চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু
নিউজ ডেস্ক
সত্যবাণী
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল আটটা থেকে শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন উপকরণ কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো পুরো নির্বাচন হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে।সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ভোটারদের আশ্বস্ত করতে চাই, ভোটকেন্দ্রে এসে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি, ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে পুরো নির্বাচনী এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।’হাসানুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনে ৭ হাজার ৭৭২ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে। সেই সঙ্গে ২৫ প্লাটুন বিজিবি, আছে র্যাবের ৪১টি টিম। এছাড়া পুলিশের রিজার্ভ টিম ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে নির্বাচনী এলাকায়।’তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৪১৬টি কেন্দ্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৬ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন।’
চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২২৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মধ্যে ৩৯ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ১৬৯ জন। বাকি দুই ওয়ার্ডে ওই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৫৭ জন।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ। এসব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৭৭৫ প্রিসাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮৮৬ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং অফিসার।
চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মোট সাত জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাতি প্রতীকে খোকন চৌধুরী, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী ও ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন।এবার চসিক নির্বাচনে ভোটার ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন।
আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী মো. ইলিয়াস জানিয়েছেন, রেজাউল করিম চৌধুরী সকাল নয়টায় বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করবেন। তারপর বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাবেন।অন্যদিকে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সকালে মা শায়েস্তা খানমের দোয়া নিয়ে নগরের চকবাজার বিএড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। ওই কেন্দ্রে কিছু সময় কাটানোর পর বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. মারুফ।এরই মধ্যে নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আস্থার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
রেজাউল করিম বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। জনগণের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। আমার বাসার সামনে শতশত নেতাকর্মীর ভিড় দেখতে পাচ্ছেন। এরা সবাই জননেত্রীর নৌকাকে ভালোবাসে। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাই আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা ও সমর্থন রয়েছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এত মানুষের ভালোবাসা বিফলে যেতে পারে না। নগরবাসীর ভোটে আমি জয়ী হয়ে তাদের সেবক হতে বদ্ধপরিকর।তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামেও হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। আর উন্নয়নের এই প্রবাহ ধরে রাখতে নগরবাসী অবশ্যই নৌকায় ভোট দেবে।’তবে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গত সাতদিনের পরিবেশ এবং গত দুদিন যেভাবে এজেন্ট ধরা শুরু হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ পরাজয়ের ভয়ে খুবই ভীত। তারা জনগণকে বিশ্বাসই করতে পারছে না। তারা হয়তো সন্ত্রাস এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে আবারও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত হতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট বলতে চাই জনগণ রাজপথে আছে। তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আমরা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ জনগণ যদি আজ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাহলে আমরা জয়ী হবো।চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) মো. আবদুল ওয়ারিশ বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগর ও জেলার হাটহাজারী উপজেলা মিলিয়ে ৭৩৫টি কেন্দ্র আছে। কেন্দ্রগুলোর অতীতের সহিংসতার ইতিহাস, প্রার্থীদের অবস্থান এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েনসহ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল টিমে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সব কেন্দ্রে কাজ করছে।’
তিনি জানান, এসব কেন্দ্রে অস্ত্রধারীসহ ছয়জন করে পুলিশ সদস্য ও ১২ জন করে আনসার সদস্য মোতায়েন আছেন। আর এই বাইরে সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারীসহ চার জন পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য আছেন। এছাড়া, কেন্দ্রের বাইরে টহল পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তৎপর আছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত আছে নগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের বোম ডিসপোজাল ইউনিট, কাউন্টার টেররিজম ও সোয়াট সদস্যরা।চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের সার্বিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ৬৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে সক্রিয় আছেন। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনায় বিজিবি সদস্যরা মাঠে কাজ করছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।