ঘোড়াঘাটের সাবেক ইউএনও এবং তার পিতাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় ১ জনের ১৩ বছর কারাদন্ড
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
দিনাজপুর: জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা উপর আলী শেখকে হত্যা চেষ্টা মামলায় একজনকে দোষী সাবাস্তে দুটি পৃথক ধারায় ১৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৮ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডে রায় প্রদান করা হয়েছে।দিনাজপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান জানান, আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সাদিয়া সুলতানা তার আদালতে এই চাঞ্চলকর মামলার একমাত্র আসামী ঘোড়াঘাট উপজেলার বরখাস্তকৃত মালি রবিউল ইসলাম (৩৫) এর উপস্থিততে বিচারক এই রায় প্রদান করেন। রায় ঘোষণার পর জামিনে থাকা আসামী রবিউল ইসলামকে পুলিশ হাত কড়া লাগিয়ে আদালতে হাজতখানায় রাখে।
কারাদ-প্রাপ্ত রবিউল ইসলাম দিনাজপুর বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের ধামাহার ভীমপুর গ্রামের খতিব উদ্দিনের পুত্র। সে জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের মালি হিসেবে কর্মরত ছিল। তার চাকরিকালীন সময়ে গত ২০১৯ সালের জুন মাসে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করার অপরাধে তাকে সাময়িক বখাস্ত করা হয়েছিল। পরে তাকে গত ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালিন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম তার চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করেন। দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পিপি এডভোকেট রবিউল ইসলাম রবি বলেন, সব সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত আসামী রবিউল ইসলামকে দোষী সাবাস্ত করে দ. বি. আইনের ৩০৭ ধারায় ১০ বছর সশ্রম কারাদ-, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদ- ও ৩২৫ ধারায় ৩ বছর সশ্রম কারাদ- এবং ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেছেন।আদালত সূত্র জানায়, দিনাজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথম থেকে মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শেষের দিকে মামলাটি দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ আদালতে হস্তান্তর করা হয়। সেখানেই গত ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মামলায় ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। মামলায় একমাত্র আসামি ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের বরখাস্তকৃত মালি রবিউল ইসলাম উচ্চতর আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। তবে তার উপস্থিতিতে আদালতে বিচার সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
আদালতের সুত্রটি জানায়, গত ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত ২টায় ঘোড়াঘাট উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের উপর হামলা চালিয়ে একজন দুস্কৃতিকারী ওই দু‘জনকেই হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে পালিয়ে যান।পুলিশের সুত্রটি জানায়, ঘটনার পর আহত দু‘জনকে দ্রুত ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখা দিলে ওই দিন সকাল ৮টায় তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাদের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই দিনে দুপুর ১টায় হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর আহত ওয়াহিদা খানমের বড়ভাই পুলিশ পরির্দশক শেখ ফরিদ উদ্দীন বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ পর্যায়ক্রমে সন্দেহজনক বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে মোবাইলের কথোপকথন এবং ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে আসামী রবিউল ইসলামকে আটক করে জিজ্ঞাবাদে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ সক্ষম হয়। সুত্রটি জানায়, এই ঘটনায় তৎকালিন পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন নিজে মামলাটি তদারকি করে ঘটনার ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার এবং গ্রেফতারকৃত আসামী রবিউল ইসলাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানে নিজের অপরাধ স্বীকার করে। দিনাজপুর ডিবি পুলিশের তৎকালিন পরিদর্শক আবু ইমাম জাফর গত ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর আসামী রবিউল ইসলামকে এই ঘটনার শনাক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার বিচারে বাদী পক্ষে বিচারক ৫১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। উভয় পক্ষে যুক্তিতর্ক শ্রবণ করে আজ মঙ্গলবার প্রকাশ্য আদালতে এই চাঞ্চলকর মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলাটি বাদী পক্ষে এপিপি রনজিৎ কুমার সরকার এবং আসামী পক্ষে এ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ পরিচালনা করেন।