট অফিস
সত্যবাণী
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছরেও নির্মাণ হয়নি মৌলভীবাজারের শেরপুর এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ৭ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ। বছরের পর বছর এ নদীভাঙনে বন্যাকবলিত হয় সদর ও রাজনগর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন এলাকার প্রাচীনতম শেরপুর বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা জানান, জেলার কুশিয়ারা পাড়ের খলিলপুর, মনুমুখ ইউনিয়ন ও শেরপুর শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন এলাকায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিবছর এ মানুষগুলোর কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও বাঁধ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই।
চলতি বছর বর্ষার শুরুতে এ নিয়ে ৩ বার কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে ও পাড় ভেঙে ৫টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। শুধু যে এবারের বর্ষায় এ অঞ্চলে বন্যা, তা কিন্তু নয়। প্রতিবছর এমন ভয়াবহ বন্যা কয়েক হাজার পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়। এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, মৌলভীবাজারের মনুমুখ থেকে নেমে আসা কুশিয়ারা নদী ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রাচীনতম শেরপুর বাজার হয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে গিয়ে মিশেছে। এ নদী মনুমুখ থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের শেরপুরবাজার দক্ষিণ দিক পর্যন্ত দু’পাড়ের প্রায় ১৪ কিলোমিটার বিশাল এলাকাজুড়ে নেই কোনো প্রতিরক্ষা বাঁধ।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই এ নদীর দুই তীর দিয়ে সিলেটের বালাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শেরপুরের মানুষের স্বাভাবিক পায়ে হাঁটার সমতল সড়ক ছিল। এতে দু’পাড়ের ১৪ কিলোমিটার নদীর বাঁধ পুরোটাই উন্মুক্ত। প্রতি বর্ষায় সামান্য বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদী উপচে রাস্তা ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে সদর উপজেলার খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া ও রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নসহ গ্রামের পর গ্রাম। এ পর্যন্ত কুশিয়ারার করাল গ্রাসে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার বিপুল সংখ্যক পরিবার। এছাড়াও নদী তীরবর্তী অসংখ্য বাড়িঘর ও হাটবাজার এখনও ভাঙনের মুখে। জেলার প্রাচীনতম শেরপুর খেয়াঘাট বাজারও এখন হুমকির সম্মুখীন।
সরেজমিনে মনুমুখ, শেরপুর বাজার, ব্রাহ্মণগ্রাম ও হামরকোনা গ্রাম ঘুরে স্থানীয় একাধিক লোকের সঙ্গে এ প্রতিনিধির কথা হয়।
ব্রাহ্মণগ্রামের জনৈক যুবক, ক’জন ব্যবসায়ী জানান, মাসের মধ্যে এ নিয়ে তারা ৩ বার কুশিয়ারার পানিতে প্লাবিত হয়েছেন। দেখা গেলো, অনেক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে বাড়িতে আসতে না আসতেই আবার পড়েছেন বন্যার কবলে। তারা জানান, কুশিয়ারা নদীতে প্রতিরক্ষা বাঁধ না থাকাতে তারা জন্মের পর থেকেই এ অবস্থার শিকার। তাদের দাবি, মনুমুখ থেকে শেরপুর খেয়াঘাট পর্যন্ত নদীর বাঁধ নির্মাণ করা হোক। এ বাঁধ নির্মাণ হলে তারা আর বন্যায় আক্রান্ত হবেন না।
ওই এলাকার জনৈক বয়োবৃদ্ধ জানান, দেশ স্বাধীনের পর থেকেই তারা কুশিয়ারা নদীর বাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছেন। কিন্তু বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্ছে না। এতে বন্যায় বছরের পর বছর তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, কুশিয়ারা নদী মৌলভীবাজার অংশে রয়েছে ৩৪ কিলোমিটার। এ নদী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার অংশে কোন প্রতিরক্ষা বাঁধ নেই। এছাড়াও অপর পাড়ের সিলেটের বালাগঞ্জ অংশেও একই অবস্থা। এতে নদীতে পানি বাড়লেই দু’তীরে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা।
তিনি আরও জানান, নদীপাড়ের রাস্তার মালিকানা এলজিইডির আওতাভুক্ত। কাজেই পানি উন্নয়ন বোর্ড চাইলেই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
তবে, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বিএম আব্দুল মুমিন বলেন, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন রক্ষায় ৯৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ প্রকল্পে বাঁধ উঁচুকরণ ও নদী খননসহ একাধিক কর্ম-পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে কুশিয়ারার বন্যা থেকে এ অঞ্চলের মানুষ স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে।