ক্যাপ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন-লন্ডনে গালা ডিনার অনুষ্ঠানে ড. মোমেন
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
লন্ডনঃ ক্যাপ ফাউন্ডেনের মাধ্যমে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন- বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.আব্দুল মোমেন।তিনি বলেন,ফাউন্ডেশনের শিক্ষা,স্বাস্থ্য এবং টেকসই প্রকল্পই সংগঠনকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।তিনি গত ৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডস্থ লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে কমিউনিটি এগেইস্ট পোভার্টি ফাউন্ডেশন বা ক্যাপ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক গালা ডিনার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, চ্যানেল এস-এর চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী, ক্যানারি ওয়ার্ফ গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হাওয়ার্ড ডোবার ও জিএলএ মেম্বার উমেশ দেশাই।
ক্যাপ ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুস হামিদ-এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সংগঠনের ভলান্টিয়ার হাফিজ মিজানুল ইসলাম।এরপর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ এবং সিইও নূর হুমায়ুন প্রজেক্টারের মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীলভাবে সংগঠনের কার্যক্রম তুলে ধরেন। হলভর্তি অতিথিরা ক্যাপ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের বিবরণ দেখে অভিভুত হোন এবং করতালিতে মুখরিত করেন।অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবিদেরকে তাঁদের অসাধারণ কাজের জন্য পুরস্কার দেয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোমেন বলেন, ‘ক্যাপ ফাউন্ডেনের কারণে আজ বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ ভালো আছেন। ফাউন্ডেশনের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং টেকসই প্রকল্পের কারণেই এগুলো সম্ভব হয়েছে। আমাদের সবার উচিত এই দাতব্য সংস্থার পাশে দাঁড়ানো, যেন তারা আরও কাজ করতে পারে।বাংলাদেশের প্রতি ক্যাপ ফাউন্ডেশনের আগ্রহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ড. মোমেন সিলেট সদর উপজেলায় স্থানীয়দের জন্য কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠায় সংস্থাটিকে ৪৪ ডেসিমেল জমি দান করার ঘোষণা দেন। যেন স্থানীয়রা মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার, নারীদের সেলাই শিক্ষা এবং ইলেকট্রিশিয়ান ও প্লাম্বারের কাজ শিখতে পারে। ড. মোমেন জানান, তিনি ক্যাপ ফাউন্ডেশনের অংশ হতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত। তিনি বাংলাদেশে সংস্থার কাজে সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।বাংলাদেশ হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, ক্যাপ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে অসাধারণ কাজ করছে। তিনি এই দাতব্য সংস্থাকে যথাসম্ভব সবভাবে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পাশাপাশি সিলেটের অরফান ভিলেজ প্রজেক্টেও সহায়তা করার কথা জানান।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস বলেন, ক্যাপ ফাউন্ডেশন অসহায় মানুষকে সহায়তা করার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের কাজের কারণে বাংলাদেশে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসছে, তাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে, নতুন উদ্যোগে উৎসাহিত হচ্ছেন তারা এবং বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় রসদ অসহায়দের কাছে সরবরাহ করছে ক্যাপ ফাউন্ডেশন।চ্যানেল এস-এর চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, ব্রিটেনের ঘরে ঘরে একটি পরিচিত নাম ক্যাপ ফাউন্ডেশন। গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের অসহায় মানুষকে তারা সাহায্য করে চলেছে। আমাদের সবার উচিত তাদের তৃণমূল পর্যায়ের কাজে সহায়তা করা। তিনি বলেন, এ ফাউন্ডেশনের অংশ হতে পারলে তিনি গর্ববোধ করবেন। তিনি আরও এগিয়ে যাওয়ার পথে এই ফাউন্ডেশনকে সহায়তা করতে চান।