ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার খামারির মাথায় হাত বন্যায় সিলেটে মৎস্য খাতে বিপুল ক্ষতি
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ এবারের বন্যায় সিলেটে মৎস্য খাতের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ খাতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ-এই দুই জেলা মিলিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সুনামগঞ্জে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সুত্র জানিয়েছে। জেলা দু’টির অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। দুই জেলায় খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার। বিপুল এ ক্ষতি পোষাতে খামারিরা এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে ওসমানীনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জ ছাড়া বাকি সবকটি উপজেলায় মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার মৎস্য খামারীরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, বন্যায় মৎস্য খামারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। এ ক্ষতির পরিমান দিন দিন বাড়ছে।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী জেলার ১৮ হাজার ৭৪৯টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৫৩৫টি, বিশ্বনাথে ২১৫৩টি, গোলাপগঞ্জে ৮৪৫টি, জৈন্তাপুরে ২১০০টি, বালাগঞ্জে ৭০টি, গোয়াইনঘাটে ২৫৯২টি, জকিগঞ্জে ৬৩৫০টি, কানাইঘাটে ২৩৫০টি, কোম্পানীগঞ্জে ১৪৫টি, বিয়ানীবাজারে ১৪০২টি, দক্ষিণ সুরমায় ২১০টি পুকুর, দীঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব খামারের আয়তন ২২৯৬ হেক্টর। সব মিলিয়ে ১৫ হাজার ১৬৩ জন খামার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মাছ ভেসে গেছে ২৩০৫ মেট্রিক টন এবং পোনা ভেসে গেছে ২ লাখ ১৩ হাজার। ভেসে যাওয়া মাছের মূল্য প্রায় ১৬ কোটি ৯২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা এবং পোনার মূল্য ৩ কোটি ২৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
উপজেলাভিত্তিক সিলেটের জৈন্তাপুরে সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। জকিগঞ্জে ৬ কোটি ২২ লাখ, বিয়ানীবাজারে ২ কোটি ১৬ লাখ ৮১ হাজার, গোলাপগঞ্জে ১ কোটি ১৮ লাখ ১৩ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, সিলেট সদরে ২০ লাখ ৭০ হাজার, বিশ্বনাথে ১ কোটি ৫৫ লাখ, বালাগঞ্জে ১৩ লাখ ৫০ হাজার, গোয়াইনঘাটে ১ কোটি ৪০ লাখ, কানাইঘাটে ৬৪ লাখ, কোম্পানীগঞ্জে ৫৪ লাখ এবং দক্ষিণ সুরমায় ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের মাছ ভেসে গেছে। এ জেলায় অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকার।জৈন্তাপুরের তানজিদ এন্টারপ্রাইজের পরিচালক, ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফারুক আহমদ জানান, তামাবিল রোড সংলগ্ন পাখিদীঘিতে ৭০ বিঘা এবং ভূমি হাওরে আরো ৭০ বিঘার দু’টি খামার ছিল। এ দু’টি খামারে তারা সব মিলিয়ে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এবারের বন্যায় তাদের খামারের সব মাছই ভেসে গেছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে তারা তিলে তিলে খামারটি গড়ে তুলেছিলেন। এখন নতুন করে খামারটি চালু করতে হলে আরো কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। এ অর্থ যোগাড় করা কঠিন হবে বলে তিনি জানান।
একই উপজেলার সাহর এগ্রিফার্মের পরিচালক সাদিক মোহাম্মদ জানান, বন্যায় তাদের ফার্মের ৩০-৩৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে তাদের ৩০-৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাদের কোন পুকুরেই এখন চাষকৃত মাছ অবশিষ্ট নেই বলে জানান তিনি। এ অবস্থায় খামারিরা চোখে অন্ধকার দেখছেন।সিলেট জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল থেকেও বন্যায় এ অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ মাছ ভেসে গেছে বলে জানানো হয়।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), সিলেট-এর নির্বাহী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, বন্যার পানিতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাইক ভেঙ্গে দেয়া হয় বলে অভিযোগ এ কর্মকর্তার।সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল জানান, ‘বন্যায় সেখানে মাছ চাষীদের ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ১২ লাখ টাকার। এ জেলার সুনামগঞ্জ সদরে ৬৫টি, ছাতকের ৭৫০টি এবং দোয়ারাবাজারে ৪৩৫টি পুকুর-খামার ক্ষতিগ্রস্তের শিকার। চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১১০০ জন। ভেসে গেছে ১৫০ মেট্রিক টন মাছ ও ৫০ হাজার পোনা।