ছাতকের কংক্রিট স্লিপার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

সত্যবাণী
সিলেট অফিসঃ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় অবস্থিত রেলওয়ের অধীনে দেশের একমাত্র সরকারি কংক্রিট স্লিপার কারখানাটি একদিন চালু হয়ে আবারো বন্ধ হয়ে গেছে। কংক্রিট স্লিপার কারখানা চালুর নামে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাত করে কারখানাটি ঘষা-মজা করে গত ১৬ অক্টোবর চালু করা হয়। ওইদিন কয়েক ঘন্টায় কিছু নিম্নমানের স্লিপার উৎপাদন করে কারখানাটি আবারো বন্ধ হয়ে যায়।
ছাতক থেকে সংবাদদাতা জানান, প্রায় ৬ মাস যাবত কারখানাটি চালু করতে উদ্যোগ নিয়ে কারখানা সংস্কারসহ কাঁচামাল সংগ্রহের কয়েকটি টেন্ডার আহবান করে কর্তৃপক্ষ। ওইসব টেন্ডার কারখানার কর্মকর্তারাই বিভিন্ন নামে গ্রহণ করে স্লিপার কারখানার কিছু যন্ত্রাংশে রঙ-বার্ণিশ করে টেন্ডারের ৯০ ভাগ টাকা আত্মসাত করেছে। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছিলেন ১৫ অক্টোবর স্লিপার কারখানাটি চালু করা হবে। কিন্তু শত চেষ্টার পরও ওইদিন চালু করা সম্ভব হয়নি। পরদিন কিছু সময় কারখানাটিতে উৎপাদন হয়েছে। ১৭ অক্টোবর ২/৩ ঘন্টা চলার পর তা আবারো বন্ধ হয়ে যায়।
ছাতকে রেলওয়ের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি ঠিকাদারির নামে এই কারখানাসহ ছাতক রেলওয়েতে হরিলুট চালিয়ে যাচ্ছেন। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের একমাত্র সরকারি এই কংক্রিট স্লিপার কারখানাটি উৎপাদন থেকে বার-বার মুখ থুবড়ে পড়ছে। ১৯৮৮ সালের ২৭ অক্টোবর দৈনিক ২৬৪ পিছ স্লিপার উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে ছাতকে কংক্রিট স্লিপার কারখানাটি চালু হয়। ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা উৎপাদনে ছিলো কারখানাটি।
এরপর থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে এটির উৎপাদন বার-বার বন্ধ হয়ে পড়ে। ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০২০ সালসহ কয়েক বার কারখানাটি চালু করা হলেও এর স্থায়িত্ব বেশিদিন টিকেনি। কিছুদিন চালু থাকার পর তা আবারো বন্ধ হয়ে পড়ে। যান্ত্রিক ত্রুটি, কাঁচামাল সঙ্কট, বিভিন্ন রকমের লুটপাটসহ নানা অজুহাতে বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাতক কংক্রিট স্লিপার কারখানা।
মাঝে-মধ্যে কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিভিন্ন টেন্ডার আহ্বান করা হয়। আর এসব টেন্ডার নিয়েই ঘটে লংকাকান্ড। রেলওয়ের কর্মকর্তারা এসব টেণ্ডার নিজেদের লোকের নামে নিয়ে শুরু করেন লুটপাট। টেন্ডার কিনেও আনেন তারা এমন অভিযোগ রয়েছে ছাতক রেলওয়ে কর্মকর্তা- কর্মচারিদের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ছাতক রেলওয়ে ও কংক্রিট স্লিপার কারখানা কর্মকর্তাশূণ্য। দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা থাকেন ঢাকা ও সিলেটে।
ছাতক রেলওয়ের ফোরম্যান মাহবুবুর আলম যোগদান করার প্রথম থেকেই তিনি ছাতকে থাকেননি। কর্মস্থলে না থেকে দীর্ঘদিন দিন যাবত সরকারি বেতন-ভাতা ভোগ করছেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু এখানের কোন টেন্ডার হলে তিনি তা বাগিয়ে নেন। কংক্রিট স্লিপার কারখানা চালুর জন্য সম্প্রতি একটি টেন্ডার আহবান করা হয়েছে রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলীয় জোন থেকে। প্রায় ২৭ লাখ টাকার দু’টি টেন্ডারের কার্যাদেশ পায় পিরোজপুর এলাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই কাজটিও উপ-ঠিকাদার হিসেবে বাগিয়ে নিয়ে কোন কাজ না করেই উপরোক্ত ফোরম্যান মাহবুবুর আলম, (এলডিএ) মাহমুদ আলম  উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করেছেন। কারখানার পুরোনো মালামাল নতুন টেন্ডারের আমদানি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে দূর্নীতিবাজ ওই চক্র। যার ফলে কারখানাটি আজ অচল এবং বন্ধ।
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানিয়েছে, কারখানায় স্থাপিত মিকচার মেশিন কেনার জন্য ১৮ লাখ টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। কিন্তু মাহবুবুর আলম ১০/১৫ হাজার টাকা মুল্যের একটি নতুন প্যানেল বোর্ড বসিয়ে এবং পুরাতন মিকচার মেশিন রেলওয়ের আমির হোসেন, আবু বক্কর ও সেলু বড়ুয়াকে দিয়ে সংস্কার করে রঙ-বার্নিশ করে কারখানা চালুর চেষ্টা করে বার-বার ব্যর্থ হচ্ছেন।
৬টি ব্রাইবেটর মোটর ক্রয়েরও টেন্ডার হয়েছে ৯ লাখ টাকায়। এসবের বাজার মুল্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা করে। তবে টেন্ডারে প্রতিটির মুল্য ধরা হয়েছে দেড় লাখ টাকা করে। মাহবুবুর আলমসহ ছাতক রেলওয়ের একটি চক্র কংক্রিট স্লিপার কারখানার পুরনো ৬টি ব্রাইবেটর মোটর বার্নিশ-রিপিয়ারিং করে নতুন বলে চালিয়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে এক উর্ধতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সকল বিলও চক্রটি তুলে নিয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানিয়েছে।
ছাতক রেলওয়ের প্রধান অফিস সহকারী সুরঞ্জন দাসের সাথে এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, গত ১৫ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কয়েক ঘন্টা উৎপাদন হয়েছে। স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংস্কার কাজ চলছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেটের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (ছাতকের অতিরিক্ত দায়িত্বে) আজমাইন মাহতাব, ছাতক কংক্রিট স্লিপার কারখানা বন্ধ রয়েছে স্বীকার করে জানান, টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কারখানা আবার চালু করা হবে।
রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ ঢাকা (অতিরিক্ত দায়িত্ব ছাতক) সিরাজ জিন্নাত বলেন, সাময়িক সমস্যার কারণে কারখানাটি বন্ধ আছে। সংস্কার কাজ চলছে। ৬/৭ দিনের মধ্যে স্লিপার কারখানা চালু হবে।

You might also like