বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎ
ইমরান আহমেদ চৌধুরী
ফ্রি ট্রেড এর মাধ্যমে এক দেশ আরেক দেশে তার কাজগুলো ঐ দেশের কর্মীবাহিনীকে দিয়ে কম শ্রম মূল্য দিয়ে উৎপাদন করানোর নামই মনে হয় গ্লোবালাইজেসন।এটার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তার জনশক্তিকে দিতে পেরেছে কর্মসংস্থান এবং দেশ গুলো পেয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।যদিও গ্লোবালাইজেসন দিয়েছে এক নতুন সীমান্তবিহীন পৃথিবী এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন।অপর দিকে এটা এনেছে অনেক ধরনের সমস্যা ও যেমন আমেরিকা তার টেক্সটাইল উৎপাদন এবং মেক্সিকোর ভুট্টার ফসলের খামার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে অন্যান্য দেশের বা আন্তর্জাতিক মূল্য প্রতিযোগিতার ফলে।সত্যি কার অর্থে,গ্লোবালাইজেসন এর উদ্দেশ্য তা আধুনিক ও উপযুক্ত একটি প্রণালী তথাপিও আসলে এটা একটা কাল্পনিক, অবাস্তব, অসম্ভব ও ভাববাদী একটা মতাদর্শ।বাস্তবের সাথে অমিল একটা আদর্শবাদ-নির্ভর চিন্তা প্রসূত মতবাদ।এইসব কিছুরই প্রমাণ মিলছে আজকের বিশ্বব্যাপী কোভিড ১৯ এর প্রকোপের আলামতে আসলেই কি ‘’গ্লোবালাইজেসন” বা বিশ্বায়ন নামক ইউটোপিয়া বেঁচে থাকবে কি এর পর ?
আসুন আমরা একটু চিন্তা করি নীচের অনুমান গুলো নিয়ে –
* এই ভাইরাস পেন্ডেমিক এর উতস ও অনেক দেশ মনে করছে – বিশ্বায়ন এর প্রক্রিয়ার কারণেই হয়েছে
* ভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য ডাক্তার – নার্স – হাসপাতালের সংবাহক , পরিস্কারকারী কর্মীদের পরিদেহ পি পি ই ঐ বিশ্বায়নের বেড়াজালে পরে কোন উন্নত দেশই ঐ পি পি ই তার স্বাস্থ্য কর্মীদের সময়মত সরবরাহ করতে অসক্ষম হয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার স্বাস্থ্য কর্মী আত্মত্যাগ করেছে ।
* ফ্রি ট্রেড এ ট্যারিফ যুদ্ধ প্রশমনে কি এই জীবতত্ত্বিক অস্ত্র ব্যবহার করে উন্নত বিশ্ব কে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়ে থাকতে পারে বলে, অনেক অনুসন্ধিৎসু মন প্রশ্ন করছে ।
* বিলিয়ন – ট্রিলিয়ন ডলার – পাউন্ড – ইউরো ব্যয় করে বানানো অস্ত্র, মিসাইল, স্তেলথ বিমান, পরমাণু বোমা এবং যুদ্ধ বিমান ও সৈন্য ক্যারিয়ার জাহাজ সবই কুপোকাত এই অদৃশ্য আণুবীক্ষণিক সংক্রামণকারী জীবাণুর কাছে ।
* পৃথিবীর সকল পুঁজিবাদী দেশ আজ সমাজতান্ত্রিল্ক দেশের মত তাদের নিজ নিজ দেশের অর্থনীতিকে রাষ্ট্রীয়করন করে কি পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার কবর রচনা করল কি ?
* সোশালিস্টদের আজীবনের লালিত ইচ্ছা, রাষ্ট্রের সকল নাগরিক কে সরকারী ভাতা দেবার মাধ্যমে কি পুঁজিপতিদের সকল পুঁজি রাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করার পায়তারা করছে কি ?
* এই মহামারি কি উন্নত – পুঁজিবাদী – প্রযুক্তি তে সফল দেশ গুলোতে প্রান্তিক জাতীয়তাবাদী সরকার আসার খাল কেটে কুমির আনতে সহায়তা করবে কি?
* যদি এক এক করে পশিম, উত্তর ইউরোপের এবং অন্যান্য ধনি দেশ গুলোতে যুবক বয়সী প্রান্তিক জাতীয়তাবাদী নেতাদের হাতে এই সব দেশের শাসন ব্যবস্থা অর্পিত হয়, তাহলে এই নতুন নেতারা কি কভিড ১৯ এর আলোকে শিক্ষা গ্রহণ করত, হয়ত অন্য দেশের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেই নিজের দেশের জনগণ এবং অর্থনীতির চাকা কে নিজেরাই সচল রাখতে উদ্যোগী হবে , তাহলে তারা ধীরে ধীরে নিজের দেশেই ভর্তুকির মাধ্যমে নিজেদের উৎপাদন নিজের দেশের কল কারখানায় সুরু করে দিবে কি ?
এই গুলো সবই এক ধরনের অনুমান ! হয়ত বা । কিন্তু, যেমন জানুয়ারী ২০২০ সালে পৃথিবী জানতো না এমন ধরনের এক মহামারী আসছে ধেয়ে মানব জাতিকে চিড়িয়াখানায় বন্দী করে ফেলবে আর পৃথিবী সহসা হয়ে যাবে বন্য প্রাণীদের অভয় কংক্রিট অরণ্য ?
আসুন, আবার একটু ভাবি – কিভাবে চোখের পলকে পৃথিবীটা বদলে যাবার এক অশনিসংকেতের সম্মুখীন ।
লেখক: কলামিষ্ট