গণতন্ত্রের নামে দেশে অত্যাচারী স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে : জিএম কাদের

নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী

ঢাকাঃ গণতন্ত্রের নামে দেশে অত্যাচারী স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বলেন, এ থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে।দেশ ও জাতির জন্য আমরা নতুন বাংলাদেশ উপহার দেব। স্বৈরাচারদের কথা হচ্ছে এক সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে দেশে স্থিতিশীলতা আসে। এক সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে মূলত অস্থিতিশীলতার বীজ বড় হতে থাকে। সরকার বা নেতা পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু তাতে সমাজে ও অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব না পড়ে সেটাই হচ্ছে স্থিতিশীলতা।শনিবার জাপার বনানী কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন আইনজীবী জাতীয় পার্টিতে যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জিএম কাদের এসব বলেন।জিএম কাদের বলেন, আমেরিকা, ভারত ও জাপানসহ অনেক দেশে রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান পরিবর্তন হয় কিন্তু তার কোনো প্রভাব পড়ে না সমাজ ও অর্থনীতিতে। কিন্তু একজনকে জোর করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রাখলে মানুষের মনে একটি আগুন জ্বলতে শুরু করে, তা একসময় বিস্ফোরণ হয়। আমাদের দেশে স্বাভাবিকভাবে কোনো পরিবর্তন হলেও দেশ কোথায় যাবে তা নিয়ে মানুষ চিন্তিত। আমরা চাই সরকার ব্যবস্থা এমন হবে তাতে সরকার পরিবর্তন হলেও স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে না। স্থিতিশীলতা এলেই বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আসবে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র থাকলে, দেশের মানুষ দেশ পরিচালনার জন্য কেয়ারটেকারের মতো প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তারা জনগণের কথামত দেশ চালাবে এবং জনগণ তাদের সমালোচনা করতে পারবে। সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের ইচ্ছের বাইরে চললে নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকতে হবে জনগণের মধ্যে। দেশে নির্বাচনের নামে সিলেকশন চলছে। দেশের মানুষ ইলেকশনের নামে সিলেকশন চায় না। সংবিধান অনুযায়ী আইনকানুন ঠিক আছে কিন্তু ইলেকশনের নামে সিলেকশন হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতায় কেউ চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জার্মানভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র থেকে বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসিত দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান পদ্ধতিকে এগিয়ে নেওয়াকে গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়া বলা যায় না।জিএম কাদের বলেন, উন্নয়নের নামে মানুষের ওপর অত্যাচার ও দেশে লুটপাট চলছে। অবকাঠামো উন্নয়ন মানুষের উন্নয়ন নয়। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন। মানুষের ভোটাধিকারসহ সকল অধিকার নিশ্চিত হয় গণতন্ত্রে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। বৈষম্যের মাধ্যমে সরকার একটি শ্রেণি সৃষ্টি করেছে। অর্থ-সম্পদ দিয়ে তাদের ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তারা আইনের ঊর্ধ্বে। আর শতকরা ৯০ ভাগ মানুষকে যেন নর্দমায় ফেলা হয়েছে। তাদের অধিকার নেই, আয় নেই, তাদের দিন চলে না। বলা হচ্ছে, মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার। দেশের কয়টি মানুষের আয় বছরে তিন হাজার ডলার? তিন হাজার কোটি টাকা আয়ের মানুষ সৃষ্টি হয়েছে, তারা বাংলাদেশের রক্ত চুষে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। মেগা প্রকল্পের নামে তারা দেশে লুটপাট চালিয়েছে। এদের কারণেই সাধারণ মানুষ খেয়েপরে থাকতে পারছে না।

তিনি বলেন, তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে, তাদের বিভিন্ন অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। ৮ হাজার টাকা দিয়ে কিভাবে একটি পরিবার চলে? বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারলে শ্রমিকদের রেশন দেওয়া হোক, দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেওয়া হোক। যেন দাশপ্রথা চলছে, ওরা মরে গেলে যাক, ওদের দিয়ে আমাদের ব্যবসা করতে হবে। সিপিডির দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৪ জনের একটি পরিবারের শুধু মাসের খাবার খরচ ২২ হাজার ৪২১ টাকা। তাহলে তাদের বিদ্যুৎ বিল, বাসা ভাড়া, চিকিৎসা ও পোশাকের খরচ আসবে কোথা থেকে? শ্রমিকরা রাস্তায় নামলেই নাশকতাকারী? তাদের দেখভালের দায়িত্ব কার? সরকার কোথায় টাকা পায়? এই মানুষগুলোর টাকায় তো সরকার দেশ চালাচ্ছে।জিএম কাদের বলেন, একটি দেশের বিচার বিভাগ সভ্যতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক। বিচার বিভাগ দিয়েই একটি দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসন পরিমাপ করা যায়। সংবিধানে আইনের সমতার কথা বলা আছে। রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র কখনোই আইনের শাসন দিতে পারে না। এতে একটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তি আইনের ঊর্ধ্বে থাকে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতেই গণতন্ত্রের আবির্ভাব হয়েছিল। গণতন্ত্রে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারবে না। নিউইয়র্ক টাইমস কয়েকদিন আগে নিবন্ধ লিখেছে, বাংলাদেশে বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের দেশে হয়রানি করা হচ্ছে তা বিভিন্ন দেশে আলোচিত হচ্ছে।

সংবিধানের ব্যাখ্যা দিয়ে জিএম কাদের বলেন, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, হাইকোর্টের অধীনে থাকবে অধীনস্থ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, তাদের প্রমোশন থেকে সব কিছু দেখবে দেশের রাষ্ট্রপতি। আবার ৪৮ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দুটি কাজ ছাড়া সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে হবে। তাই নিম্ন আদালত শতভাগ সরকার বা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ, তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। ৯৫ ধারা অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে। তাই নিম্ন আদালত সম্পূর্ণ ও উচ্চ আদালতের প্রায় ৯৯ ভাগই সরকারপ্রধানের অধীনে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে আমাদের সংবিধান। এমন বাস্তবতায় আইন সবার জন্য সমান হতে পারে না।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। কয়েক দিনের উপনির্বাচনেও এখন সরকারকে সিল মারতে হয়। বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলেই দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, জাতীয় পার্টি কাউকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নির্বাচনে যাবে না। কারো ক্ষমতার সিঁড়ি হতেও নির্বাচনে যাবে না জাতীয় পার্টি। প্রমাণ হয়েছে সরকারি দলের কর্মীরা ১ মিনিটে ৪৫টি ভোট দিতে পারে। তাই বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে যাওয়া হচ্ছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাঁতার কাটা।

জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভরায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী খান, অ্যাডভোকেট লাকী বেগম, আনিসুল ইসলাম মণ্ডল, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জহিরুল হক জহির, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, মো. খলিলুর রহমান খলিল। ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, জাহাঙ্গীর আহমেদ, মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু প্রমুখ।

You might also like