ক্যানারি ওয়ার্ফ গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হাওয়ার্ড ডোবার বলেন, ক্যাপ ফাউন্ডেশনের কাজ দেখার জন্য ২০১৭ সাল তিনি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। কিছু প্রকল্পের বিষয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে সিলেটের মেন্টাল হেলথ প্রজেক্ট। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট বিভাগে এই প্রকল্পটি পরিচালিত হয় এবং তারা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালা এবং সচেতনতার কর্মসূচি পালন করে থাকেন। তিনি বাংলাদেশে ক্যাপ ফাউন্ডেশনরে কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
গ্রেটার লন্ডন অথোরিটির (জিএলএ) সদস্য উমেশ দেশাই বলেন, বাংলাদেশে ক্যাপ ফাউন্ডেশন এতগুলো প্রকল্প চালায় দেখে তিনি বিস্মিত।তিনি বাংলাদেশ সফর করতে চান এবং এই দাতব্য সংস্থার প্রকল্পে সহায়তা করতে আগ্রহী।ক্যাপ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ এবং সিইও নূর হুমায়ুন তাঁদের যৌথ উপস্থাপনায় বলেন, আমরা বাংলাদেশজুড়ে কাজ করি। সিলেট বিভাগ ছাড়াও, চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগেও আমাদের প্রকল্প রয়েছে। তারা বলেন, পরিষ্কার পানি পেতে সহায়তার জন্য তারা বহু নলকূপ স্থাপন করেছেন। এতে উপকৃত হয়েছেন প্রায় ৯০ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। সিলেটে ১৫টি কমিউনিটি মসজিদ, ৫টি স্কুল, ৪০০ স্যানিটারি ল্যাট্রিন, নারীদের সহস্রাধিক সেলাই মেশিন, পুরুষদের ৬০০ রিকশা, দরিদ্র কৃষকদের জন্য ‘ফিশ ফর লাইফ’ প্রজেক্টের আওতায় ২৫০টি নৌকা ও ৫৫টি ভিলেজ কর্ণার শপ দিয়েছেন। এছাড়া গত ১০ বছর ধরে রমজানে ৪৫ হাজার খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
অরফান ভিলেজের (এতিমদের জন্য গ্রাম) কথাও এ সময় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন তাঁরা। তারা বলেন, ওই গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল, একটি সেকেন্ডারি স্কুল, কর্মমুখি শিক্ষার জন্য একটি কারিগরি কলেজ, ইন্ডোর শপিং কমপ্লেক্স, খেলাধুলার জন্য একটি যুব ক্লাব, একটি মসজিদ, একটি মানসিক সেবা কেন্দ্র এবং ১০০ এতিমের জন্য তিনটি ডরমিটরি নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও সংগঠনের কাজ ফিলিস্তিন, লেবানন, ইথিওপিয়া ও ইয়েমেনেও সম্প্রসারিত হয়েছে।তাঁরা আরো জানান, পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন গত ছয় বছর ধরেই ক্যাপ ফাউন্ডশনের প্যাট্রন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশে নানা অঞ্চলে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যালোচনা এবং সুবিধাভোগীদের সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে বহুবার কথা বলেছেন তিনি। বিশেষ করে ২০১৮ সালে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি ফাউন্ডেশন আয়োজিত অ্যান্টেন্যাটাল (মাতৃ) ক্লিনিক, মেন্টাল হেলথ ক্যাম্প, এডুকেশন সেন্টার পরিদর্শণ করেন। এর মধ্যে বহু প্রজেক্টের সূচণা হয়েছে ডা. মোমেনের হাত ধরে। আবার অনেক প্রকল্পের নামকরণ তিনি করেছেন। যেমন ‘ফিশ ফর লাইফ’ বোট প্রজেক্ট, সিলেটে মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং সেন্টার,দ্যা গার্ডিয়ানস- অর্ফান ভিলেজ, কমিউনিটি ফ্রেশ ওয়াটার প্রগ্রাম ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, ক্যাপ ফাউন্ডেশন ২০১১ সালে গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা নূর হুমায়ুন ২০১২ সালে সংগঠনটি ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশনে নিবন্ধন করেন। দারিদ্র দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণ নিশ্চিত করাই ফাউন্ডেশনের প্রধান উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে তাঁরা ব্যক্তি ও পরিবারের মৌলিক জীবনযাপনের মান সমানভাবে নিশ্চিত করতে চান। এগুলো বাস্তবায়ন হলে উদ্ভাবনী ও টেকসই সমাধান পাওয়া যাবে। এই প্রকল্পের মূল নীতি তিনটি-বৈশ্বিক গবেষণা, কার্যকর অংশগ্রহণ ও উদ্ভাবন।