গরমের সাথে রুটিন ভেঙ্গে লোডশেডিং, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
চঞ্চল মাহমুদ ফুলর
সত্যবাণী
সিলেট থেকেঃ বন্যার কারণে এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়েছে। নতুন সময় অনুযায়ী নভেম্বর মাসের গোঁড়ার দিকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবার কথা রয়েছে। তার পূর্বে সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সেই হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে সময় কম, কিন্তু চাপ বেশী। কারণ বন্যার ফলে পড়াশোনা হয়নি শহর থেকে গ্রাম, সিলেটের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বাসায় বসে পড়ার সুযোগটাও কেড়ে নিয়েছে ঘরের ভেতরের পানি। তবে পরীক্ষার সময় বেঁধে দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা মনোযোগ বাড়িয়েছেন পড়ার টেবিলে। কিন্তু এখন বিপত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে গরম আর লোডশেডিং। যাকে বলে চরম লোডশেডিং। গরমের মধ্যে যখন তখন লোডশেডিং হচ্ছে।
ফলে পড়ার টেবিলে ঠিকমতো বসতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এতে করে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে অভিভাবক মহলেও। এ অবস্থার মধ্যেও পড়ার সুযোগ তৈরী করার কথা বলছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অন্যদিকে শিক্ষাবিদরা বলছেন, চলমান অবস্থায় বিপাকে পড়বে শিক্ষার্থীরা।বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শিডিউল অনুযায়ী সারা দেশের মতো সিলেটেও চলছে লোডশেডিং। তবে সেই লোডশেডিং হচ্ছে সরকারের বেধে দেয়া রুটিনের বাইরে। চরম গরমের সাথে সেই লোডশেডিং জনজীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বিপাকে পড়েছে এস.এস.সি, এইচ.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা।
মাছুদিঘীরপার এলাকার নোমান আহমদ, জাফর খানসহ কয়েকজন বলেন, ইদানিং প্রতিদিন সকাল থেকে প্রচন্ড গরম শুরু হয়। ছাতা নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়াটাও মুশকিল হয়ে পড়ে। তারমধ্যে প্রতিদিন সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হয়। সকাল, দুপুর, বিকেল এবং সন্ধ্যার পর যতবার লোডশেডিং হয়েছে ততবারই এক ঘন্টার অধিক সময় বিদ্যুৎবিহীন ছিলাম। সন্ধ্যার পর রাত তো রয়েই গেলো। এই অবস্থায় শিশুরা পড়ার টেবিলে বসবে কিভাবে। তিনি বলেন, সরকারের লোডশেডিংয়ের শিডিউল মাথায় রেখে গৃহশিক্ষকের আসার সময় পরিবর্তন করেছি। তবুও লাভ হচ্ছে না। কারণ বেধে দেয়া সময় অনুযায়ী লোডশেডিং হচ্ছে না। যখনি পড়ার টেবিলে বসে তখন বিদ্যুৎ চলে যায়।’
পশ্চিম পীরমহল্লা এলাকার বাসিন্দা নীলা চৌধুরী এবার এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিশুটির মা শিল্পী চৌধুরী বলেন, ‘টানা কয়েকদিন গরম চলছে। তবে ইদানিংয়ের মতো গরম বিগত কয়েকমাসেও অনুভব করিনি। তার মধ্যে ইচ্ছেমতো চলেছে লোডশেডিং। মেয়েটি পড়ার জন্য যখনি প্রস্ততি নেয়, তখন বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রচন্ড গরমেও দিনে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। এ অবস্থায় শিশুরা কিভাবে পড়বে, কিভাবে পরীক্ষা দেবে।গত শনিবার সকাল থেকে প্রচন্ড গরম শুরু হয়। একান্ত প্রয়োজন-ছাড়া অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। ফলে নগরীতে মানুষজনও অন্যদিনের তুলনায় কম দেখা গেছে। ব্লুবার্ড স্কুলে শিশুকে নিতে আসা হুমায়ুন নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘মনে হচ্ছে রোদের মধ্যে কেউ আগুন ঢেলে দিয়েছে। ছাতা মাথায় দিয়েও শরীর ভিজে একাকার। স্কুল থেকে ঘরে ফিরেও শান্তি নেই। লোডশেডিং হচ্ছে অবিরাম। এমন লোডশেডিং অতীতে কখনো হয়নি।
স্কুলে আসা আরেক অভিভাবক আশরাফ বলেন, গরমের কারণে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন কোথায় যাবো। ঘরে-বাইরে সমান দুর্গতি। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে আসে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে। দিনের বেলা গরমে ভিজে আর রাতে লোডশেডিংয়ে নির্ঘুম-এভাবে দিন যাচ্ছে।মদন মোহন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দিপান্বিতা ঘোষ ঋতু বলেন, গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে। তার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকেনা দিনের বেশীরভাগ সময়। এ অবস্থায় পরীক্ষা কি হবে, জানিনা। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম জানান, ‘কুমারগাঁও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গত শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ থাকায় সিলেটের অনেক স্থানে লোডশেডিং বেশী হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর আবার চালু হয়ে যায়।বিদ্যুতের অস্বাভাবিক লোডশেডিং অন্যদিকে এস.এস.সি, এইচ.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষা। এসব নিয়ে কথা হলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্য্যান ড. রমা বিজয় জানান, ‘ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে, এতে সবার সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবার কথা না।একই বিষয়ে কথা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক প্রতাপ চন্দ্র চৌধুরী জানান, ‘প্রচন্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং কিছুটা সমস্যা হবেই। তার মধ্যেও শিক্ষার্থীদের সময় বের করে নিতে হবে।শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার মজুমদারপাড়ার বাসিন্দা, মদনমোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিশিষ্ট লোকসাহিত্য গবেষক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ জানান, ‘শনিবার প্রচন্ড গরমের মধ্যে সকাল এগারোটায় বিদ্যুৎ যায়, তারপর সারাদিন আর আসেনি। বিকেলে একবার এসে কিছু সময়ের মধ্যে আবার চলে যায়। সন্ধ্যার পর এভাবে বারবার আসা-যাওয়া করে। তিনি বলেন, এ অবস্থায় শিশুরা কিভাবে পড়বে, কিভাবে প্রস্তুতি নেবে।